বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

ডায়াবেটিস রোগী ডেঙ্গু হলে স্বাস্থ্য রক্ষার নির্দেশনা

ডায়াবেটিস রোগী ডেঙ্গু হলে স্বাস্থ্য রক্ষার নির্দেশনা
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

ডায়াবেটিস রোগীর ডেঙ্গু হলে পরিস্থিতি অন্য সাধারণ রোগীদের তুলনায় অনেক বেশি জটিল হয়ে পারে। কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাছাড়া ডেঙ্গুতে রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এতে ডেঙ্গুর চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়ে, ডেঙ্গুর জটিলতা বাড়ে, আবার ডেঙ্গুর পর রোগীর শরীর ঠিক হতেও অনেক সময় নেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীর ডেঙ্গু হলে তাকে বিশেষ সতর্কতাসহ দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনা জরুরি।

ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গু শনাক্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে ঘরোয়া চিকিৎসায় সময় না নষ্ট করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। যেহেতু
ডেঙ্গু রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে, তাই ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জটিলতা বাড়ে। 

তাই কিছু রক্ত পরীক্ষা যেমন CBC, প্লাটিলেট কাউন্ট, হেমাটোক্রিট, সিরাম ক্রিয়েটিনিন এবং ব্লাড সুগার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

প্রয়োজনে প্রতিদিন অন্তত ৩-৪ বার ব্লাড সুগার চেক করতে হবে এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ইনসুলিন বা ওষুধের ডোজ দিতে হবে। এক্ষেত্রে রোগীর দ্রুত সুস্থতার জন্য ওষুধের পরিবর্তে ইনসুলিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

রোগী বাসায় থাকলে মনে রাখতে হবে জ্বর নিয়ন্ত্রণে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না। অনেক ডায়াবেটিসের রোগী উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসপিরিন ইত্যাদি গ্রহণ করেন। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন বন্ধ রাখতে হবে। রোগীর প্লাটিলেট ৫০ হাজারের নিচে গেলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া রক্তক্ষরণ, বমি, পেটে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, চেতনা হারানো ইত্যাদি গুরুতর সংকেত দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যায়াম করতে হয়। কিন্তু ডেঙ্গু হলে ২৪ ঘণ্টা রোগীকে বিছানায় শুয়ে বিশ্রামে থাকতে হয়। এ অবস্থায় রক্তে শর্করা বেড়ে যায়। কিন্তু ডেঙ্গু হয়েছে বলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যাবে না। খালি পেটে ৬ মিলিমোলের নিচে, খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ৮ মিলিমোলের নিচে এবং এইচবিএওয়ানসি ৭-এর নিচে রাখাই হলো নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। যদিও জ্বরে খাবারের রুচি থাকে না তারপরও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পরপর অল্প অল্প করে খেতে হবে যেন ডায়াবেটিস খুব বেশি না বাড়ে বা একেবারে না কমে। চার্ট মেনে স্বাভাবিক খাবার চালিয়ে যেতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীর ডেঙ্গু হলে খাওয়া-দাওয়া খুব সাবধানতার সঙ্গে ঠিক করতে হয়, কারণ এই সময় শরীরে পানিশূন্যতা, রক্তে শর্করা ওঠানামা, ও প্লাটিলেট কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। জ্বরের তীব্রতা অনুযায়ী অবশ্যই পানি ও তরল গ্রহণ বাড়াতে হবে। শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত রেখে তরল ও হালকা খাবার খাওয়া যেতে পারে।

১. তরল খাবার বেশি করে খেতে হবে। যেমন লবণ-চিনি মিশ্রিত ওআরএস (ডায়াবেটিক ওআরএস), কচি ডাবের পানি (মিষ্টি ছাড়া), লেবু পানি (চিনি ছাড়া বা অল্প স্টিভিয়া ব্যবহার করে), স্যুপ– বিশেষ করে সবজি ও মুরগির হালকা স্যুপ, বার্লি পানি বা চিড়ার পানি ইত্যাদি।

২. সহজে হজম হয় এমন খাবার খেতে হবে। যেমন খিচুড়ি (ডাল ও চাল দিয়ে তৈরি), সেদ্ধ ডাল (অল্প লবণ ও মসলা), সেদ্ধ সবজি, টোস্ট করা ব্রাউন ব্রেড, ওটস (পানি বা অল্প দুধ দিয়ে রান্না), দুধ সাগু (পাতলা করে রান্না করা) ইত্যাদি।

৩. ফল অল্প পরিমাণে খাওয়া ভালো। যেমন পেঁপে, আপেল, নাশপাতি, চাপা কলা, পেয়ারা, কালো জামসহ অন্যান্য কম মিষ্টি ফল খাওয়া যায়। তবে একসাথে অনেক ফল নয় এবং রক্তে শর্করা দেখেই ফল খাওয়া ভালো।

৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রোটিন গ্রহণ জরুরি। তাই সেদ্ধ ডিম (১টা), সেদ্ধ বা গ্রিল করা মুরগির বুকের মাংস (চামড়া ছাড়া), ডাল ও ছোলা (সেদ্ধ করে) খাওয়া যাবে।

৫. চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার, কোমল পানীয়, প্যাকেটজাত ফলের জুস, অতিরিক্ত ফলের রস (প্রাকৃতিক হলেও গ্লুকোজ বেড়ে যেতে পারে), চিপস, ভাজাপোড়া, ফাস্ট ফুড, গরু বা খাসির মাংস (ডেঙ্গুর সময় জ্বর ও হজমে সমস্যা করে), লবণ বেশি দেওয়া খাবার (রক্তচাপ ও কিডনি বিবেচনায়), খুব বেশি তেল-মসলা যুক্ত খাবার ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে।

এছাড়াও প্রচুর বিশ্রাম নিতে হবে। প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস তরল পান করতে হবে। রক্তে শর্করা ও প্লাটিলেট নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে, জ্বর ও অন্য উপসর্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।


দৈএনকে/জে .আ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন