শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

মাঠে ১১ বনাম দাবদাহ: ক্লাব বিশ্বকাপে প্রধান প্রতিপক্ষ আবহাওয়া

মাঠে ১১ বনাম দাবদাহ: ক্লাব বিশ্বকাপে প্রধান প্রতিপক্ষ আবহাওয়া
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

যুক্তরাষ্ট্রে চলমান ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে ফুটবল মাঠের লড়াইয়ের চেয়ে বেশি আলোচনায় আবহাওয়া! প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্রতায় ক্লান্ত, অবসন্ন ও প্রায় নাকাল অবস্থা ফুটবলারদের। খেলার পারফরম্যান্সের চেয়ে বেশি চাপ এখন পরিবেশ মোকাবিলায়।

দুপুরের ম্যাচগুলোতে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাচ্ছে, সঙ্গে রয়েছে ৭০ শতাংশের বেশি আর্দ্রতা। ম্যাচ চলাকালেই বেশ কয়েকবার পানির বিরতিতে হাঁপিয়ে উঠছেন খেলোয়াড় ও কোচেরা।

এক খেলোয়াড় বলেন,
“মাঠে দাঁড়িয়ে থাকাটাই কঠিন, দৌড়ানো তো দূরের কথা। এমন গরমে খেলাটা প্রায় অসম্ভব।”

অন্য এক কোচ ক্ষোভ ঝাড়লেন,
“শারীরিক দক্ষতার চেয়ে মানসিক দৃঢ়তাই এখন সবচেয়ে দরকারি। কারণ গরমে শুধু খেলাই নয়, ঠিকভাবে চিন্তাও করা কঠিন হয়ে যায়।”

শারীরিক সক্ষমতায় বড় পরীক্ষা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিবেশে খেলোয়াড়দের শরীরে পানিশূন্যতা, ক্লান্তি ও হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে মারাত্মকভাবে। ফলে বারবার সাবস্টিটিউট, ঠান্ডা পানির স্প্রে ও আইস প্যাক ব্যবহার করতে হচ্ছে।

ফিফার পক্ষ থেকে ম্যাচের নির্দিষ্ট সময় অন্তর হাইড্রেশন ব্রেকের নির্দেশ দেওয়া হলেও প্রশ্ন উঠছে—এই তাপমাত্রায় আদৌ খেলাধুলা সম্ভব কি না।

পরিবেশ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে?
এই পরিস্থিতি আবারও ক্রীড়াঙ্গনে প্রশ্ন তুলেছে—গ্রীষ্মমণ্ডলীয় তাপপ্রবাহের মধ্যে বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন কি যৌক্তিক? আয়োজকদের দাবি, সব ধরনের সুরক্ষাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে মাঠে খেলোয়াড়দের শারীরিক ভাষা অন্য কিছু বলছে।

বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত যতটা উত্তেজনা খেলা ঘিরে, তার চেয়ে অনেক বেশি আলোচনা এখন আবহাওয়া নিয়ে।

যুক্তরাষ্ট্রে চলমান ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে ফুটবলারদের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে আবহাওয়া। প্রচণ্ড গরম ও উচ্চ আর্দ্রতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন খেলোয়াড়, কোচ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাপমাত্রার কারণে ম্যাচের গতি, মান এবং খেলোয়াড়দের শারীরিক সক্ষমতা—সবই পড়ছে চ্যালেঞ্জের মুখে।

ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডার তিজজানি রেইয়েন্ডার্স জানান, গরম নিয়ে শঙ্কা থাকলেও ম্যাচের জন্য তারা প্রস্তুত। আগামী বুধবার ফিলাডেলফিয়ায় মরক্কোর উইদাদ এসির বিপক্ষে ম্যাচ খেলবে সিটি। স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় শুরু হওয়া ওই ম্যাচে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রেইয়েন্ডার্স বলেন, “আমরা গরমের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছি। প্রতিটি ম্যাচকেই গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি।”

সিটি এর আগে ফ্লোরিডার বোকা রেটনে অনুশীলন করেছে, যেখানে তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।

“থেমেও কষ্ট, দৌড়েও কষ্ট”
প্যারিস সেন্ট জার্মেইনের (পিএসজি) বিপক্ষে ম্যাচে গরমের প্রকোপ আরও তীব্রভাবে টের পেয়েছে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ। গত রোববার পাসাডেনায় হওয়া সেই ম্যাচে তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ম্যাচ শেষে অ্যাথলেটিকোর মিডফিল্ডার মার্কোস লরেন্তে বলেন, “এটা একেবারেই অসম্ভব। আমার পায়ের আঙুল ব্যথা করছিল, নখে চাপ পড়ছিল। থেমেও কষ্ট, আবার দৌড়াতেও কষ্ট।”

পিএসজি কোচ লুইস এনরিকে বলেন, “তাপমাত্রার কারণে ম্যাচের গতি ও মান স্পষ্টভাবে প্রভাবিত হয়েছে। সময়টা দর্শকদের জন্য ভালো হলেও খেলোয়াড়দের জন্য নয়।”

রিয়াল মাদ্রিদ তাদের অনুশীলন ক্যাম্প স্থাপন করেছে ফ্লোরিডায়। কোচ জাবি আলোনসোকে দেখা গেছে স্প্রিংকলারের পানি ও বরফ দিয়ে নিজেকে ঠান্ডা রাখতে। দলটি বিশেষ কুলিং ব্যবস্থার মধ্যেই অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে।

২০১৪ সাল থেকে গরমের মধ্যে খেলা হলে প্রতি অর্ধে ‘কুলিং ব্রেক’ বাধ্যতামূলক করেছে ফিফা। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা মিলিয়ে ‘ওয়েট বাল্ব গ্লোব টেম্পারেচার’ (WBGT) ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ালেই প্রতি অর্ধে একবার পানি পানের সুযোগ দেওয়া হয়।

তবুও প্রশ্ন উঠছে—এই গরমে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যঝুঁকি কি সত্যিই কমানো যাচ্ছে? গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে কোপা আমেরিকার সময় দুই ফুটবলার হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এবার ক্লাব বিশ্বকাপেও সেই ভয় ফের স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, মাঠে খেলা যেন এখন আর ১১ বনাম ১১ নয়—এটা হয়ে উঠেছে ১১ বনাম দাবদাহ।


 


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন