শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj
ইসরায়েলি হুমকিতে তেহরান থমথমে

অস্ত্র কারখানার কাছে বসবাসকারীদের সরতে নির্দেশ

 অস্ত্র কারখানার কাছে বসবাসকারীদের সরতে নির্দেশ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও অস্ত্র উৎপাদনকারী অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। রোববার (১৫ জুন) এমন সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তেহরানসহ অন্যান্য শহরে অবস্থিত অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর আশপাশে বসবাসকারী সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে ওই এলাকা ত্যাগ করতে বলা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের এই নির্দেশনা ভবিষ্যৎ একটি সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ইরানের পারমাণবিক ও ড্রোন প্রযুক্তি উন্নয়ন কেন্দ্রগুলো ইসরায়েলের নিশানায় রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা দ্রুত বাড়ছে। উভয় দেশ একে অপরের সামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামোয় পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নতুন নির্দেশনার মধ্য দিয়ে সংঘাত আরও জটিল ও বিস্তৃত আকার নিতে পারে।

রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েল ভবিষ্যতে বড় পরিসরে বিমান হামলা চালাতে পারে, যেখানে এই অস্ত্র কারখানাগুলো মূল টার্গেট হতে পারে। ইতোমধ্যে তেহরান উপকণ্ঠে কয়েকটি এলাকায় সামরিক সরঞ্জাম সরানো এবং ইরানি সেনাবাহিনীর গতিবিধিও বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সাধারণ নাগরিকদের এই হুঁশিয়ারির ফলে এলাকাগুলোতে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই ইতোমধ্যে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আশঙ্কা করছে, বড় আকারে হামলা হলে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা এই উত্তেজনা নিরসনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা যখন চূড়ান্তে, ঠিক তখনই আরও সরাসরি হুমকি উচ্চারণ করলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। এক বিবৃতিতে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, “আমরা তেহরানসহ ইরানের সমস্ত পারমাণবিক সক্ষমতা ও অস্ত্র ব্যবস্থায় হামলা চালাবো।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে ইসরায়েল পরিস্কার করেছে—এইবার তারা কূটনৈতিক ভাষায় নয়, সরাসরি সামরিক পথে প্রতিক্রিয়া জানাবে।

এর আগেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (আরবি ও ফার্সি ভাষায়) পোস্ট দিয়ে জানিয়েছিলেন, তেহরান ও তার আশপাশের অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রগুলোকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের দ্রুত সরে যেতে বলা হয়েছে, যাতে সম্ভাব্য হামলায় সাধারণ মানুষের প্রাণহানি এড়ানো যায়।

শুক্রবার মধ্যরাতে ইরানের ভূখণ্ডে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায় ইসরায়েল। তারা দাবি করে, এই অভিযান ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে পরিচালিত।

বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিযান ছিল ইসরায়েলের ইতিহাসে ইরানের ওপর চালানো অন্যতম বৃহৎ আঘাত। তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ও ইসফাহানের সামরিক স্থাপনায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।

ইসরায়েলের এই হামলার জবাবে ইরানও থেমে থাকেনি। শনিবার থেকেই শুরু হয়েছে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। ইরান বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ইসরায়েলের একটি সেনাঘাঁটি এবং একটি রাডার স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

বিশ্ব রাজনীতি বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই সংঘাত যদি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিস্তৃত হয়, তবে পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে এক নতুন যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তেহরান বা তেলআভিভ—দুই শহরেরই আকাশ এখন যুদ্ধের ছায়ায় আচ্ছন্ন।

জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা উভয়পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে, তবে বাস্তবতা বলছে—এই মুহূর্তে দুই দেশই যুদ্ধের কৌশলগত উচ্চমঞ্চে অবস্থান করছে।


 


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন