ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল: নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যেই বাড়ি ফেরা


আর মাত্র এক দিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলেছে মানুষ। রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য বড় শহর থেকে গ্রামে গ্রামে ফিরছে লাখো মানুষ। কর্মব্যস্ত জীবন পেছনে ফেলে কেউ ট্রেন, কেউ বাস, কেউবা নৌপথে ফিরছেন প্রিয়জনের সান্নিধ্যে।
তবে ঘরমুখো মানুষের চাপ সামাল দিতে না পারায় যাত্রীদের একাংশকে ভরসা রাখতে হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রার ওপর। বাসের ছাদ, ট্রাক, পিকআপভ্যান এমনকি অটোরিকশার ওপর ঠাসাঠাসি করে ফিরছে মানুষ। এতে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা।
যাত্রীদের ঢল ও টিকিটের সংকট: ঈদের আগের দিন হওয়ায় আজ বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটগুলোতে উপচেপড়া ভিড়। হাজার হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিটের অপেক্ষায়। অনেকেই আগেই টিকিট না পাওয়ায় নিরুপায় হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাহনে চড়ছেন। একজন যাত্রী বলেন, "ভোর ৫টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু এখনো টিকিট পাইনি। শেষমেশ বাধ্য হয়ে পিকআপে উঠছি। বাড়িতে তো ফিরতেই হবে!"
ছাদে ও পিকআপে করে যাত্রা: প্রাণহানির ঝুঁকি: ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কসহ বিভিন্ন রুটে দেখা গেছে—অনেক বাসের ছাদে দাঁড়িয়ে, বসে, এমনকি মালামালের ফাঁকে গাদাগাদি করে যাত্রা করছে মানুষ। ট্রাক ও পিকআপভ্যানেও পলিথিন দিয়ে ছাউনি তৈরি করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, "এই ধরনের যাত্রা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য ব্রেক বা দুর্ঘটনাতেই প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।"
সড়কে তীব্র যানজট ও দুর্ভোগ: ঘরমুখো মানুষের ঢলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানজট। বঙ্গবন্ধু সেতু, মানিকগঞ্জ, মাওয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। যানজটে আটকে থেকে অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করছেন রোদে-গরমে।
এক বাসচালক বলেন, "ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করেছি ভোরে, এখনো ফরিদপুর পৌঁছাতে পারিনি। রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ।"
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি: পুলিশ ও হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনা এড়াতে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সিসিটিভি ও ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি করা হচ্ছে। তবু যানজট ও অতিরিক্ত ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
ভাড়া নিয়ে হয়রানি: এ সময়টাতে যানবাহনের ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বাস, মাইক্রোবাস এমনকি রিকশার ক্ষেত্রেও নেওয়া হচ্ছে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া। যাত্রীরা বলছেন, "ভাড়া চাইলেই ২-৩ গুণ বেশি নিচ্ছে। না দিলে উঠতে দিচ্ছে না।"
ট্রেন ও লঞ্চে কিছুটা স্বস্তি, তবুও অতিরিক্ত যাত্রীচাপ: রেলস্টেশনে ট্রেন চললেও অধিকাংশ সময় দেখা যাচ্ছে সেগুলো সময়মতো ছাড়ছে না। তবু বাসের তুলনায় ট্রেনে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও ভিড় সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। লঞ্চে যাতায়াতকারীরাও বলেছেন, "যাত্রীচাপ অনেক বেশি। অনেকে দাঁড়িয়ে বা ছাদে বসে যাচ্ছে। কিন্তু অন্য কোনও উপায় নেই।"
নিরাপদ যাত্রার আহ্বান: সরকার, প্রশাসন এবং বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থা যাত্রীদের নিরাপদে ঘরে ফেরার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঈদ মানে উৎসব, ঈদ মানে পরিবার, প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো। কিন্তু সেই আনন্দের পথ যেন হয় না শোকের। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর আহ্বান—নিরাপদ, শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং হয়রানিমুক্ত যাত্রা নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। পাশাপাশি ঘরমুখো মানুষের প্রতিও অনুরোধ—ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা এড়িয়ে চলুন, যাতে ঈদের আনন্দ রঙিন হয়ে ওঠে, নিস্তব্ধ না হয় কোনো অশ্রুতে।
এন কে/বিএইচ
