জাদুকর মেসির ৩৮তম জন্মদিন আজ


ফুটবল ইতিহাসে কিছু নাম শুধু খেলার মাঠে সীমাবদ্ধ থাকে না, তারা ছাপ ফেলে কোটি হৃদয়ে। তেমনই এক নাম লিওনেল মেসি—শুধু একজন ফুটবলার নন, এক অনুভব, এক যুগের নাম।২৪ জুন, মঙ্গলবার—তার জীবনের আরেকটি বিশেষ দিন। সময়ের ক্যালেন্ডারে বয়স বাড়ল আরও এক বছর। মেসি আজ ৩৮-এ পা রাখলেন।
কিন্তু বয়স তার কাছে কেবলই একটি সংখ্যা। সময় যতই এগোয়, মেসির চরণ যেন আরও দৃঢ় হয় ফুটবলের মহাকাব্যে। আর্জেন্টাইন জাদুকরটি যেভাবে গোলের পর গোল, মুহূর্তের পর মুহূর্ত ছুঁয়ে গেছেন, তাতে মনে হয়—ঘড়ির কাঁটা তাকে ছুঁতে পারে না।
বার্সেলোনা থেকে পিএসজি, আর এখন ইন্টার মায়ামি—জার্সি বদলেছে, ঠিকানাও বদলেছে, কিন্তু বদলায়নি তার যাদুকরী ফুটবল। বদলায়নি মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর বিস্ময়।
মেসির ক্যারিয়ার শুধু ট্রফিতে পরিপূর্ণ নয়, এটি অনুপ্রেরণায় ভরপুর। এক ছোট্ট শহরের ক্ষুদে ছেলেটি কীভাবে নিজের স্বপ্নকে সত্যি করে বিশ্বমঞ্চ কাঁপিয়ে চলেছে, তা যেন সিনেমাকেও হার মানায়। চ্যাম্পিয়নস লিগ, লা লিগা, কোপা আমেরিকা, বিশ্বকাপ—যেটাই বলেন, সেখানে জ্বলজ্বল করে তার নাম।
৩৮ বছরে পা দিয়েও মেসি যেন এখনও শুরুতেই আছেন। ফুটবলের ভাষায় হয়তো তিনি ‘শেষ প্রান্তে’, কিন্তু হৃদয়ের ভাষায়—তিনি চিরসবুজ, চিরতরুণ।
জন্মদিনে তাকে ঘিরে ভক্তদের ভালোবাসা আকাশছোঁয়া। কারণ মেসিকে ভালোবাসা মানে কেবল একজন খেলোয়াড়কে ভালোবাসা নয়—এটা বিশ্বাস, স্বপ্ন, আর নিজের সীমাকে অতিক্রম করার প্রেরণাকে ভালোবাসা।
শুভ জন্মদিন, লিও। তুমি শুধু একটি নাম নও, তুমি একটি যুগের নিশান।
তিনি শুধুই একজন ফুটবলারের নাম নন। লিওনেল মেসি নামটি এক সময়ের, এক প্রজন্মের, এক স্বপ্নের প্রতিনিধিত্ব করে। ২৪ জুন, মঙ্গলবার এই আর্জেন্টাইন ফুটবল-ঈশ্বর পা রাখলেন জীবনের ৩৮তম বছরে। জন্মদিনে তাঁর ফুটবল-জীবনের বাইরের কিছু অজানা, চমকপ্রদ ও হৃদয়ছোঁয়া গল্প নিয়েই এই বিশেষ আয়োজন।
১. বিপ্লবী শহরের ফুটবল বিপ্লবী
লিওনেল মেসির জন্ম আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে—একই শহর, যেখানে জন্মেছিলেন আরেক বিশ্ববিখ্যাত চরিত্র, চে গুয়েভারা। দুজনের জন্মমাসও এক—জুন। একজন বিপ্লব ঘটিয়েছেন রাজনীতিতে, আরেকজন ফুটবলে।
২. ইতিহাসে নাম, সোশ্যাল মিডিয়াতেও রাজা
২০২২ কাতার বিশ্বকাপ জয়ের পর লুসাইল স্টেডিয়ামে সতীর্থদের সঙ্গে উদ্যাপনের ছবি দিয়ে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন মেসি। সেটিই হয়ে ওঠে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি লাইক পাওয়া সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট—৭ কোটিরও বেশি লাইক!
