বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

পঞ্চগড় জেলার বোদা হবে একটি মডেল পৌরসভা

পঞ্চগড় জেলার বোদা হবে একটি মডেল পৌরসভা
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

চিত্ত বিনোদন, শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পৌর নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি সহ সুস্থ সমাজ গঠনে পঞ্চগড় জেলার  বোদা পৌরসভায় নানা উন্নয়ন মুলক কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজগুলো সম্পন্ন হলে, অবকাঠামগত সুবিধার পাশাপাশি, ভ্রমণ চিত্ত বিনোদন খেলাধুলা ও সংস্কৃতিক চর্চার নির্মল বিনোদন সহ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্র তৈরি হবে এবং বোদা পৌরসভা হবে একটি মডেল পৌরসভা। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার মধ্যে সাংস্কৃতিক চর্চা শোভা ও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি আয়োজনের জন্য একটি মানসম্পূর্ণ অডিটোরিয়াম এর চাহিদা এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। বিদ্যমান অডিটোরিয়ামটি অন্ধকারাচ্ছন্ন ও জরাজীর্ণ হওয়ায় এটি সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অন্যান্য কার্যক্রম আয়োজনের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।

সংস্কৃতি কর্মকাণ্ড  সহ অন্যান্য কার্যক্রমে গতি ও পুনর্জীবিত করে তরুণ প্রজন্মের জন্য সৃজনশীল পরিসর গড়ে তুলতে সাউন্ড সিস্টেম প্রজেক্টর পরিবেশ বান্ধব সরঞ্জাম আলোকসজ্জা সহ নানা সৌন্দর্য বর্ধন কাজ করে একটি দৃষ্টিনন্দন আধুনিক অডিটোরিয়াম ভবনের সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে।

শিশুদের মানসিক,  স্বাভাবিক বিকাশ, সামাজিকতার বন্ধন সৃষ্টি ও খেলাধুলার পরিবেশ নিশ্চিত করতে আধুনিক নিরাপদ ও শিশু বান্ধব শিশু পার্ক অপরিহার্য। অনেক পুরনো  একটি শিশু পার্ক থাকলেও সংস্কার ও সরঞ্জামের অভাবে দীর্ঘদিন যাবত অব্যবহৃত  অবস্থায় পড়ে রয়েছে। 

শিশুদের আনন্দময় জীবন ও শারীরিক বিকাশে নিরাপদ বিনোদনে একাধিক এক্টিভিটি রাইট, ক্লাইম্বিং,রাবারাইজ গ্রাউন্ড কভার, ফিজিক্যাল এক্টিভিটির সহ নানা সরঞ্জাম  ও সবুজায়নে সৌন্দর্য বৃদ্ধির মাধ্যমে মানসম্মত একটি শিশু পার্ক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।। 

পঞ্চগড় জেলার  বোদা উপজেলা তুলনামূলক উঁচু এলাকা হওয়ায় বছরে বেশিভাগ সময় পুকুরে পর্যাপ্ত পানি থাকে না এছাড়াও পুকুরের সংখ্যাও অনেক কম। বর্ষাকালে সাঁতার না জানার কারণে প্লাবিত পানি বা ডোবা পুকুরে পড়ে প্রতিবছর অনেক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এই প্রেক্ষাপটে শিশুদের নিয়মিতভাবে নিরাপদ পরিবেশের সাতার শেখানোর জন্য সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিদিন ১২০ জনের বেশ শিশু এখানে নিতে পারবে সাঁতার প্রশিক্ষণ।  প্রশিক্ষনার্থীদের লাইভ জ্যাকেট, লাইফ রিং,বাঁশি প্রাথমিক চিকিৎসার কিডসহ সেফটি কিটস এবং ছেলে মেয়েদের পৃথক ড্রেস চেঞ্জিং রুম নির্মাণ করা হচ্ছে । 

খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চায় ঐতিহ্যগতভাবে বোদা পৌরসভা অনেক  আগে থেকে এগিয়ে।  বোদায় নারী ফুটবল একাডেমি গত কয়েক বছরে অসংখ্য নারী ফুটবলার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। যারা জাতীয় দলের হয়ে বিদেশে খেলে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে।

শারীরিক ও মানসিক বিকাশ খেলাধুলায় আগ্রহী,  মোবাইল আসক্তি থেকে দূরে রাখা, খেলাধুলার মাধ্যমে একে অপরের   মধ্যে সৌহার্দ্য বন্ধন সৃষ্টি, মাদক প্রবৃত্তির চিন্তা থেকে দূরে রাখতে এবং সুস্থ জাতি গঠন ও নতুন নতুন খেলোয়াড় গড়ে তুলতে, বোদা সরকারি পাইলট মডেল  স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন জায়গায় উন্নত মানের সান পিচ যুক্ত দুটি ক্রিকেট পিচ,একটি হ্যান্ডবল কাম ভলিবল মাঠ ও একটি ব্যাডমিন্টন পিচ নির্মাণ করা হয়েছে। ছেলে মেয়ে উভয়ই এখানে খেলাধুলা করতে পারবে। এর ফলে  এখানকার একসময়ের মেয়েদের হ্যান্ডবলের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস আবারো পুনর্জীবিত হবে এবং শিক্ষার্থী, ক্রিড়াবিদ ও সাধারণ জনগণের জন্য একটি সুস্থ ও সক্রিয় জীবনধারার পথ উন্মুক্ত  হবে। 

সাধারণ মানুষের বিশ্রামের জন্য নেই কোন ছায়াঘেরা স্থান কিংবা কোন পার্ক। সকাল ও বিকেল বেলা শিশু নারী ও বৃদ্ধদের হাঁটাচলা কিংবা বসার উপযুক্ত কোন মুক্ত পরিবেশ নেই। এই প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিক রাজার দিঘিরপাড় সম্ভাবনাময়ী ও উপযুক্ত পরিবেশবান্ধব এবং  নাগরিক সুবিধার সম্পূর্ণ স্থান হওয়ায় পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলাভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে প্রকৃতি ঘেরা  মনোরম পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে পার্ক নির্মাণ কাজ করা হবে। এটি হবে এই এলাকার নাগরিকদের জন্য একটি নিরাপদ সুন্দর ও মনমুগ্ধকর পাবলিক পার্ক। শিশুদের খেলাধুলা, বয়স্কদের হাঁটাচলা ও বিশ্রামের জন্য উপযোগী করে পার্ক নির্মান প্রকল্পহাতে নেয়া হয়েছে।

বোদা উপজেলার প্রাণকেন্দ্র টি,জেলার চারটি উপজেলার  যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বোদা বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন বোদা সরকারি পাইলট মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শহীদ মিনার এলাকায় বহুস্তর বিশিষ্ট পানির  ফোয়ারা  নির্মাণ করা হচ্ছে।। রাতে এলইডি আলোকসজ্জা সহ শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের জন্য দাঁড়ানোর জায়গা ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরি করা হবে। 

দর্শনার্থী ও সাধারণ মানুষের জন্য এটি বোদা শহরের একটি নতুন আকর্ষণে পরিণত হবে। পর্যটন শিল্পে এটি একটি দৃশ্যমান ও স্থায়ী স্থান হিসেবে বিবেচিত হবে। সেই সঙ্গে সৌন্দর্যবোধন পরিবেশ,  সচেতনতা ও শহরের প্রতি গর্ব জন্মাবে এবং শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও স্থানীয় পর্যটনশিল্পে নতুন মাত্রা যোগ হবে।

বোদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার  ও বোদা পৌর প্রশাসক মোঃ শাহরিয়ার নজির বলেন, বোদা উপজেলা ঐতিহ্যগতভাবে শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা সহ নানা ক্ষেত্রে জেলার অন্যতম উপজেলা। এখানে সুযোগের অভাবে অনেক প্রতিভা বিকশিত হতে পারে না। ফলে তারা ঘরে বসে মোবাইল আসক্তি, কুচিন্তা, খারাপ কাজের ভাবনা ও অলস জীবন কাটায়।   ,উদ্ভাবনী  কাজের ভাবনা  হাড়িয়ে ফেলে। ।

বর্তমান সময়ে প্রতিটি নাগরিকের জীবনমান উন্নয়নের ফলে তারা নিজে এবং সন্তানদের উন্নত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বাঁচতে চায়। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির জন্য এই কাজগুলো হাতে নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক ধারায় গড়ে তুলতে  তাদের সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ তৈরি করে দিলে, তারা আগামী দিনে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সক্ষম হবে। 

প্রকল্প গুলোর কাজ শেষ হলে পৌরবাসীর অবকাঠামগত সুবিধার পাশাপাশি সুস্থ বিনোদন চিন্তা, মানসিকতা,নির্মল বায়ু, সুস্থ সবল মন ও শরীর আগামী প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়ক হবে। 


দৈএনকে/জে .আ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ

আরও পড়ুন