রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
Natun Kagoj
কমিশন ছাড়া কাজ নয়, বদলির বাইরেও প্রভাব বিস্তার!

গণপূর্ত অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফের দুর্নীতির সাম্রাজ্য

গণপূর্ত অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফের দুর্নীতির সাম্রাজ্য
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ইএম কারখানা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফের বিরুদ্ধে কমিশন বাণিজ্য, সিন্ডিকেটে কাজ ভাগাভাগি, অনিয়ম ও দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নির্ধারিত কমিশন না পেলে তিনি কোনো কাজ অনুমোদন করেন না। অফিসেও নিয়মিত উপস্থিত না থাকায় তার অধীনস্থ কর্মকর্তারা যেমন অসন্তুষ্ট, তেমনি ঠিকাদাররাও বিল না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন।

একাধিক ভুক্তভোগী ঠিকাদার গণমাধ্যমকে জানান, প্রকৌশলী ইউসুফের সাথে কাজ করতে হলে ১৫-২০% কমিশন গুনতে হয়। এমনকি কাজ অসম্পূর্ণ থাকলেও পুরো বিল উত্তোলনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সেই অর্থ সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও দায়ের হয়েছিল এক ঠিকাদারের পক্ষ থেকে, যা গণমাধ্যমে শিরোনাম হলে বিল পরিশোধ করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজেকে প্রধান প্রকৌশলীর ‘খাস লোক’ দাবি করে দপ্তরের ভেতরে বাহিরে প্রভাব বিস্তার করেন। এর বিনিময়ে নিয়মিত মোটা অঙ্কের ঘুষ দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে। অথচ মন্ত্রণালয়ের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, কোনো কর্মকর্তা তিন বছরের বেশি একই দপ্তরে থাকতে পারবেন না এবং ‘ঢাকা টু ঢাকা’ পোস্টিং নিষিদ্ধ। কিন্তু ইউসুফ প্রায় চার বছর ধরে একই দপ্তরে বহাল আছেন, যা দপ্তরের অভ্যন্তরে নানা গুঞ্জনের জন্ম দিয়েছে।

সূত্র মতে, ইউসুফ একটি প্রভাবশালী ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত। তার প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় কাজ পায় নির্দিষ্ট কয়েকজন ঠিকাদার, যাদের মাধ্যমে তিনি অর্থ লোপাট করে থাকেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বিল আটকিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ আদায় করেছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে নিজের অবস্থান মজবুত করে রেখেছেন।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের সাথে তার যোগাযোগ থাকায় কেউ তার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সাহস পান না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইউসুফের নামে ও বেনামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ও ব্যাংক ব্যালেন্স। সরকারি কাজের বিল পেতে হলে তার কমিশন দিতেই হয় এমন অভিযোগ এতটাই প্রচলিত যে ঠিকাদাররা অফিসে কাজ শুরুর আগেই ‘কমিশন’ হিসাব করে ফেলেন।

অফিসের ফাইল নিজে না দেখে ড্রাইভার দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠান, ফলে অনেক প্রকল্প বিলম্বিত হয় এবং সরকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আগারগাঁওয়ে একটি প্রকল্পে ৩৫ লাখ টাকা ঘুষ না দেওয়ায় একজন ঠিকাদারের বিল আটকে রাখা হয়। অথচ প্রকল্পটি দুই বছর আগে শেষ হয়েছে।

ইউসুফ ঘন ঘন বিদেশ সফরে যান, যেগুলোর প্রকৃত কারণ নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। ধারণা করা হয়, কমিশনের টাকা বিদেশে পাচার বা সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে তিনি এই ভ্রমণগুলো করেন।

গণমাধ্যম ও অনুসন্ধানে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, ইএম কারখানা বিভাগের এই কর্মকর্তার কার্যক্রম শুধু দপ্তরের স্বচ্ছতা নষ্ট করছে না, বরং সরকারি অর্থের অপচয় ঘটিয়ে জাতীয় স্বার্থের ক্ষতি করছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, এত অভিযোগের পরেও কেন তাকে বদলি করা হচ্ছে না?

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেন প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা যায়।

এসব বিষয় জানতে নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফকে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি, তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আরও পড়ুন