"যুদ্ধ এড়ানো সবসময় সম্ভব নয়: ট্রাম্পের মন্তব্যে আলোচনার ঝড়"


যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে যুদ্ধই হয়ে ওঠে সমস্যার সমাধানের একমাত্র উপায়। এই মন্তব্য তিনি করেছেন এমন এক সময়, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার মাধ্যমে সংঘাত চরমে পৌঁছেছে।
ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত এক পোস্টে বলেন, "যুদ্ধ কখনো কখনো সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায়।" তিনি আরও উল্লেখ করেন, "ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে, আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন।"
এদিকে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইরান দাবি করেছে যে, ইসরায়েলের হামলায় তাদের ৪০৬ জন নাগরিক নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ১৪ জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা রয়েছেন। ইসরায়েলি হামলায় ইরানের তেহরান শহরের তেল ডিপোতে আগুন ধরে গেছে। ইরান পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে তেল আবিব ও হাইফার মতো শহরে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, যাতে অন্তত ১৪ জন ইসরায়েলি নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে।
ট্রাম্পের এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জি-৭ নেতারা সংঘাতের তীব্রতা কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, ইরান যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে শান্তির সম্ভাবনার কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন যে দুই দেশ শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় পৌঁছাবে। তবে তার ভাষায়, “কখনো কখনো দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ বাধেই এবং যুদ্ধ করেই সমস্যার সমাধান করতে হয়।”
সোমবার (১৬ জুন) জি-৭ সম্মেলনে যোগ দিতে কানাডার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সবসময় ইসরায়েলের পাশে ছিল এবং থাকবে।” যদিও তিনি ইসরায়েলকে ইরানের ওপর সামরিক হামলা বন্ধ করতে বলেছেন কি না, সে বিষয়ে কিছু বলেননি।
রোববার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টেও ট্রাম্প একই রকম বার্তা দেন। সেখানে তিনি লেখেন, “ইরান ও ইসরায়েলকে একটা সমঝোতায় আসতেই হবে, এবং তারা তা করবেও।”
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিবিএস জানিয়েছে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করার একটি প্রস্তাবে ট্রাম্প সম্মতি দেননি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ওই প্রস্তাব ট্রাম্পের সামনে আনলেও, ট্রাম্প সেটিকে সমর্থনযোগ্য মনে করেননি।
সিবিএস জানায়, ইরানে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পর দুই নেতার মধ্যে টেলিফোনে কথা হয়, যেখানে খামেনিকে লক্ষ্য করে সম্ভাব্য অভিযান নিয়ে আলোচনা হয়। তবে এ বিষয়ে ট্রাম্প এখনও প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।
এমনকি নেতানিয়াহু বিষয়টি সরাসরি স্বীকার বা অস্বীকার করেননি। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “অনেক সময় যেসব কথোপকথনের কথা প্রচার হয়, তার অনেকটাই সত্য নয়। আমি এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না। তবে এটুকু বলি, আমরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য যা প্রয়োজন, তা করব। আমি বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রও তাদের জাতীয় স্বার্থ বোঝে।”
ইতোমধ্যে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের হাইফা শহরে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে, এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য দ্বিধান্বিত বার্তা দিচ্ছে—একদিকে তিনি যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা মেনে নিচ্ছেন, অন্যদিকে শান্তির আশাও করছেন। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দুই দেশের মধ্যে দ্রুত সংঘর্ষ নিরসনের আহ্বান জানাচ্ছে।
