ইরানে সামরিক আগ্রাসন, কী পেল ইসরায়েল?


টানা ১১ দিন ধরে ইরানের ওপর ধারাবাহিক বিমান হামলা চালানোর পর যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেন, “আমাদের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে।” তবে বাস্তব পরিস্থিতি সেই দাবির সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না। মাটিতে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন এক চিত্র—যেখানে হামলার প্রভাব, কৌশলগত অর্জন ও দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিশ্লেষকদের মধ্যে।
ইরানের বিরুদ্ধে টানা ১১ দিন ধরে চালানো বিমান হামলার পর যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, “আমাদের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে।” তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাস্তবতা সেই ঘোষণার সঙ্গে খাপ খায় না।
ঘোষিত ছিল দুটি প্রধান লক্ষ্য
যুদ্ধ শুরুর আগে নেতানিয়াহু ইসরায়েলের দুইটি প্রধান উদ্দেশ্যের কথা জানিয়েছিলেন:
১. ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা
২. দেশটির রাজনৈতিক কাঠামো পাল্টে দেওয়া, অর্থাৎ ‘রেজিম চেঞ্জ’
কিন্তু ১১ দিনের হামলার পরও এই দুই লক্ষ্যই কতটা সফল হয়েছে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি
ইসরায়েল প্রথম লক্ষ্য হিসেবে চেয়েছিল ইরানের পরমাণু অবকাঠামোর ‘ডিক্যাপিটেশন’—অর্থাৎ মূল কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করে দেওয়া। তবে যুদ্ধ শুরুর আগেই ইরান তাদের অন্যতম গোপন ও সুসুরক্ষিত স্থাপনা ফোর্দো থেকে ফিসনযোগ্য পদার্থ সরিয়ে নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই স্থাপনাটি ভূগর্ভস্থ হওয়ায় সেখানকার ক্ষয়ক্ষতি খুবই সীমিত। ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’ (MOP) ব্যবহারে সম্মত করাতে পারলেও, এর বাইরে মার্কিন সামরিক সহযোগিতা ছিল সীমিত।
ফলে এখন পর্যন্ত হামলায় ইরানের পরমাণু সক্ষমতা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়নি। ইরান আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের প্রবেশাধিকার দিচ্ছে না।
সরকার পতনের কৌশল ব্যুমেরাং?
নেতানিয়াহুর দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল ইরানে ‘শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন’। এজন্য ইসরায়েল ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড (IRGC) বাহিনীর শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের টার্গেট করে হত্যা করে। তাদের কৌশল ছিল, নেতৃত্বে আঘাত হানলে সরকার ভেঙে পড়বে।
কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বিশ্লেষকদের মতে, এসব হামলা জাতীয়তাবাদী আবেগকে উসকে দিয়েছে। IRGC বাহিনী ইরানের ভেতরে বিতর্কিত হলেও, বিদেশি হামলার মুখে সাধারণ জনগণ সরকারের পাশেই অবস্থান নিয়েছে। ফলস্বরূপ, সরকার পতনের বদলে শাসনব্যবস্থাই আরও একত্রিত হয়েছে।
সমাপ্তি, কিন্তু উত্তরবিহীন প্রশ্ন
সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর নেতানিয়াহু বললেও যে "লক্ষ্য অর্জিত", বিশ্লেষক মহলে তা নিয়ে বিতর্ক তীব্র হচ্ছে। হামলার ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা কঠিন, রাজনৈতিক কাঠামো অক্ষত এবং পরমাণু কর্মসূচিও বেশিরভাগই কার্যকর রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ইরানের পক্ষ থেকেও জবাবি প্রতিক্রিয়া আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, বিশেষ করে এই ধরনের আক্রমণ তাদের অভ্যন্তরীণ শক্তিকে আরও একত্র করেছে।
