শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

খালি পেটে পানি পান করার উপকার

খালি পেটে পানি পান করার উপকার
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস পানি পান করলে শরীরের জন্য নাকি দারুণ উপকার হয়—এমন একটি ধারণা অনেক দিন ধরেই প্রচলিত। বলা হয়, এতে শরীর ডিটক্স হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, এমনকি ওজনও কমে! কিন্তু এই কথাগুলোর পেছনে আসলেই কি কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে? বিশেষজ্ঞদের মতে, পানি শরীরের জন্য অবশ্যই অপরিহার্য। তবে শুধুমাত্র সকালে পানি খাওয়ার মধ্যে বিশেষ কোনো জাদুকরী উপকার আছে—এমন কোনো নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

পানির গুরুত্ব: পানি মানবদেহের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য একটি পুষ্টি উপাদান। এটি এমন একটি উপাদান যা শরীর নিজ থেকে তৈরি করতে পারে না, ফলে আমাদের প্রতিদিন এই চাহিদা পূরণ করতে হয় খাবার ও পানীয়ের মাধ্যমে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহের প্রায় ৬০ শতাংশই পানি দিয়ে গঠিত, যা শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

পানি শরীরের কোষগুলোতে পুষ্টি এবং অক্সিজেন পরিবহণে সহায়তা করে। এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, বিশেষত ঘাম ও শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া, পানি অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন হৃৎপিণ্ড, কিডনি, ফুসফুস ইত্যাদিকে সুরক্ষিত রাখে এবং হাড়ের সন্ধিগুলো মসৃণ ও সচল রাখতে সাহায্য করে, ফলে শরীরের চলাচলে স্বাচ্ছন্দ্য বজায় থাকে। 

সকালের পানি পানে প্রচলিত ধারণা এবং সত্যতা: হেলথলাইনের প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা সকালে পানি পানের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।  তারা সকালে পানি পানির বিষয়ে প্রচলিত ধারণা এবং বাস্তবতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। 

১. সকালে পানি পান করলে শরীর রিহাইড্রেট হয়: ঘুম থেকে ওঠার পর প্রস্রাবের রং গাঢ় হলে অনেকে ধরে নেন শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে গেছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতে দীর্ঘসময় পানি না খাওয়ায় এমন হওয়া স্বাভাবিক। এটি পানি ঘাটতির নিশ্চিত প্রমাণ নয়। আমাদের শরীর যখন পানির প্রয়োজন অনুভব করে, তখন তৃষ্ণা তৈরি হয়—এটি যে সময়েই হোক না কেন।

২. পানি খেলে কম খাওয়া হয়: গবেষণায় দেখা গেছে, খাবারের আগে পানি পান করলে পেট ভরা মনে হয়, ফলে কম খাওয়া হয়। তবে এটি মূলত বয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর। তরুণ ও মধ্যবয়সীদের ক্ষেত্রে এই প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম।

৩. ওজন কমাতে সহায়ক: ঠান্ডা পানি পান করলে শরীর সেটি গরম করতে শক্তি ব্যয় করে, তবে পরিমাণ খুব সামান্য—প্রতিদিন মাত্র ৪৮ ক্যালোরি। বছরের শেষে এর মাধ্যমে প্রায় ২.৫ কেজি ওজন কমতে পারে। তবে পানি কখন পান করছেন, তা নয় বরং দৈনিক ক্যালোরি গ্রহণ ও ব্যয়ই মূল নিয়ামক।

৪. মানসিক শক্তি বাড়ানো: পানিশূন্যতা মনোযোগ, স্মৃতি ও দৈহিক পারফরম্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পানি পানে এগুলো পুনরুদ্ধার সম্ভব হলেও সকালেই তা করতে হবে—এমন কোনো প্রমাণ নেই।

৫. ত্বক ভালো রাখা: অনেকে মনে করেন, পানি পানে শরীর পরিষ্কার হয় ও ত্বক উজ্জ্বল হয়। যদিও পানি কিডনিকে সাহায্য করে বর্জ্য নির্গমনে, তবে শুধু বেশি পানি খেলেই ত্বক ভালো হবে—এটি নিশ্চিত নয়।

৬. গরম পানি বনাম ঠান্ডা পানি: গরম পানি পান করলে অনেক সময় পরিমাণে কম হয়, যা ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়। বরং ঠান্ডা পানি দ্রুত হাইড্রেশন নিশ্চিত করে।

৭. ঠান্ডা পানি ও মেটাবলিজম: ঠান্ডা পানি সামান্য মেটাবলিজম বাড়ালেও এতে ক্যালোরি খরচ খুবই কম, তাই এটি দীর্ঘমেয়াদে ওজন হ্রাসে তেমন কার্যকর নয়।

সারাদিনের যেকোনো সময়েই শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পানি পান করাই সবচেয়ে ভালো অভ্যাস। শুধু সকালে খালি পেটে পানি পান করলেই অতিরিক্ত উপকার মিলবে—এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো নেই। পানি শরীরের জন্য অপরিহার্য, এটা সত্যি। তবে কখন পানি খাচ্ছেন তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কতটা খাচ্ছেন এবং শরীরের তৃষ্ণা অনুযায়ী পান করছেন কি না। তাই স্বাস্থ্য সচেতন হতে হলে সময় নয়, পানি পানের পরিমাণ ও নিয়মিততা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।


দৈএনকে/জে .আ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন