শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • নতুন সংবিধানে অবশ্যই জুলাই সনদ সংযুক্ত করতে হবে: নাহিদ ইসলাম সরকারি চাকরি অধ্যাদেশে বড় পরিবর্তন: অপসারণ নয়, বাধ্যতামূলক অবসর খুলনার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২০৪, কেউ মারা যাননি ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ পাস, বড় জয় ট্রাম্পের অতীতে সনাতনধর্মালম্বী ভাইবোনেরা অনেক নির্যাতিত হয়েছে, কোন বিচার পায়নি : নাহিদ ইসলাম ব্যক্তিগত কারণে ছুটিতে সিমন্স, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে থাকছেন না এখন দেশের এই পরিস্থিতিতে কিসের নির্বাচন? - ডা. শফিকুর রহমান কুমিল্লার মিষ্টি মারিয়ার বিতর্কিত উত্থান: কোটি টাকার সম্পদের মালিক! এক লাখের বেশি শিক্ষক নিয়োগে আবেদন প্রক্রিয়া ফের শুরু
  • পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে গড়ে তোলা ফটোগ্রাফির জগৎ

    পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে গড়ে তোলা ফটোগ্রাফির জগৎ
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা, ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট আর পরীক্ষার চাপে যেখানে অধিকাংশ শিক্ষার্থী হাঁপিয়ে ওঠে, সেখানে এক তরুণ রয়েছেন যিনি এক হাতে বই, আর অন্য হাতে ক্যামেরা ধরে রেখেছেন বলা যায়, তিনি হচ্ছেন সাব্বির হাসান। কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হয়েও ফটোগ্রাফির জগতে নিজের এক স্বতন্ত্র পরিচয় গড়েছেন। ক্যামেরার লেন্সে জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলো ধরে রাখতে ভালোবাসেন তিনি। ক্যাম্পাসের উৎসব, সেমিনার কিংবা ভ্রমণ সব জায়গায় সাব্বিরের চোখে ধরা পড়ে রঙিন গল্পের একেকটি ফ্রেম।  

    শৈশব থেকে ফটোগ্রাফির টান

    মাদারীপুর সদর উপজেলার নতুন রাজারহাট গ্রামে জন্ম সাব্বিরের। তবে বাবা মা ঢাকায় থাকতেন বলে শৈশব থেকেই তিনি ঢাকাতে বড় হয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই তার চলাফেরায় ছিল ভিন্নতা, যা নিয়ে পরিবার কখনো বাধা দেয়নি। হাইস্কুলে পড়ার সময় থেকেই তার মনে জন্ম নেয় ফটোগ্রাফির নেশা। সময় পেলেই মোবাইল দিয়ে ছবি তুলতেন এবং সেগুলো এডিট করে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পাঠাতেন।  

    অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল পরিবারে জন্ম নিয়েও সাব্বির কখনো নিজের জন্য ক্যামেরা কিনতে পারেননি এবং পরিবার থেকে কিনে দেয়নি কিন্তু তা তাকে দমাতে পারেনি। ফোন দিয়েই ছবি তোলা চালিয়ে গেছেন এবং কম্পিউটারে এডিট করে ছবিগুলোকে করে তুলেছেন প্রাণবন্ত।  

    স্বপ্নের পথে অদম্য যাত্রা 

    ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ছুটে চলেন নিজেদের লক্ষ্যের পেছনে। সেই ভিড়ের মাঝেই ক্যামেরা কাঁধে হেঁটে চলেন সাব্বির আহমেদ। বয়স মাত্র ২১, পড়াশোনা করছেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে। তবে তার পরিচয় শুধু শিক্ষার্থীতেই সীমাবদ্ধ নয় ক্যাম্পাস ফটোগ্রাফির জগতে তিনি এক অনন্য।  

    ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান আর প্রকৃতির রহস্য তাকে মুগ্ধ করত। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ফটোগ্রাফির প্রতি তার গভীর আগ্রহ জন্মায়। কীভাবে আলো আর শ্যাডো ছবিকে প্রাণবন্ত করে, কোন অ্যাঙ্গেলে ক্যামেরা ধরলে মুহূর্তটি সবচেয়ে সুন্দরভাবে ধরা পড়ে এসব জানার অদম্য কৌতূহল কাজ করত তার মনে। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না নিয়ে ইউটিউব, ওয়েবসাইট আর টিউটোরিয়াল দেখে শিখেছেন ফটোগ্রাফি। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে বন্ধুর ক্যামেরা ধার করে, নিজের সঞ্চয় জমিয়ে এভাবেই এগিয়েছেন তিনি।  

    সাফল্যের ধাপে ধাপে 

    এসএসসি পাশ করার পরই প্রথম রিমোট এডিটিংয়ের কাজ পান সাব্বির। সেখান থেকেই শুরু হয় তার পেশাদার ফটোগ্রাফির যাত্রা। আজ তার সংগ্রহে রয়েছে নিজস্ব ক্যামেরা, লেন্স এবং অসংখ্য অভিজ্ঞতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব বড় অনুষ্ঠানের ফটোগ্রাফি প্রায় তার হাতেই সম্পন্ন হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি ফটোগ্রাফি থেকে আয় করে নিজের খরচ চালান, এমনকি সেমিস্টার ফি জোগাড় করেন।  

    সাব্বির বলেন "গত সেমিস্টারে পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাত্র ছয়দিন আগে পাহাড়ি এলাকায় গিয়ে একটা বড় প্রজেক্ট শেষ করে ফিরেছি। ক্লান্তি নেই, আনন্দটাই বড়।

    শুরুতে পরিবার পুরোপুরি সমর্থন না দিলেও এখন তার কাজের মূল্য সবাই বুঝতে পেরেছেন। বন্ধু, শিক্ষক সবাই তার পাশে। স্কুল, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গায় তিনি পেয়েছেন সহযোগিতা। আজ তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত ফটোগ্রাফার। তার ক্যামেরায় বন্দি হয় মানুষের হাসি, কান্না ও জীবনের নানান অমূল্য মুহূর্ত।  


    ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

    সাব্বির বলেন, আমার লক্ষ্য এখন পড়াশোনা শেষ করে একটি ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি এজেন্সি তৈরি করা। পাশাপাশি একাডেমিক বিষয়ে রিমোট জব করে সংসার ও পরিবারের দায়িত্ব নিতে চাই।

    তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন "আমি চাই, আমার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রতিটি ছাত্র কোনো না কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকুক হোক সেটা ফটোগ্রাফি, লেখালেখি বা অন্য কোনো স্কিল। জীবনে বাধা আসবেই কিন্তু সেই বাধা পেরিয়েই সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। 

    সকলের উদ্দেশ্যে

    ভালো ফটোগ্রাফি শুধু ক্যামেরার উপর নির্ভর করে না। ডিভাইস সাহায্য করে ঠিকই, কিন্তু আসল জাদুটা আসে চোখের দেখায় আর মনের ভাবনায়। ছবি তোলে যন্ত্র, কিন্তু গল্পটা বলে মন।

    সফল ফটোগ্রাফির পেছনে দরকার মনোযোগ, ইচ্ছাশক্তি আর ধৈর্য। আলো ঠিকমতো আসবে না, মুহূর্ত ধরা দেবে না যদি মন স্থির না থাকে। একটা ভালো ছবি তোলার জন্য সময় আর সাহস দুটোই লাগে। 

    অনেকে সীমিত যন্ত্রপাতি দিয়ে তুলেন অসাধারণ ছবি কারণ তার চোখে ছিল গল্প দেখার শক্তি, আর মনে ছিল থেমে না যাওয়ার সাহস। ফটোগ্রাফি শেষ পর্যন্ত মনেরই একটা প্রতিফলন। 

    এভাবেই ক্যামেরার চোখে স্বপ্ন বুনে এগিয়ে চলেছেন সাব্বির আহমেদ। প্রতিটি ক্লিকে ধ্বনিত হয় তার স্বপ্নের সুর।


    মোঃ আল শাহারিয়া সুইট
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন