‘সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম’ কোথায়? ইরানের পদক্ষেপ নিয়ে ধোঁয়াশা যুক্তরাষ্ট্রে


যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলার আগে ইরান তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ও সংবেদনশীল পরমাণু উপকরণ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছিল কি না—সে বিষয়ে এখনও পরিষ্কার কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই বলে জানিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন সিনেটর মার্কওয়েইন মুলিন বলেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তারা বিশ্বাস করেন, ইরান ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনাটি থেকে এখনও তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়ে নেয়নি।
সিনেটরের বক্তব্য অনুযায়ী, ইরান হয়তো পারমাণবিক কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখনও ঝুঁকির মধ্যেই রেখেছে, যা ভবিষ্যৎ হামলার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো বিবৃতি এখনো দেওয়া হয়নি। গোয়েন্দা মহলও তাদের মূল্যায়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায়নি বলে জানা গেছে।
এই অবস্থাকে ঘিরে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে পরমাণু নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ যখন চরমে।
তবে, ১৩ জুন ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বরাবর এক চিঠিতে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ইরান পারমাণবিক সরঞ্জাম রক্ষায় ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ গ্রহণ করবে।
এই হুঁশিয়ারির পরই স্যাটেলাইট চিত্র সরবরাহকারী ম্যাক্সার টেকনোলজিসের তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার দুদিন আগে ফোরদো প্লান্টগামী ১৬টি কার্গো ট্রাক দেখা যায়, যেগুলো হামলার এক দিন আগে স্থান ত্যাগ করে।
আইএইএর মহাপরিচালক গ্রোসি সিএনএনকে জানিয়েছেন, সংস্থার পরিদর্শকরা সর্বশেষ ১০ জুন ইরানের ইউরেনিয়াম মজুদ যাচাই করতে পেরেছিলেন। এর পর থেকে এর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই।
পরমাণু বিশেষজ্ঞ কেলসি ড্যাভেনপোর্ট জানিয়েছেন, ইরানের ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ‘স্কুবা ট্যাংক’ আকারের মোবাইল ক্যানিস্টারে সংরক্ষণ করা হয়। তার ভাষায়, ‘এই ক্যানিস্টারগুলো যেকোনো জায়গায় থাকতে পারে।
ড্যাভেনপোর্ট আরো বলেন, যদি সত্যিই এই ইউরেনিয়াম সরানো হয়ে থাকে, তবে তা খুঁজে বের করা অত্যন্ত কঠিন হবে। এসব ক্যানিস্টার সামরিক হামলা চালানো প্রায় অসম্ভব এমন দুর্গম ও নিরাপদ স্থানে সরানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলেও ধারণা করেন তিনি।
এদিকে, গ্রোসি বহু দিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন যে গোয়েন্দাদের কাছে ইরানের সব সেন্ট্রিফিউজের (ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ যন্ত্র) অবস্থান নিশ্চিত নয়। মার্কিন কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন, ইরানের সব পারমাণবিক উপকরণের অবস্থান তাদের জানা নেই।
পারমাণবিক ঝুঁকি পর্যবেক্ষণকারী এনজিও ‘নিউক্লিয়ার থ্রেট ইনিশিয়েটিভ’-এর সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা এরিক ব্রুয়ার এনবিসি নিউজকে বলেন, ‘আইএইএর নজরদারির বাইরে ইরান গত কয়েক বছর ধরে উন্নতমানের সেন্ট্রিফিউজ মজুদ করে রেখেছে।’
পরমাণু বিশেষজ্ঞ ড্যাভেনপোর্ট আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ফলে ইরান হয়তো এখন সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম এমন স্থানে সরিয়ে নিয়েছে, যেখানে পরমাণু অস্ত্র তৈরি শুরু করতে পারবে দেশটি।
এই পরমাণু বিশেষজ্ঞের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এখন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পক্ষে ইরানের আরো বেশি আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
