কুমিল্লার মিষ্টি মারিয়ার বিতর্কিত উত্থান: কোটি টাকার সম্পদের মালিক!


সরকারি চাকরিজীবী হলেও তাঁর জীবনযাপন যেন কোনো শীর্ষ ধনী ব্যবসায়ীর চেয়ে কম নয়! বিলাসবহুল জীবন, বিদেশ সফর, দামি গাড়ি, ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট—সবকিছু মিলিয়ে এখন আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন কুমিল্লার মিষ্টি মারিয়া। তাকে এ নামে অনেকে চিনলেও বাস্তবে তার নাম মরিয়ম সরকার। এলাকার অনেকেই তাকে মরিয়ম নামে চিনেন। বাবা-মার দেওয়া নাম পাল্টে ঢাকায় এসে হয়ে গেছেন মিষ্টি জান্নাত।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এই কর্মরত কর্মকর্তা পরিচিত মুখ নন কেবল চাকরির জগতে, বরং ফ্যাশন ও মডেলিং দুনিয়াতেও তাঁর পদচারণা রয়েছে। তবে সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে যে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে, তা চমকে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলকেও।
উল্লেখযোগ্য কিছু আর্থিক তথ্য অনুসন্ধানে উঠে এসেছে; কুমিল্লায় রয়েছে একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট, বাজারমূল্য কোটি টাকার উপরে, স্থানীয় পোস্ট অফিসে ৮০ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র, সিটি ব্যাংকে রয়েছে ৪০ লক্ষ টাকার এফডি (ফিক্সড ডিপোজিট), ঢাকায় দুটি অ্যাপার্টমেন্ট (ফ্ল্যাট), অবস্থান অভিজাত এলাকায়, ব্যক্তিগত মালিকানায় দামি ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি, ঢাকা ও তার আশপাশে রয়েছে একাধিক জমি।
এসব সম্পদ অর্জন কীভাবে সম্ভব হলো, যেখানে তিনি একজন সাধারণ সরকারি কর্মকর্তা—সেই প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র।
সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর পাসপোর্ট "অর্ডিনারি" ক্যাটাগরির। অথচ অফিস থেকে ছুটি বা জিও (সরকারি আদেশ) না নিয়েই তিনি নিয়মিত বিদেশ সফর করেছেন।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, গত দুই বছরে তিনি ভ্রমণ করেছেন দুবাই, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ একাধিক দেশ। এ ভ্রমণের পেছনে খরচ হয়েছে বিপুল অঙ্কের অর্থ। কিন্তু এই অর্থের উৎস অনিশ্চিত।
মিষ্টি মারিয়ার আর্থিক উত্থানের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক ছত্রছায়া এমন অভিযোগ উঠেছে। বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতার সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও, একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের চেয়ারম্যানের সাথেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। বিশেষ করে ঐ রাজনীতিকের সঙ্গে দুবাই সফরে যাওয়া ও সেখানে সময় কাটানো নিয়েও রয়েছে নানা গুঞ্জন। জানা গেছে, এক সময় তাঁদের বিয়ের কথাও উঠেছিল।
মিষ্টি মারিয়া তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম) বিলাসবহুল জীবনযাত্রার বিভিন্ন ছবি নিয়মিত পোস্ট করে থাকেন। এতে রয়েছে পাঁচ তারকা হোটেলে সময় কাটানো, বিদেশ সফরের ঝলক, দামি পোশাক ও প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহারের দৃশ্য।
এসব দেখেই সাধারণ নাগরিকদের মনে প্রশ্ন, এই সকল জীবনযাত্রার ব্যয়ভার কীভাবে বহন করেন একজন সরকারি কর্মকর্তা?
জনমনে প্রশ্ন উঠলেও এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের অনুসন্ধান শুরু হয়নি মিষ্টি মারিয়ার বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কিংবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক সংগঠন ও বিভিন্ন সচেতন মহল তাঁর সম্পদের উৎস তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
মিষ্টি মারিয়ার গল্প একটি ব্যক্তি নয়, বরং আমাদের প্রশাসনিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক প্রভাব, ও জবাবদিহিহীনতার বাস্তব প্রতিচ্ছবি। একজন সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে অল্প সময়ের মধ্যে এত সম্পদ অর্জন করলেন, সেটির যথাযথ ও স্বচ্ছ তদন্ত প্রয়োজন। না হলে ভবিষ্যতে আরও অনেকে একই পথে হাঁটার সাহস পেয়ে যাবেন, যার পরিণাম ভয়াবহ।
