বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj
অনুসন্ধান-২; বিএফআইইউর সাবেক প্রধানের শেল্টারের ‘ক্যাশিয়ার’ দেলোয়ার হোসেন

দুর্নীতি ও অর্থপাচারের জালঘরে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে বহাল

দুর্নীতি ও অর্থপাচারের জালঘরে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে বহাল
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক পিএলসির প্রধান কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থপাচার ও নিয়োগের সময় এনওসি ছাড়াই যোগদানের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের শেল্টারে ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে কাজ করা দেলোয়ার, টানা ৬ বছর এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির উত্তরা শাখায় ম্যানেজার হিসেবে থাকাকালে কমিশনের বিনিময়ে কোটি কোটি টাকা লোন বিতরণ করেন, যা বর্তমানে খেলাপী ঋণের তালিকায় রয়েছে।

মো. দেলোয়ার হোসেন এনওসি ছাড়াই বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে যোগদান করেন, যা ব্যাংকিং নিয়ম ভঙ্গ। যোগদানের পেছনে তিনি ক্ষমতাশালী ব্যবসায়ী এস আলমের প্রভাব ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

দেলোয়ারের বিরুদ্ধে রয়েছে বেশ কয়েকটি দুর্বল কোম্পানিকে বিপুল পরিমাণ লোন দেওয়ার অভিযোগ, যেগুলো পরবর্তীতে খেলাপী ঋণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এই লোন প্রদানে কমিশন গ্রহণের মাধ্যমে তিনি ব্যাংকের অর্থকে দুর্নীতির পথের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।

অর্থপাচার চক্রে দেলোয়ারের সরাসরি সম্পৃক্ততার তথ্যও পাওয়া গেছে। তিনি মাসুদ বিশ্বাসের সঙ্গে মিলে পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে ছাড়িয়ে দেন। মাসুদ বিশ্বাস তার শেল্টারের ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে দেলোয়ারকে ব্যবহার করতেন; দেলোয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আটকে থাকা অর্থ মাসুদ বিশ্বাসের কাছে নিয়ে যেতেন, যেখানে ঘুষের বিনিময়ে টাকা মুক্তি পেত।

সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাসুদ বিশ্বাস বিএফআইইউ প্রধান থাকাকালীন বিভিন্ন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের রক্ষা করতে ঘুষ নিতেন, যেখানে দেলোয়ার তার অন্যতম বিশ্বস্ত সহযোগী ছিলেন।

এই দুর্নীতির জালে জড়িত থাকার পরও দেলোয়ার এখনো বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন এবং তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও গোপন সম্পদ সঞ্চয় করেছেন।

বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারেনি। তবে তারা অনেক আগেই থেকেই দেলোয়ারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের একটি সূত্র। এদিকে ব্যাংকিং শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করতে পারে বলে জানা গেছে।

একজন প্রখ্যাত ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদ বলেন, “যে কোনো ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে এনওসি ছাড়া উচ্চপদে যোগদান একটি নিয়মবিরুদ্ধ ও উদ্বেগজনক বিষয়। এটি ব্যাংকিং সেক্টরের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করে। দুর্নীতি ও লোনখেলাপি ক্ষেত্রে এমন নিয়োগ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা উচিত।”

ব্যাংকিং খাতের আরেক অভিজ্ঞ মনে করেন, “দুর্বল কোম্পানিকে কমিশন দিয়ে কোটি কোটি টাকা লোন দেয়া এবং পরবর্তীতে সেটি খেলাপি হওয়া, ব্যাংকের অর্থ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এরকম ঘটনা ব্যাংকের সার্বিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলে। দুর্নীতি ও অর্থপাচারের জালিয়াতে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।”

অর্থনীতি ও ব্যাংকিং গবেষক ডা. সুমনা হক বলেন, “এ ধরনের ঘটনায় ব্যাংকিং সেক্টরের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আইনি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এমন অনিয়ম কমে আসে।”

আরেক অর্থনীতিবিদ বলেন, অর্থনৈতিক দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যক্তিগত সুবিধা অর্জন, ব্যাংকিং সেক্টরের স্বচ্ছতা ও দক্ষতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। দেলোয়ার হোসেন ও মাসুদ বিশ্বাসের মতো ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ড ব্যাংকিং খাতের আস্থা নষ্ট করছে। তার বিষয়ে জোরালো তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োজন।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আরও পড়ুন