বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

‘ট্রাম্পকে ইরানের বার্তা: আমাদের চিনতে চাইলে ইতিহাস পড়ুন’

‘ট্রাম্পকে ইরানের বার্তা: আমাদের চিনতে চাইলে ইতিহাস পড়ুন’
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা যখন ক্রমশ চরমে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে কড়া বার্তা দিলো ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় যোগাযোগমাধ্যম ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরান (আইআরআই) এক্স (সাবেক টুইটার) ও ফেসবুকে এক পোস্টে ট্রাম্পকে ‍‘ইতিহাস মনে করিয়ে’ দেয়।

পোস্টটিতে লেখা হয়:
“মি. ট্রাম্প, যদি আপনি এখনও না জানেন আমরা কারা, তাহলে কারবালার ইতিহাস পড়ুন। সেখানেই আমাদের পরিচয় লেখা আছে।”

এই বার্তাটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক ও বিশ্লেষণী মহলে আলোচনার জন্ম দেয়। বিশেষ করে কারবালার প্রসঙ্গ টেনে আনা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

ঐতিহাসিক প্রসঙ্গের তাৎপর্য
কারবালা ইসলামী ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে ইরাকের কারবালায় নবী মুহাম্মদের দৌহিত্র ইমাম হুসাইন ও তার সঙ্গীরা উমাইয়া খলিফার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। এটি আজও শিয়া মুসলিমদের সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই বার্তা কেবল ট্রাম্পের উদ্দেশে নয়, বরং পুরো পশ্চিমা জোটের প্রতিও একটি প্রতীকী হুঁশিয়ারি।

ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
এই সময়েই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার পর সংঘাত আরও গভীর হয়েছে। ট্রাম্প, যিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ২০১৮ সালে ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি বাতিল করেছিলেন, তার মধ্যপ্রাচ্যনীতির প্রতি ইরান বরাবরই সমালোচনাপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান মূলত নিজের প্রতিরোধ শক্তির ঐতিহাসিক ভিত্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে ট্রাম্প ও তার সমর্থকদের কৌশলগত বার্তা দিতে চেয়েছে— তারা সহজে মাথানত করবে না।

মধ্যপ্রাচ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বক্তব্যের পাল্টাপাল্টি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। ইরানের সামরিক বাহিনী এবং ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরান-এর পক্ষ থেকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে দেওয়া এক বার্তা এখন তুমুল আলোচিত।

এই মন্তব্য ইরানের প্রতিরোধ ইতিহাসের প্রতীকী ইঙ্গিত বহন করে— যা শিয়া মুসলিমদের আত্মত্যাগ ও প্রতিরোধের প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিবেচিত।

ট্রাম্পের পাল্টা সতর্কবার্তা
একই দিনে ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'ট্রুথ সোশ্যালে' এক পোস্টে তেহরানবাসীদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দেন। তিনি লেখেন:
“সবারই অবিলম্বে তেহরান ছেড়ে যাওয়া উচিত!”

তবে কেন এই সতর্কতা— সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। ট্রাম্প আরও দাবি করেন,
“আমি যে চুক্তির কথা বলেছিলাম, ইরান সেটি মেনে নিলে আজকের প্রাণহানি এড়ানো যেত। এটা লজ্জাজনক এবং মানবজীবনের অপচয়। ইরান পারমাণবিক অস্ত্র পেতে পারে না— আমি বারবার বলেছি।”

ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই বক্তব্য এবং ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া একটি বড় কূটনৈতিক সংকেত। ট্রাম্পের সতর্কতা হয়তো আসন্ন হামলার পূর্বাভাস দিতে পারে, আবার ইরানের বার্তা শুধু ইতিহাসের স্মরণ নয়, বরং এক ধরনের প্রতিরোধ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।

ইরানের বার্তায় কারবালার প্রসঙ্গ আনা, বিশেষ করে বর্তমান ভূরাজনৈতিক উত্তাপের প্রেক্ষিতে, একটি শক্তিশালী প্রতীকী হুঁশিয়ারি হিসেবে ধরা হচ্ছে। এটি পশ্চিমা শক্তিগুলোকে ইঙ্গিত দেয় যে, ইরান আত্মসমর্পণ নয়— প্রতিরোধেই বিশ্বাসী।


 


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন