বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে নৌকা তৈরীর ধুম

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে নৌকা তৈরীর ধুম
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

নেই বর্ষার চিরচেনা রূপ, তবু চলনবিলে নৌকা তৈরির ধুম আষাঢ়ের বৃষ্টিতে নদীতে ঢল নামে। খাল-বিল, নদী-নালা পানিতে টইটম্বুর থাকে। এবার আষাঢ় যায় যায় কিন্তু চলনবিলের  সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় নেই সেই চিরচেনা রূপ। তবু গ্রাম-গঞ্জে চলছে নৌকা তৈরির ধুম। ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকা তৈরির কারিগররা।

তাড়াশ উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম  বর্ষা মৌসুমের পানিতে তলিয়ে থাকতো। তাই এখানে মানুষের চলাচলের প্রধান বাহনও ছিল নৌকা। বহু আগে থেকে এ অঞ্চলের লোকরা নৌকা তৈরির কাজ করে আসছেন। এ অঞ্চলে তৈরি নৌকার কদরও ছিল দেশজুড়ে। তাই আশপাশের জেলা ও উপজেলার লোকরা নৌকা কেনার জন্য চলে আসতেন এলাকার বিভিন্ন হাটে। এখনো অনেকে বাপ-দাদার পেশাকে টিকিয়ে রেখেছেন।

বর্ষা মৌসুমে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলে নৌকা তৈরির কাজ। বছরের আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস নৌকা তৈরির কাজ করলেও বাকি ১০ মাস করতে হয় শ্রমিকের কাজ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই গ্রামের খোলা মাঠে কারিগররা নৌকা তৈরির কাজ করছেন। বেশ কয়েকজন মিলে এ কাজ করছেন। কেউ কেউ কাঠ কেটে দিচ্ছেন, আবার কেউ জোড়া দিচ্ছেন, কেউবা আবার নৌকার তলা তৈরির কাজ করছেন।

কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নৌকা তৈরিতে খুব কম দামি কাঠ ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে পানিতে থাকলেও পচে না এমন কাঠ। আকার ভেদে নৌকার দাম হয়। তবে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশি দামে নৌকা বিক্রি করতে হচ্ছে।

জহুরুল ইসলাম নামে নৌকার এক কারিগর জানান, আমার বাবা হামিদ মিস্ত্রি, তিনিও নৌকা তৈরির কাজ করতেন। আমি ১৫ বছর যাবত এ কাজের সাথে জড়িত। একজন তিন দিনে একটি নৌকা করতে পারি। মৌসুমে ২০-২৫টি নৌকা তৈরি সম্ভব হয়। এসব নৌকা আকার ও কাঠ ভেদে ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করি।

তিনি আরও বলেন, নিচু এলাকা হওয়ায় এ অঞ্চলে নৌকার অনেক চাহিদা। তবে, এবার সময় মত পানি না হওয়ায় অন্য বছরের তুলনায় চাহিদা অনেক কম। যারা কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের ধান, পাট, সবজি বাজারে আনা নেওয়া করার জন্য নৌকা প্রয়োজন হয়। এছাড়া মাছ ধরার জন্য জেলেরাও নৌকা কিনেন। বর্ষা মৌসুমে নৌকা তৈরির কাজ করি। আর অন্য মৌসুমে শ্রমিকের কাজ করি।

নৌকা তৈরির আরেক কারিগর আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা মেরা গাছ, রেইনট্রি, আকাশ মনি বা ইউক্যালিপটাস ও জারুল গাছ ব্যবহার করি। এ জাতীয় কাঠ দীর্ঘদিন পানিতে থাকলেও পচে না। প্রতি বছরই কম-বেশি বৃষ্টি হয়। নদী-নালা ও খালে-বিলে পানি হয়। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় পানি হয়নি। তাই নৌকার চাহিদাও কম। যদি পানি বাড়ে তাহলে নৌকার চাহিদা বাড়বে। একটি নৌকা বিক্রি করতে পারলে কমপক্ষে ২ হাজার টাকা লাভ হয়। তবে, সম্প্রতি কাঠ ও পেরেকের দাম বাড়ায় লাভ কিছুটা কমে আসছে। আর লাভ-লোকসানের হিসাবের চাইতে বড় বিষয় হলো, বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখা।

নৌকা কিনতে আসা বেল্লাল হোসেন জানান, এখন নৌকার দাম বেশি। ৮ হাজার টাকার নিচে কোন নৌকা নাই। নৌকা ছাড়া আমাদের চলে না। কারণ, আমরা নিচু এলাকার মানুষ, একটি ফিশারি আছে, নৌকা ছাড়া ফিশারিতে যেতে পারি না। তাই, নৌকা কেনা আমার জন্য জরুরি। ৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি নৌকা কিনেছি।


দৈএনকে/জে .আ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ

আরও পড়ুন