লিভার নষ্টের গোপন কারণ হতে পারে এই ৩ খাবার


লিভার আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা ডিটক্সিফিকেশন, হজম এবং বিপাকের কাজ করে। তবে সাম্প্রতিক স্বাস্থ্য গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন খাওয়া কিছু নিরীহ মনে হওয়া খাবার ধীরে ধীরে লিভারের ওপর ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলছে যদিও আমরা তা টেরই পাচ্ছি না।
দুবাইভিত্তিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ পালক মিধা সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে এমন তিনটি খাবারের কথা বলেন, যেগুলো প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকলেও লিভার নষ্ট করছে নিঃশব্দে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই খাবারগুলো কী!
১. চিনি ও ফ্রুকটোজযুক্ত খাবার (সবচেয়ে ক্ষতিকর)
সুগার ড্রিংক, মিষ্টান্ন, ফ্লেভারড দই ও সিরিয়াল জাতীয় খাবার অনেকেই স্বাস্থ্যকর ভেবে খেয়ে থাকেন। কিন্তু এসব খাবারে থাকা হাই-ফ্রুকটোজ কর্ন সিরাপ (এইসএফসিএস) সরাসরি লিভারে বিপদ ডেকে আনে।
কারণ: ফ্রুকটোজ প্রায় পুরোপুরি লিভারে মেটাবোলাইজ হয়। অতিরিক্ত ফ্রুকটোজ লিভারে চর্বি জমিয়ে ‘নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD)’ তৈরি করে। ধীরে ধীরে তা ইন্সুলিন রেজিস্ট্যান্স ও প্রদাহ ঘটায়।
সমাধান: মিষ্টি পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অতিরিক্ত মিষ্টি বাদ দিন। ফল খান, কারণ এতে থাকা ফাইবার রক্তে চিনি শোষণ ধীরে করে।
২. রিফাইন্ড ভেজিটেবল অয়েল
সয়াবিন, কর্ন, সানফ্লাওয়ার ও স্যাফলাওয়ার অয়েল অনেক সময় “হার্ট হেলদি” নামে বিক্রি হয়। কিন্তু এগুলোতে থাকা বেশি মাত্রার ‘ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড’ শরীরে প্রদাহ বাড়ায়।
চাপের বিষয়: উচ্চ তাপে রান্না করলে এসব তেল থেকে ক্ষতিকর ‘অ্যালডিহাইড’ তৈরি হয়, যা লিভার কোষের জন্য বিষাক্ত।
সমাধান: সরিষার তেল, ঘি, বা কোল্ড-প্রেসড অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন। বাইরের ভাজাভুজি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
৩. ফলের জুস ১০০ ভাগ প্রাকৃতিক হলেও!
ফলের রসকে আমরা স্বাস্থ্যকর ভাবি। কিন্তু এটি ফাইবারবিহীন এবং অনেকটা সোডার মতোই উচ্চমাত্রায় চিনি সরবরাহ করে।
ধরুন: এক গ্লাস কমলার রসে থাকে প্রায় সমপরিমাণ চিনি, যতটা একটি সোডায় থাকে।
লিভারের ক্ষতি: হঠাৎ করে লিভারে প্রচুর ফ্রুকটোজ ঢুকে তা দ্রুত চর্বিতে রূপান্তরিত হয় এবং মেটাবলিক চাপ সৃষ্টি করে।
সমাধান: ফলের রসের বদলে আসল ফল খান। যদি জুস খেতেই হয়, পানিতে মিশিয়ে অল্প পরিমাণে খান।
শেষ কথা:
এই তিনটি খাবার ফ্রুকটোজযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত বীজতেল, ও ফলের রস আমরা দৈনন্দিন জীবনে “স্বাভাবিক” বা “স্বাস্থ্যকর” বলে ধরে নিই। কিন্তু এগুলো নীরবে লিভারে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে।
ভালো খবর হচ্ছে:
লিভার একটি রিজেনারেটিভ অঙ্গ সঠিক খাদ্যাভ্যাসে শুরুতেই ক্ষতি রোধ করা এবং আগের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তাই এখনই সচেতন হোন, খাবারে বাছাই করুন সঠিক চর্বি ও কম চিনি—লিভার আপনাকে ধন্যবাদ দেবে নিঃশব্দে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যভিত্তিক। কোনো শারীরিক উপসর্গ বা খাদ্য পরিবর্তনের বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
দৈএনকে/জে .আ