৩. বন্ধুত্ব যার ছায়া হয়ে থেকেছে সারাজীবন
সার্জিও আগুয়েরো—বন্ধু নয়, ভাই। ছোটবেলা থেকেই একসঙ্গে বেড়ে ওঠা, একসঙ্গে জাতীয় দলের হয়ে খেলা। এমনকি আগুয়েরোর ছেলে বেঞ্জামিনের গডফাদারও মেসি। কাতারে বিশ্বকাপ চলাকালীন দলের সঙ্গে না থেকেও মেসির ঘরেই ছিলেন আগুয়েরো—বন্ধুত্ব এমনই গভীর।
৪. মায়ের প্রিয় গায়ক থেকে নামের উৎস
অনেকেই জানেন না, ‘লিওনেল’ নামটি এসেছে মার্কিন গায়ক লায়োনেল রিচির নাম থেকে। মেসির মা ছিলেন রিচির ভক্ত। স্প্যানিশ উচ্চারণে ‘লায়োনেল’ হয়ে যায় ‘লিওনেল’—এভাবেই জন্ম নেয় ইতিহাসের এক অনন্য নাম।
৫. মাঠে যার পাশে সবচেয়ে বেশি ছিলেন বুসকেতস
বার্সেলোনা হোক বা ইন্টার মায়ামি—মেসির সবচেয়ে দীর্ঘদিনের সঙ্গী একজনই: সের্হিও বুসকেতস। এই দুই কিংবদন্তি একসঙ্গে খেলেছেন ৬২১ ম্যাচ!
৬. ইতালিয়ান শিকড়, আর্জেন্টিনার হৃদয়
মেসির পারিবারিক শিকড় ইতালির মারকে অঞ্চলে। ফলে পেয়েছেন সম্মানসূচক ইতালিয়ান নাগরিকত্বও। তবে এটি পূর্ণাঙ্গ নয়—তাই নাগরিক অধিকার নেই, কেবল উত্তরাধিকার সূত্রের শ্রদ্ধা।
৭. যার জার্সি আজও মেসির সংগ্রহে
মেসির ছেলেবেলার আদর্শ ছিলেন আর্জেন্টাইন প্লেমেকার পাবলো আইমার। ২০০৪ সালে এক ম্যাচ শেষে নিজের জার্সি উপহার দেন আইমার। সেই জার্সি আজও যত্নে রেখে দিয়েছেন মেসি। বিশ্বকাপজয়ী দলের সেই সময় আইমারই ছিলেন সহকারী কোচ—শুরু আর শেষ যেন একই সূত্রে বাঁধা।
৮. ‘ভাই’ বললে ভুল হবে না—বোয়ান কিরকিচ
বার্সেলোনার প্রাক্তন ফরোয়ার্ড বোয়ান কিরকিচের সঙ্গে রয়েছে রক্তের সম্পর্কও। চতুর্থ প্রজন্মে গিয়ে মিলে যায় পারিবারিক শিকড়—একই পূর্বপুরুষের সন্তান তাঁরা দুজন।
৯. একাই বার্সার গোল ইতিহাসে ৭ শতাংশ!
বার্সেলোনার হয়ে ৬৭২ গোল করেছেন মেসি—ক্লাবটির ইতিহাসে হওয়া মোট ৯,৩২২ গোলের প্রায় ৭.২%! একাই একটি যুগকে প্রতিনিধিত্ব করার এর চেয়ে ভালো পরিসংখ্যান আর কী হতে পারে?
১০. একা যেটা করেন, অনেকে মিলে পারেন না
চ্যাম্পিয়নস লিগে মেসির হ্যাটট্রিক সংখ্যা ৮টি। অথচ রাউল, রুনি, সালাহ, সুয়ারেজ, গ্রিজম্যান, ইব্রা, হিগুয়েইন, তোরেস—এই সব তারকার সম্মিলিত হ্যাটট্রিক সংখ্যাও মেসির সমান নয়। এই এক পরিসংখ্যানই বলে দেয়, তিনি কতটা অনন্য।
শেষ কথায় শুরু হয় শ্রদ্ধা
লিওনেল মেসিকে শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। তাঁর ফুটবল এক শিল্প, তাঁর ক্যারিয়ার এক পথনির্দেশ। বয়স ৩৮—কিন্তু প্রাণশক্তি যেন ঠিক সেই ১৮-র মতোই। জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে যত গল্পই বলা হোক না কেন, মেসি নিজেই যেন এক ‘গল্পের রাজপুত্র’—যিনি প্রতিবারই নিজের সীমা ভেঙে তৈরি করেন নতুন অধ্যায়।
শুভ জন্মদিন, লিও। তুমি সময়ের সেরা নয়, তুমি সময়কেই ছাপিয়ে যাওয়া এক অনন্ত বিস্ময়।
