কাস্পিয়ান সাগরের সংকট, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার সময় এখনই


কাস্পিয়ান সাগর একসময় ছিল জীবন ও জীবিকার প্রতীক—তীরবর্তী মানুষদের সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস, ও অর্থনীতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত একটি জলাশয়। আজ সেটি অস্তিত্ব সংকটে। কেবল বৈজ্ঞানিক গবেষণা নয়, খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে এর ভৌগোলিক ও পরিবেশগত ক্ষয়। শিশু বয়সে যে কাস্পিয়ান উপহার দিয়েছিল স্বাদ ও জীবনের শিক্ষা, সেই সাগর আজ পরিণত বয়সে একজন বাস্তুতন্ত্রবিদ আদিলবেক কোজিবাকভের চোখে স্মৃতির ছবি মাত্র।
এই সংকট একমাত্র জলবায়ু পরিবর্তনের ফল নয়। মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ড—বিশেষ করে ভলগা নদীর ওপর নির্মিত বাঁধ, অপরিকল্পিত পানি ব্যবহার, অতিরিক্ত মাছ ধরা ও স্টারজন মাছের আবাসস্থলের ধ্বংস—সব মিলিয়ে একটি বাস্তুব্যবস্থাকে প্রায় ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে। রাশিয়া, কাজাখস্তান, ইরান, তুর্কমেনিস্তান ও আজারবাইজানের মাঝে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্থলবেষ্টিত জলাশয় এখন হুমকির মুখে।
আরেকটি গভীর সমস্যা হলো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব। কাস্পিয়ান তীরবর্তী দেশগুলো বিশেষ করে কাজাখস্তান, আন্তর্জাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানির সঙ্গে এমন সব গোপন চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে, যার পরিবেশগত প্রভাব জনসাধারণের আড়ালে রাখা হয়েছে। আইনজীবী ভাদিম নি-এর মামলা খারিজ হয়ে যাওয়া এই ব্যবস্থার দুর্বলতা ও অবহেলার দৃষ্টান্ত।
তবে হাল ছেড়ে দেওয়া সমাধান নয়। কোজিবাকভের মতো নাগরিকেরা নিচুতলার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সচেতনতা গড়ার চেষ্টা করছেন। এই উদ্যোগগুলো সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, পরিবেশ রক্ষার নীতি গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। কারণ কাস্পিয়ান কেবল একটি সাগর নয়, এটি একটি অঞ্চল, একটি সংস্কৃতি এবং একটি প্রজন্মের ভবিষ্যৎ।
আমরা যদি কাস্পিয়ানকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হই, তবে তা শুধু একটি সাগরের নয়, মানব সভ্যতারই এক বিরাট পরাজয় হবে। এখনই সময়—প্রকৃতির এই হাহাকারে সাড়া দেয়ার, নীতিনির্ধারকদের জবাবদিহির আওতায় আনার এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিত করার। কাস্পিয়ান সাগরকে বাঁচানো মানে প্রকৃতিকে, জীবনকে ও আমাদের নিজের অস্তিত্বকে রক্ষা করা।
