ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি: মহাখালী থেকে গাজীপুরে চার ঘণ্টা


পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের ঢল শুরু হয়েছে রাজধানীজুড়ে। তবে বাসে ঈদ যাত্রা হয়ে উঠেছে চরম দুর্ভোগের আরেক নাম। রাজধানীর মহাখালী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত স্বাভাবিক সময়ে যেখানে এক থেকে দেড় ঘণ্টায় পৌঁছানো সম্ভব, সেখানে মঙ্গলবার (৪ জুন) সময় লেগেছে প্রায় চার ঘণ্টা।
এমন ভোগান্তির পেছনে রয়েছে ঢাকার বাইরে যাওয়ার প্রবল চাপ, মহাসড়কে যানজট, বিভিন্ন স্থানে খোঁড়াখুঁড়ি, এলোমেলো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও অতিরিক্ত গাড়ির সংখ্যা। যাত্রীদের অভিযোগ, যানজটের কারণে গন্তব্যে পৌঁছাতে অতিরিক্ত সময় লাগার পাশাপাশি মানসিক ও শারীরিক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
যাত্রীদের দুর্ভোগ: সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। অনেকে সকাল ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও বেলা ১১টার আগে বাসে উঠতে পারেননি। এর মধ্যে অনেকেই নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। যাত্রীদের অভিযোগ, নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে বাস ছাড়ছে, আবার বিভিন্ন স্থানে বারবার থেমে থেমে চলতে হচ্ছে।
মিরপুর থেকে আসা যাত্রী রাকিব হাসান বলেন, “সকাল ৭টায় বাসে উঠেছি, কিন্তু গাজীপুর পেরুতে পেরেছি ১১টার পরে। এত যানজট, মাঝে মাঝে বাস একেবারেই থেমে থাকছে।”
চালক ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য: গণপরিবহনের চালক ও হেলপাররা জানান, যানজটই মূল সমস্যা। মহাখালী থেকে বের হতে সময় লাগছে প্রায় এক ঘণ্টা, আর টঙ্গী ও গাজীপুর চৌরাস্তার দিকে যানজট আরও ভয়াবহ। অনেক রুটে রাস্তার সংস্কার কাজ চলমান থাকায় এবং পুলিশের পর্যাপ্ত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
একজন পরিবহন মালিক জানান, “ঈদের আগে এমন চাপ আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, কিন্তু রাস্তার যে অবস্থা, তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।”
ট্রাফিক বিভাগের ব্যাখ্যা: ঢাকা মহানগর ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদের সময় স্বাভাবিকের তুলনায় যানবাহনের চাপ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। এছাড়া অনেক যাত্রী ব্যক্তিগত গাড়ি, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ব্যবহার করায় সড়কে যানবাহনের ঘনত্ব বেড়ে গেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সড়কগুলো সচল রাখতে। অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। তবে গাজীপুর পর্যন্ত কয়েকটি পয়েন্টে ফ্লাইওভার ও রাস্তা সংস্কারের কারণে কিছুটা ধীরগতি হচ্ছে, যেটা এড়ানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।”
বিশেষজ্ঞদের মতামত: সড়ক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদ যাত্রার সময় আগেভাগে পরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং বিকল্প রুট নিশ্চিত না হলে প্রতিবছরই এমন দুর্ভোগ ঘটবে। তারা মনে করেন, গাজীপুর রুটে সুনির্দিষ্ট ট্রাফিক পরিকল্পনা ও প্রযুক্তিনির্ভর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই।
সাধারণ মানুষে ভাবনা: ঈদ আনন্দের যাত্রায় যানজট যেন প্রতি বছরের নিয়মিত সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ছাড়ার মুখগুলোয় যাত্রীদের এই দুর্ভোগ ঈদের আনন্দে ছায়া ফেলছে। সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী, আগামী কয়েকদিনে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে। তবে যাত্রীদের দাবি, সড়ক ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া এ দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ সম্ভব নয়।
এন কে/বিএইচ
