বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

এবার কোরবানির সংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কা জনমনে

এবার কোরবানির সংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কা জনমনে
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

চলতি বছর দেশে ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর বিক্রির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন খামারি, পশু ব্যবসায়ী, এবং অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। সাধারণ জনগণের মধ্যেও এ বিষয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

অর্থনৈতিক চাপের প্রভাব: বর্তমানে দেশের মানুষের আয়-ব্যয়ের ভারসাম্যে বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, চলমান মুদ্রাস্ফীতি, এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি — সব মিলিয়ে অনেক পরিবার কোরবানির খরচ বহন করতে হিমশিম খাচ্ছে। মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই জানিয়েছেন, এ বছর তারা কোরবানিতে অংশ নিতে পারবেন না, অথবা গতবারের তুলনায় ছোট পশু কোরবানি দিবেন।

খামারিদের হতাশা: দেশজুড়ে হাজার হাজার গবাদিপশুর খামার রয়েছে, যেগুলো ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বছরে একটি বড় আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত থাকে। কিন্তু এ বছর বহু খামারিরা আগাম পশু বিক্রির তেমন সাড়া পাচ্ছেন না। কুমিল্লা, নরসিংদী, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলার খামারিরা বলছেন, “এই সময় পর্যন্ত সাধারণত যেভাবে অর্ডার বা খোঁজখবর আসে, এবার সেটা নেই। লোকজন দ্বিধায় আছে—কোরবানি দেবে কিনা।”

পরিবহন ও নিরাপত্তা সংকট: সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনা, পশুবাহী ট্রাক উল্টে গরু মারা যাওয়ার ঘটনা, এবং নদীপথে ছিনতাইয়ের ঝুঁকি ব্যবসায়ীদের নিরুৎসাহিত করছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকাসহ শহরে গরু আনা বর্তমানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে পশু সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে, যার প্রভাব পড়বে কোরবানির বাজারে।

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন: একাংশের মতে, সামাজিকভাবে কোরবানিকে ঘিরে যে প্রতিযোগিতা বা প্রচার-প্রচারণা দেখা যেত, তা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। মহামারির পর থেকে অনেকে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা ওয়াকফ বোর্ড, এতিমখানা, কিংবা মসজিদের মাধ্যমে কোরবানি দেওয়ার পথে ঝুঁকছেন। এতে ব্যক্তি পর্যায়ে পশু কেনার সংখ্যা কমে আসতে পারে।

জুলাই আন্দোলনে সরকার পরিবর্তন হতে পারে অন্যতম কারণ! গেল বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের পর থেকে দেশে এক শ্রেণীর মানুষ কোনঠাসা হয়ে পড়ছে। তাই সামাজিক কোনো কার্যক্রম তারা নিয়মিতভাবে পালন করতে পারছে না। এবারের কোরবানিতে তার প্রভাব কোরবানির পশু বেচা বিক্রিতে ব্যাপক হারে পর্বে বলে ধারণা করছেন সাধারণ মানুষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি নতুন কাগজকে বলেন, বিগত কোরবানিতে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই একাধিক গরু কোরবানি দিয়েছেন। এবার তারা হয় দেশ ছাড়া, না হয় পলাতক। তাই কোরবানির বেচা বিক্রিতে এর প্রভাব পড়বে।

সরকারের অবস্থান ও প্রস্তুতি: সরকারি পর্যায় থেকে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো পূর্বাভাস না এলেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো পশু পরিবহন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং কোরবানির বাজার পর্যবেক্ষণের কাজ শুরু করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মানুষের কেনার ক্ষমতা না বাড়ালে বা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও বাজার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে চাহিদা অনুযায়ী কোরবানি হবে না।

উল্লেখ্য, দেশে কোরবানির ঈদ শুধু ধর্মীয় নয়, একটি অর্থনৈতিক উৎসবও বটে। লাখো কৃষক, খামারি, শ্রমিক ও পরিবহনকর্মীর জীবিকা এ উৎসবের সঙ্গে জড়িত। তাই কোরবানির সংখ্যা কমে যাওয়া মানে শুধু ধর্মীয় রীতি পালনে ভাটা নয়, এর অর্থনৈতিক অভিঘাতও বিশাল। সরকার, বেসরকারি খাত এবং সাধারণ জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এ সংকট কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে।


এন কে/বিএইচ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আরও পড়ুন