পাথরঘাটার মিজান: এক ব্যক্তি, দুই রাজনৈতিক পরিচয়


বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাইকারি মৎস্য বাজার বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি। এই মৎস্য বাজার বিএফডিসির একজন শ্রমিক মিজান এখন ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
কখনো ফ্যাসিস্ট সরকারের স্থানীয় এমপি শওকত হাসানুর রহমান রিমনর সঙ্গে ছবি। কখনো তৎকালীন পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবিরের সঙ্গে তার ছবি। কখনো মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন কিংবা অন্য কোন নেতার সঙ্গে মিজানুর রহমান মিজানের ছবি। পতিত সরকারের নেতাদের সঙ্গে তোলা ছবিতে রীতিমত সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ভাইরাল পাথরঘাটার মিজান।
শুধুই কি এখানে শেষ? না। বরগুনা ২আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনির সঙ্গেও মিজানের ছবি ভাইরাল।
কে এই মিজান?
পাথরঘাটা পাইকারী মৎস্য বাজার বিএফডিসি ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য মিজানুর রহমান মিজানের দ্বিমুখী আচরণের কারনে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মিজান নিজেকে বিএনপির লোক দাবী করলেও আওয়ামী সরকারের লেজুড়বৃত্তি করে তত্কালীন সময়ে নানা সূযোগ সুবিদা নিয়ে গত ৫ আগষ্টের পটপরিবর্তনের পর আবার বিএনপির আশির্বাদ পেতে এক-ই চরিত্রে আবির্ভূত হয়েছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। গত আওয়ামী সরকারের আমলে তখনকার পাথরঘাটা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিএফডিসির শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলের হাত ধরে মাঠে নামেন মিজান। বিএফডিসি ঘাটশ্রমিক ইউনিয়নের নানা মিছিল মিটিং ও প্রোগ্রামে তার দেখা মেলে। এখানেই তিনি থেমে থাকেননি। এরপরে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, কাউন্সিলর , এমনকি আমলাদের নানা মিছিল মিটিংয়েও যোগ দেন তিনি। ওই সময়ের নানা মিছিল-সমাবেশের ভিডিও ফুটেজ ও ছবি ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এরপরেই মানুষের মাঝে পরিষ্কার হতে থাকে তার দ্বিমুখী চরিত্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা মিজানের অনেক ছবি ইতিমধ্যেই স্থানীয় বিএনপি ও তার সমমনা দলের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের হারুন মুসল্লীর ছেলে মিজান । ২০১০ সালে তৎকালীন বিএফডিসির সভাপতি ও আওয়ামী শ্রমিকলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলের কমিটির দপ্তর সম্পাদক দিয়ে যাত্রা শুরু হয় । যার সত্যতা এপ্রতিনিধিকে মুঠোফোনে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন।
এবিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল পাথরঘাটা উপজেলা শাখার সদস্য সচিব বাকি বিল্লাহ ফরাজী বলেন,বরগুনা -২ আসনের সাবেক প্রভাবশালী এমপি এবং বর্তমান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মণি সাহেবের নাতি পরিচয় দেন এই মিজান। সে ফ্যাসিস্ট সরকারর স্থানীয় এমপি রিমনের দালালী করেছে। ঠিক এখনো সেই একই কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের পাথরঘাটা উপজেলার সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান মুসা বলেন ,পাথরঘাটার ৬ নং ওয়ার্ডের তালতলা খেয়া ঘাটের মাঝি ছিলেন মিজানের বাবা। পরবর্তীতে তিনি তালতলা এলাকায় চায়ের দোকান করেন। প্রশ্ন হচ্ছে সেই অবস্থা থেকে আজকের এই অবস্থায় ফিরে যাওয়ার পিছনের রহস্য কি? অবশ্যই উভয় দল থেকে অনৈতিক সুবিধা ভোগ করা।
স্থানীয় বিএনপি সহ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এখনই যদি এমন সব মিজানের লাগাম টেনে ধরা নাহয়; তবে ভবিষ্যতে চরম মূল্য দিতে হতে পারে।
বিষয়টি প্রসঙ্গে মুঠোফোনে মিজানুর রহমান মিজান বলেন,আমি বিএফডিসি ঘাটশ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নির্বাচিত হয়ে তৎকালীন এমপিকে ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়েছি মাত্র। যে ভিডিও আমার নিজের কাছেও আছে। আর আমি রাজনীতি করি বিএনপির । রাজনীতি করি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের ।আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির উভয় রাজনৈতিক দলের হয়ে সুবিধা নেয়া কিংবা প্রভাবিত করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব আমার প্রতি পক্ষের অপপ্রচার। সাবেক সাংসদ নূরুল ইসলাম মণি সাহেবের নাতি পরিচয় দেয়ার বিষয়টি প্রসঙ্গে বলেন, আমি স্যর, ভাই এসব ডাকা পছন্দ করি না। অর্থাৎ সে বুঝাতে চেয়েছেন সাবেক এমপি মণি সাহেবকে তিনি দাদু সম্বোধন করেন।
দৈএনকে/জে, আ
