ঘোড়ার দাপট না বিড়ালের ধূর্ততা—মধ্যপ্রাচ্যের ময়দানে কে এগিয়ে


মধ্যপ্রাচ্যে সরাসরি সংঘাতে জড়িত দেশ দুটির একটি অপরটির চেয়ে ৭৫ গুণ বড়। অন্যদিকে একটি বড় আকারের বিড়ালের চেয়ে একটি ঘোড়া প্রায় ৭৫ গুণ বড় হয়ে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের এক প্রান্তে এই ঘোড়া—ওজনের ভারে টলোমল, তবুও শক্তিমত্তার প্রতিযোগিতায় সবাইকে পেছনে ফেলে সামনে ছুটে চলার অদম্য ইচ্ছা তার কম নয়। অন্যদিকে, ছোট্ট এক বিড়াল—চটপটে, ক্ষুধার্ত এবং একেবারে কোণঠাসা হলে এমন থাবা মারে যে আশপাশের বাঘ-সিংহও চমকে উঠে।
ঘোড়ার খুর-ক্ষ্রিপ্ততা আর বিড়ালের নখর—দুটোই তীক্ষ্ণ। আর এই দুই প্রাণী রোদে-ধুলোয়, মরুভূমির বালিতে, শহরের আকাশে—যেখানে সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ছে একে অপরের ওপর। কখনো ক্ষেপণাস্ত্র, কখনো হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ফাতাহ, কখনো ট্যাঙ্ক, কখনো যুদ্ধবিমান।
পৃথিবীবাসী ফেল ফেল করে দেখে, হা করে শ্বাস বন্ধ করে রাখে—কে কবে কাকে ছোবল দেবে। কেউ বলে, ঘোড়ার শক্তি অনন্ত, ওকে দাবানো যাবে না। কেউ বলে, বিড়াল ছোট হলেও ব্যর্থ শিকারি নয়-একের পর এক দুঃসাহসিক ছোঁ মেরে আঘাত করে চলেছে। সে আচঁড় কাটে ঘোড়ার চোখ, মুখ, কান আর নাভিতে। অন্যদিকে ঘোড়ার আঘাত সহজে পাশ কাটিয়ে চলে সুচতুর বিড়াল।
গত শুক্রবার শুরু হওয়া এই সংঘাতের এ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে, ঘোড়া রীতিমতো ক্ষ্রিপ্ত গতিতে ছুটে যাচ্ছে—শব্দের চেয়ে ১৫ গুণ গতিতে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে, বিড়ালের মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র আর তেল শোধনাগারে আগুন ধরিয়ে দেয়।
তবে বিড়ালও কম যায় না-সোজা ঘোড়ার আস্তাবলে উড়ে গিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার ভবন গুঁড়িয়ে দেয়, ঘোড়ার লেজে আগুন লাগিয়ে দ্রুত সটকে পড়ে।
এদিকে এই অঞ্চলে ধর্মের লেবাসধারী সিংহ, হাতি আর শিয়ালরা—সবাই দূর থেকে পপকর্ন খেতে খেতে অসম লড়াই উপভোগ করছে; কেউ কেউ আবার এই দুই প্রাণীর কাছে অস্ত্র আর ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র বেচে পকেট গরম করছে।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়- কতদিন চলবে এই যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলার নামে মানুষ হত্যা?
ঘোড়া আর বিড়াল তো মরুভূমির তপ্ত বালিতে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত—কিন্তু একটার পেছনে কোটি কোটি মানুষ-নিরেট আবেগ, আর আরেকটার পেছনে পরমাণু বোমার ছাতা আর পরাশক্তির ছায়া।
মধ্যপ্রাচ্যের অবুঝ শিশুরা জানে না ঘোড়া কী, বিড়াল কী—তারা শুধু দেখছে প্রতিদিন কে নিহত হচ্ছে আর কারা দম্ভ করছে।
তাই কে জিতবে, কে হারবে, তা বড় কথা নয়—মূল কথা, এই মরুর দেশে কখন থামবে শিকার আর শিকারির খেলা?
অতএব, নতুন কোনো শিকারির জন্ম না হওয়া পর্যন্ত—ঘোড়ার খুর আর বিড়ালের থাবা মরুতে রক্ত ঝরাতে থাকবে। আর বিশ্ববাসী ফিসফিস করে বলবে—মধ্যপ্রাচ্যে ঘোড়ার সঙ্গে বিড়ালের লড়াই চলবে আর কতদিন...?
একবিংশ শতাব্দিতে এসে মানবসভ্যতার উৎকর্ষের এই যুগে যেসব ক্ষমতাসীন দল বা সরকারপ্রধান মনে করে মানুষ হত্যা এবং যুদ্ধই হচ্ছে শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম মাধ্যম, তাদেরকে বিড়াল বা ঘোড়ার মতো প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করতে দ্বিধা করেন না অনেকে। যারা যুদ্ধ আর হত্যাকেই শান্তির হাতিয়ার ভাবে তাদের কড়া সমালোচনা করেছেন শান্তিবাদী নেতারাও।
শান্তি আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র বলেন, ‘হিংসার প্রতিশোধে হিংসাই বেড়ে যায়, আর তার ফলে আঁধার আরও ঘন হয়ে যায়। একবিংশ শতাব্দীতেও অনেক রাষ্ট্রপ্রধান ঠিক এই ভুলটাই করছেন, শান্তির নামে হিংসা বাড়াচ্ছেন।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও বুদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কি বলেন, ‘আধুনিক রাষ্ট্রগুলো প্রায়ই যুদ্ধকে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ বলে বিক্রি করে, যা মূলত ক্ষমতার রাজনীতি।’
তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা বলেন, ‘শান্তি নিশ্চিত করতে হলে দ্বন্দ্ব মীমাংসা করতে হবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে।’
দৈএনকে/জে .আ
