গলে জয়ের সম্ভাবনা, কিন্তু সময়ের কাছে হার?


টেস্ট ক্রিকেট এমন এক খেলা, যেখানে রান যত গুরুত্বপূর্ণই হোক, সময়ের কাঁটাতেই ম্যাচের ভাগ্য লেখা হয়। গলে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিন শেষে সেই পুরনো আলোচনা আবার ফিরে এসেছে—বাংলাদেশ কি চাইলেই আরও আগে ইনিংস ঘোষণা করতে পারতো?
শেষ দিনে বৃষ্টির পর যখন খেলা শুরু হয়, বাংলাদেশের লিড দাঁড়ায় ২৪৭ রানে। হাতে ছিল অন্তত ৫০ ওভারের মতো সময়। এমন অবস্থায় ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যেটি সবচেয়ে মূল্যবান হয়ে ওঠে, তা আর রান নয়, বরং সময়। কারণ উইকেট নেওয়ার সুযোগ সময়ের ওপরই নির্ভরশীল। ফলে প্রশ্ন থেকেই যায়—বাংলাদেশ কি কিছুটা দেরি করল ইনিংস ঘোষণা করতে?
টেস্ট ক্রিকেটে একটাই মুদ্রা সবচেয়ে দামি—সময়। গলের প্রথম টেস্টে পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স আবার সেই চেনা প্রশ্নটাই সামনে এনে দিয়েছে: ম্যাচ জেতার জন্য যথেষ্ট সময় রাখছিল তো তারা?
শেষ দিনে বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু হতে দেরি হয়, তখন বাংলাদেশের লিড ২৪৭ রানে। হাতে ছিল প্রায় ৫০ ওভার। কিন্তু সেখান থেকে প্রথম সেশনে যেভাবে ব্যাটিং করল বাংলাদেশ, তাতে বোঝাই গেল সময় ব্যবস্থাপনায় একটা দোটানা ছিল। ১৭ ওভারে মাত্র ৬০ রান—রানরেট গড়ে ৩.১৫। এমন গতি কি আদৌ প্রয়োজন ছিল?
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে মূল্যবান পয়েন্ট মাথায় রেখে হয়তো তারা নিরাপদ লিড চেয়েছে। শান্তর সেঞ্চুরির দিকেও নজর ছিল নিশ্চয়ই। আবেগের জায়গা থেকে সেটা ব্যাখ্যা করা গেলেও, কৌশলগত বিচারে তখন সময়ই ছিল আসল চালিকা শক্তি। বৃষ্টিতে কমে আসা ওভারগুলো মানে ছিল—বোলারদের হাতে কম সময়। সেই বাস্তবতা কি যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পেরেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট?
সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় হারিয়েছে মূল্যবান ১২-১৩ ওভার, যা শেষ পর্যন্ত হতে পারত পার্থক্য গড়ে দেওয়া মুহূর্ত।
তৃতীয় ইনিংসে দেখা গেল উইকেট স্পিনারদের জন্য ছিল আদর্শ। তাইজুলের বল টার্ন করেছে, বাউন্স করেছে, প্রতিপক্ষের ধৈর্য ভেঙেছে। তিন উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি, নাঈম হাসানও ছিলেন ধারাবাহিক। শ্রীলঙ্কা বেশ কয়েকবার ধাক্কা খেয়েছে। প্রশ্ন উঠবেই—এই পিচে যদি আরও কিছুটা সময় পেতো বাংলাদেশ, তাহলে ফল কি ভিন্ন হতো না?
সম্ভাবনা ছিল, এবং ভালো সম্ভাবনাই ছিল। কারণ দুই ইনিংসেই বাংলাদেশ ছিল ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে। শুধু প্রয়োজন ছিল সাহসী সিদ্ধান্ত আর সঠিক সময়ে আক্রমণে যাওয়া।
ম্যাচ শেষে শান্ত বলেছেন, ‘বৃষ্টি আমাদের পরিকল্পনা পাল্টে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেছেন, তারা এমন অবস্থানে যেতে চেয়েছিলেন, যেখানে জয়ের সম্ভাবনা বেশি, হারের ঝুঁকি কম। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে আক্রমণাত্মক মানসিকতা দেখানোই তো আসল নেতৃত্ব। এবং টেস্ট জয় আসে সময়ের ব্যবস্থাপনা, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ আর সঠিক সিদ্ধান্তের মিশেলে।
ড্র নিশ্চিত করা অনেক সময় পরাজয়ের মতোই হতাশাজনক হয়ে উঠতে পারে—যদি সেটা হয় সুযোগ থাকার পরও।
তবুও, ইতিবাচক দিকগুলোও স্পষ্ট। শান্তর ব্যাটিং, স্পিনারদের তীক্ষ্ণতা, দলগত মানসিকতা—সব কিছু মিলে দেখা গেল, বাংলাদেশ এখন কেবল টেস্ট খেলতে আসা দল নয়, তারা জিততেও চায়। প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে চায়।
এই ম্যাচের সবচেয়ে বড় শিক্ষা সম্ভবত এটাই—সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারলে জয় চোখের সামনে থেকেও হাতছাড়া হয়ে যায়।
পরের ম্যাচে, সেই সময়কে ঠিকমতো কাজে লাগানোই হোক বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য।
