দায়িত্বে আফিদা, অথচ ওয়েবসাইটে অধিনায়ক সাবিনা!


মিয়ানমারে চলমান এএফসি নারী এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ নারী দলের নেতৃত্বে রয়েছেন আফিদা খন্দকার। বর্তমান স্কোয়াডে না থাকলেও বাংলাদেশ নারী ফুটবলের দীর্ঘদিনের তারকা খেলোয়াড় সাবিনা খাতুনকে এখনও ওয়েবসাইটে অধিনায়ক হিসেবে দেখাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
শুধু সাবিনা নন, আরও কয়েকজন সাবেক তারকা খেলোয়াড়—মাসুরা পারভীন, কৃষ্ণা রানি সরকার, সানজিদা আখতার ও সুমাইয়া আক্তারকেও জাতীয় দলে সক্রিয় খেলোয়াড় হিসেবে তালিকাভুক্ত রাখা হয়েছে, যদিও তারা কেউই মার্চে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর, মে মাসে জর্ডান সফর বা চলমান বাছাইপর্বে স্কোয়াডে ছিলেন না।
এই ধরনের তথ্যের অসঙ্গতি বাফুফের ওয়েবসাইটের ওপর প্রশ্ন তুলছে। কারণ, একটি ফেডারেশনের ওয়েবসাইট শুধু একটি আনুষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি দেশের ফুটবল কাঠামোর দর্পণ হিসেবে কাজ করে। দেশ-বিদেশের আগ্রহী দর্শক, গণমাধ্যম এবং ফুটবল বিশ্লেষকেরা প্রাসঙ্গিক ও হালনাগাদ তথ্য পেতে নির্ভর করেন এই প্ল্যাটফর্মের ওপর।
কিন্তু বাফুফের ওয়েবসাইটে তথ্য হালনাগাদের অভাব স্পষ্ট। আধুনিক সময়ে যখন ডিজিটাল উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তখন এমন অব্যবস্থাপনা শুধু ফুটবলপ্রেমীদের বিভ্রান্ত করে না, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ফুটবল প্রশাসনের ভাবমূর্তিকেও নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ওয়েবসাইট ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে নারী ও পুরুষ জাতীয় দলের মধ্যে তথ্য হালনাগাদ ও উপস্থাপনায় বৈষম্য।
পুরুষ জাতীয় দলের প্রোফাইল অত্যন্ত সুসজ্জিত। সাম্প্রতিক সিঙ্গাপুর ও ভুটান ম্যাচের আগে ক্যাম্পে থাকা ২৬ জন ফুটবলারের হোম জার্সিতে হাই-কোয়ালিটি হেডশট যুক্ত করা হয়েছে। কিট পার্টনার ‘দৌড়’ এই ফটোশুটের আয়োজন করে। কিন্তু একই ধরনের কোনো ফটোশুট এখনও দেখা যায়নি নারী দলের জন্য, যারা কিনা টানা দু’বারের সাফ চ্যাম্পিয়ন এবং নিয়মিতভাবে উচ্চ র্যাংকিংধারী দলগুলোর বিপক্ষে পয়েন্ট তুলে নিচ্ছে।
নারী দলের এমন অর্জন সত্ত্বেও তাদের প্রোফাইল ও প্রচারণা অনেকটাই পিছিয়ে। ব্র্যান্ডিংয়ে এই বৈষম্য প্রশ্ন তোলে—সফলতা পেলেও নারী ফুটবলাররা কি ন্যায্য গুরুত্ব পাচ্ছেন?
বাফুফের ফেসবুক পেজ নতুন কমিটির অধীনে বেশ সক্রিয় হয়েছে। ওয়েবসাইটেও কিছুটা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে—নিয়মিত আপডেট যাচ্ছে। তবে এটি এখনো পুরোপুরি হালনাগাদ নয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের অক্টোবরের নারী সাফ স্কোয়াডকে এখনও ওয়েবসাইটে জাতীয় দল হিসেবে দেখানো হচ্ছে, যেখানে বর্তমান স্কোয়াডে তাদের অনেকে নেই।
এই ধীরগতির হালনাগাদ প্রক্রিয়া ফেডারেশনের ডিজিটাল উপস্থিতির প্রতি উদাসীনতা প্রকাশ করে। অথচ আন্তর্জাতিক ফুটবলে আধুনিক ফুটবল প্রশাসনের অংশ হিসেবে স্বচ্ছতা ও সময়োপযোগী তথ্য পরিবেশন অত্যন্ত জরুরি।
তবে আশার কথা, জুন মাসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাফুফের মার্কেটিং ও ডিজিটাল মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান ফাহাদ করিম জানিয়েছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ ওয়েবসাইটকে সম্পূর্ণ আধুনিক ও তথ্যসমৃদ্ধ রূপে গড়ে তোলার কাজ চলছে।
এখন দেখার বিষয়, বাস্তবে নারী ফুটবলও বাফুফের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রাপ্য সম্মান পায় কিনা।
