বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

ট্রাম্পের সিচুয়েশন রুম বৈঠক নিয়ে উঠে আসছে নতুন তথ্য

ট্রাম্পের সিচুয়েশন রুম বৈঠক নিয়ে উঠে আসছে নতুন তথ্য
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছানোর প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে এক জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠকটি চলে প্রায় এক ঘণ্টা ২০ মিনিট।

বিশ্ব গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এই বৈঠকে মূল আলোচনা ছিল—ইসরায়েলের সঙ্গে সমন্বিতভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর সম্ভাব্য সামরিক হামলা চালানো হবে কি না। বিষয়টি ঘিরে মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নানা দিক থেকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন এক সময় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা বেড়ে চলেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত হওয়ার সম্ভাবনাও আগের চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান নিয়ে সরাসরি সামরিক পদক্ষেপের বিষয়টি বিবেচনা করছেন, তবে তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের মধ্যে এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে বলে জানিয়েছে সিবিএস নিউজ।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ট্রাম্প ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফেরার আহ্বান জানালেও, এখন পরিস্থিতি বদলেছে। ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথ সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র কতটা ভূমিকা নেবে—সে প্রশ্নে হোয়াইট হাউসে শুরু হয়েছে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা।

সিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত একটি গোপন বৈঠকে ইরানের যে স্থাপনাগুলোকে সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে ফোরদোর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। পার্বত্য অঞ্চলের নিচে অবস্থিত এই স্থাপনায় হামলার জন্য প্রয়োজন হবে বিশেষ ধ্বংসাত্মক বোমা, যা ভূগর্ভস্থ লক্ষ্যবস্তুর জন্য ব্যবহৃত হয়।

বৈঠকের পর ট্রাম্প ফোনে কথা বলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে। যদিও আলোচনা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি, তবে এটিকে পরিস্থিতির আরও উত্তপ্ত হওয়ার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক মহল।

সিবিএস আরও জানিয়েছে, গত তিন দিনে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে অন্তত ৩০টি সামরিক ট্যাংকার বিমান পাঠিয়েছে। এগুলো যুদ্ধবিমান ও বোমারু বিমানে জ্বালানি সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা বড় পরিসরের সামরিক অভিযানের ইঙ্গিত দিতে পারে।

এদিকে, ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে ইরানের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ দাবি করেছেন। তার এই বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। এক পোস্টে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন—‘জায়নিস্টদের সঙ্গে কোনো আপস নয়, ইরান কখনোই সমঝোতায় যাবে না।’

ইসরায়েল দাবি করেছে, গত পাঁচ দিনে তারা ইরানের একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ আরও জানান, তিনটি পারমাণবিক স্থাপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে এবং অন্তত ১০টি লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের পরিকল্পনা রয়েছে। খামেনির বিরুদ্ধেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে কাৎজ বলেন, প্রয়োজনে তার সাথেও সাদ্দাম হোসেনের মতো আচরণ করা হবে।

গাজা, লেবানন এবং সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ইরানপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর বারবার আঘাত হানায় ইরান পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছে। একইসাথে, পশ্চিমা বিশ্ব ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েও গভীর উদ্বেগে রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে সরে যাওয়ার পর, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ জোরদার করেছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর মতে, ইরান এখন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পর্যায়ে পৌঁছাতে খুব কাছাকাছি রয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেবে কি না—তা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ ও জল্পনা তীব্র আকার ধারণ করেছে।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন