ওজন নিয়ন্ত্রণে আম: উপকারী না ক্ষতিকর?


গ্রীষ্মকাল মানেই রসালো ও মিষ্টি আমের মৌসুম। কিন্তু ওজন কমানোর ডায়েটে থাকা অনেকেই মনে করেন, আমে চিনি বেশি বলে এটি খাওয়া উচিত নয়। তবে পুষ্টিবিদদের মতে, এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। বরং সঠিক পরিমাণে খেলে আম হতে পারে একটি স্বাস্থ্যকর ওজন নিয়ন্ত্রণকারী ফল।
আমের পুষ্টিগুণ: এক কাপের তিন-চতুর্থাংশ বা ১২৪ গ্রাম আমে যা থাকে:
- ক্যালোরি: ৭০
- সুগার: ১৭ গ্রাম (প্রাকৃতিক চিনি)
- ফাইবার (আঁশ): ২ গ্রাম
- পটাশিয়াম: ২০৮ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি: দৈনিক চাহিদার ৫০%
- কপার, ভিটামিন এ ও বি৬: রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে
- আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) সাধারণত ৪১ থেকে ৬০ এর মধ্যে থাকে, যা এটিকে লো থেকে মিডিয়াম জিআই ফলের শ্রেণিতে ফেলে। ফলে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায় না।
ওজন নিয়ন্ত্রণে আম: পুষ্টিবিদদের মতে, আম খাওয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ যদি তা মাত্রা অনুযায়ী খাওয়া হয়।ডায়েটিশিয়ান সু-এলেন অ্যান্ডারসন-হেইনস, বলেন, ডায়েটে আম রাখলে তা প্রাকৃতিক চিনি ও আঁশের চাহিদা পূরণ করে এবং মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছাও কমায়।
অন্যদিকে পুষ্টিবিদ ডেবি পেটিপেইন বলেন, আমে থাকা প্রাকৃতিক চিনি ক্যান্ডি বা সফট ড্রিঙ্কের মতো অতিরিক্ত চিনি নয়। তাই আম শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। এছাড়া আঁশ (ফাইবার) থাকায় আম হজমে সাহায্য করে এবং কম ক্যালোরির ডায়েটে যে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায়, তা প্রতিরোধ করতেও কার্যকর।
পুষ্টিবিদদের মতে যেভাবে আম খাবেন: আমের পুষ্টিগুণ বজায় রেখে ডায়েটে রাখার কিছু উপায় পুষ্টিবিদরা দিয়েছেন:
- সালাদের সঙ্গে টাটকা আম মিশিয়ে খান যেমন: ব্ল্যাক বিনস ও লেবু-ভিনেগারের সঙ্গে।
- ট্যাকো বা চিয়া পুডিংয়ের টপিং হিসেবে ব্যবহার করুন।
- স্মুদি বা ম্যাঙ্গো-মকটেইলে যুক্ত করুন (ম্যাঙ্গো, পুদিনা ও লেবু দিয়ে)।
- কাঁচা আম ত্বকসহ খাওয়ার অভ্যাস করলে আঁশের পরিমাণ বাড়ে।
- তবে ড্রাই আম এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে প্রাকৃতিক চিনির ঘনত্ব বেশি এবং অনেকে অতিরিক্ত চিনি মেশান।
- আম কখনোই উচ্চ-চিনিযুক্ত খাবারের সঙ্গে খাওয়া উচিত নয়।
যাদের জন্য সতর্ক থাকা জরুরি: যদিও আম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবে এতে প্রাকৃতিক চিনি বেশি থাকায় ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। লো ‘জিআই’ খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিক রোগীরাও আম খেতে পারেন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে ও দৈনিক কার্বোহাইড্রেট হিসেব রেখে।
ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর আম একটি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। পুষ্টিবিদদের মতে, সঠিক পরিমাণ ও স্মার্ট কম্বিনেশনের মাধ্যমে আম ওজন কমানোর ডায়েটেও অন্তর্ভুক্ত করা যায়। সুতরাং, ডায়েটে মিষ্টি স্বাদের জন্য কৃত্রিম খাবার বাদ দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে উপকারী ফল আমই হতে পারে সেরা বিকল্প।
দৈএনকে/জে .আ
