ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিএনজি চলাচলে অনিয়ম, রাজস্ব হারাচ্ছে কোটি টাকা


ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ও আশপাশের সড়কগুলোতে লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই অবাধে চলাচল করছে প্রায় ৮ হাজার সিএনজি অটোরিকশা। এসব যানবাহনের অধিকাংশ চালকই বিআরটিএ’র অনুমোদন ছাড়াই রাস্তায় যাত্রী পরিবহন করছেন, যা আইন, জননিরাপত্তা এবং সড়ক শৃঙ্খলার চরম লঙ্ঘন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব সিএনজি মালিক ও চালকরা বছরের পর বছর লাইসেন্স নবায়ন না করেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হলেও দলীয় প্রভাব, চাঁদাবাজি ও ঘুষের কারণে অভিযানগুলো ফলপ্রসূ হচ্ছে না। এতে করে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে শহরের দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও যানজট বেড়ে চলছে।
স্থানীয় একাধিক ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,
“অনেক চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস সনদ এমনকি রেজিস্ট্রেশনও নেই। কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই তারা যাত্রী পরিবহন করছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ট্রাফিক ইনচার্জ মীর আনোয়ার দৈনিক নতুন কাগজ কে বলেন পাঁচ মাসে ১৭ শ মামলা, ৭১ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে , গাড়ি রাখার ডাম্পিং ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের, এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া খাটিয়াহাতা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ বলেন পাঁচ মাসে ১০০০ হাজার গাড়ি মামলা দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে, ডাম্পিং ব্যবস্থা থাকলে আরো মামলা দিয়ে সরকারি রাজস্ব আদায় করা যেত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিআরটিএ কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক মোঃ মহসিন বলেন, জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বিআরটিএ’র নিয়মিত কার্যক্রমের আওতায় ৫৫টি যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রায় ২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তবে বড় ধরনের অভিযান পরিচালনায় একটি বড় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার ভাষ্য, “আমাদের ডাম্পিং ইয়ার্ড বা গাড়ি রাখার উপযুক্ত জায়গা না থাকায় আমরা গাড়ি জব্দ করতে পারি না, ফলে অভিযানে সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়।”
তিনি আরও বলেন, “চলতি বছরের জুন মাসে মাত্র দুটি যানবাহনের পক্ষ থেকে লাইসেন্স নবায়নের আবেদন জমা পড়েছে, যা মোটেও সন্তোষজনক নয়।” এই বিষয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, সিএনজি চালিত যানবাহন খাতে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সরকার প্রতিবছর ১২ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
দৈনিক নতুন কাগজের এক প্রশ্নে সিএনজির ভাড়া নির্ধারণ বিষয়ে তিনি বলেন, “সিএনজির ভাড়া নির্ধারণের দায়িত্ব বিআরটিএ’র নয়, এটি পৌরসভার বিষয়। আমাদের দায়িত্ব মূলত গণপরিবহন, বিশেষ করে লোকাল বাসের ভাড়া তালিকা নির্ধারণ করা।”
তিনি আরো অভিযোগ করেন, “সিএনজির বিরুদ্ধে কোনো অভিযান চালাতে গেলে চালকরাই অনেক সময় দুর্ব্যবহার করে । ফলে সঠিকভাবে আইন প্রয়োগে বিঘ্ন ঘটে।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, যদি বিআরটিএ’র অবকাঠামোগত সমস্যা, বিশেষ করে ডাম্পিং ইয়ার্ডের মতো জরুরি প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা যায়, তবে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, লাইসেন্স নবায়ন, ও রাজস্ব আদায়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
“লাইসেন্স নবায়ন ছাড়া গাড়ি চালানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আমরা খুব শীগ্রই বড় পরিসরে অভিযান চালিয়ে অবৈধ সিএনজি গুলোকে জব্দ করবো।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই বিশৃঙ্খলা বন্ধ করতে হলে দলীয় প্রভাবমুক্ত প্রশাসনিক পদক্ষেপ, জরুরি পর্যবেক্ষণ টিম গঠন এবং জনসচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। শহরবাসীর দাবি, লাইসেন্সবিহীন সিএনজি চলাচল রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক এবং সড়ককে ঝুঁকিমুক্ত রাখা হোক।
