শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • বিমানবন্দরের ‘ফ্লাইং জোনে’ মাইলস্টোন, সরানোর সুপারিশ পরিকল্পনাবিদদের নতুন সংবিধানের জন্য আমরা রাজপথে নেমেছি : নাহিদ ইসলাম দক্ষিণাঞ্চলের সব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, লোকালয়ে জলাবদ্ধতা বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে চাইঃ এ্যানি বঙ্গোপসাগর দিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে নারী-শিশুসহ ২০ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ মোহাম্মদপুরে ছিনতাই: দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগে ৪ পুলিশ ক্লোজড মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ৩৩, হাসপাতালে ৫০ জন মূল সংস্কার ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে কমিশন ‘ওসি হয়েও আমার কমদামি ফোন, আপনি দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই হবেই’ মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: ‘আমি ভালো আছি’ বলেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলো মাহতাব
  • মূল সংস্কার ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে কমিশন

    মূল সংস্কার ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে কমিশন
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নিয়োগ, জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত ১০০টি আসনে নির্বাচনের পদ্ধতি—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে এখনও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

    বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি ও জামায়াত একই ধরনের প্রস্তাব দিলেও, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও আরও কয়েকটি দলের ভিন্নমতের কারণে আলোচনা জটিল হয়ে উঠেছে। ফলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে কমিশনের আরও সময় প্রয়োজন বলে জানা গেছে।

    ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ১৯টি মূল সাংবিধানিক সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলে একটি জাতীয় সনদ (রিফর্ম চার্টার) চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন। কিন্তু দ্বিতীয় দফা সংলাপ এগোচ্ছে ধীরগতিতে। ওই তিনটি বিষয়ে দলগুলোর মতপার্থক্যই এর বড় কারণ। অচলাবস্থা কাটাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ও সংসদের উচ্চকক্ষের কাঠামো নিয়ে একাধিক সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।

    তত্ত্বাবধায়ক সরকার

    এর আগে, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন তত্ত্বাবধানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্প্রতিষ্ঠা এবং এর মেয়াদসহ অন্যান্য বিষয়ে একমত হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নিয়োগের প্রক্রিয়ায় ভিন্নমত দেখা দেয়।

    বিএনপি প্রথমে পাঁচটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিল। জামায়াত দিয়েছিল তিনটি। তবে সম্প্রতি তারা সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে যাতে মূল পার্থক্য খুব একটা নেই।

    গত সোমবার কমিশনে জমা দেওয়া সংশোধিত প্রস্তাবে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের কথা বলেছে, যার সদস্য হবেন- প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলীয়)। এই কমিটি ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল থেকে পাঁচজন করে মোট ১০ জনের মধ্য থেকে আলোচনার মাধ্যমে একজনকে বাছাই করবে। মতৈক্য না হলে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। তবে রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়ার ধারাটি বাদ রাখা হবে।

    অন্যদিকে, জামায়াত তাদের চূড়ান্ত প্রস্তাবে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি চেয়েছে, যেখানে বিএনপি প্রস্তাবিত চারজনের সঙ্গে জাতীয় সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধি থাকবেন।

    তাদের প্রস্তাব, ক্ষমতাসীন ও প্রধান বিরোধী দল থেকে তিনজন করে, তৃতীয় বৃহত্তম দল থেকে দুইজন এবং অন্যান্য দল বা স্বতন্ত্ররা একজন করে প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন। মতৈক্য না হলে তারাও রাষ্ট্রপতি ব্যতীত ত্রয়োদশ সংশোধনীর পদ্ধতি অনুসরণের প্রস্তাব দিয়েছে।

    উভয় দলই মনে করে, অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের সম্মতির ওপর ভিত্তি করেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নির্বাচন করা উচিত।

    জামায়াতের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট প্রস্তাবের প্রতি নমনীয়তা দেখিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অনুসন্ধান কমিটিতে সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধি থাকলে সমস্যা নেই।

    তবে এনসিপিসহ কয়েকটি দল ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির বিকল্প উপায় রাখার প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নিয়োগে র‍্যাংকড চয়েস ভোটিং পদ্ধতির পক্ষে মত দিয়েছে, যাতে রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া যায়।

    এনসিপির প্রস্তাব ছিল- তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নির্বাচন পদ্ধতিতে র‍্যাংকড চয়েস ভোটিং চালু করা হোক।

    জামায়াতের নায়েবে আমির ড. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের মঙ্গলবার বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নির্বাচন হবে সম্মতির ভিত্তিতে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেন অবিশ্বাস তৈরি না হয়, সে জন্য আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে হবে।”

    ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব

    জামায়াতের কাঠামোর অনুরূপ পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটির প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী প্রত্যেক রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের একজন করে উপযুক্ত প্রার্থীর নাম দিতে বলা হবে। এরপর যদি সম্মতিতে পৌঁছানো না যায়, তাহলে ক্ষমতাসীন ও প্রধান বিরোধী দল তিনজন করে, আর তৃতীয় বৃহত্তম দল দুইজনকে মনোনয়ন দেবে।

    এই প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দলের তালিকা থেকে একজন এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের তালিকা থেকে একজনকে বেছে নেবে। বিরোধী দলও তাই করবে। তৃতীয় বৃহত্তম দল ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল উভয়ের তালিকা থেকে একজন করে বেছে নেবে। যদি এসব প্রার্থীর মধ্যে কারো ওপর ঐকমত্য হয়, তবে তাকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে; অন্যথায় র‍্যাংকড চয়েস ভোটিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে।

    র‍্যাংকড চয়েস ভোটিং এমন একটি নির্বাচন পদ্ধতি, যেখানে ভোটাররা একাধিক প্রার্থীকে তাদের পছন্দের ক্রমানুসারে (প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ইত্যাদি) ভোট দেন।

    গত মঙ্গলবার প্রেস ব্রিফিংয়ে এনসিসির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘অনেক দলই বিচার বিভাগের সদস্যদের (বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের) অন্তর্ভুক্তির বিপক্ষে। এর পরিবর্তে আবার অনেকে র‍্যাংকড চয়েস ভোটিংও চায়। সেই সঙ্গে ত্রয়োদশ সংশোধনীর পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার বিরোধিতাও আছে।’

    তিনি বলেন, “আসলে আমরা কিছুটা অচলাবস্থায় আছি- অনুসন্ধান কমিটি সিদ্ধান্ত কীভাবে নেবে, অচলাবস্থা কীভাবে কাটাবে তা নিয়ে। আমরা দলগুলোকে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছি।”

    উচ্চকক্ষ গঠন ও সংরক্ষিত নারী আসন

    বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে, যেখানে উচ্চকক্ষে ১০০টি এবং নিম্নকক্ষে ৪০০টি আসন থাকবে। পাশাপাশি, সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করার প্রস্তাবও প্রায় সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে।

    তবে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে মতপার্থক্য রয়ে গেছে।

    জামায়াত প্রস্তাব করেছে, উচ্চকক্ষ এবং সংরক্ষিত নারী আসন উভয় ক্ষেত্রেই ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন হোক। অন্যদিকে বিএনপি চায়, এই নির্বাচন নিম্নকক্ষের সদস্যসংখ্যা অনুযায়ী আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে হোক।


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ

    আরও পড়ুন