বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj
ঈদযাত্রায় সড়কে রক্তপাত:

বাড়ছে দুর্ঘটনা, কমছে জবাবদিহিতা

বাড়ছে দুর্ঘটনা, কমছে জবাবদিহিতা
প্রতীকী ছবি
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

ঈদের আনন্দ ঘিরে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর প্রত্যাশা থাকলেও, দেশের হাজারো মানুষের যাত্রা শেষ হয়েছে কান্না, শোক আর লাশের মিছিলে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, ২০২৫ সালের ঈদুল আজহা উপলক্ষে সড়ক দুর্ঘটনার হার আগের বছরের তুলনায় ২২.৬৫ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে নিহতের সংখ্যা ১৬.০৭ শতাংশ এবং আহত ৫৫.১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি ভয়াবহ বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। যেখানে নিরাপদ সড়কের স্বপ্ন আজও অধরা।

ঈদের আগে-পরে ১৫ দিনের (৩১ মে - ১৪ জুন) পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মোট ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত ও ১১৮২ জন আহত হয়েছেন। প্রতিটি সংখ্যা একটি পরিবারের ভেঙে পড়া, একটি ভবিষ্যতের শেষ হয়ে যাওয়া। অথচ আগের বছর (২০২৪ সালে) একই সময়ে দুর্ঘটনা হয়েছিল ৩০৯টি, নিহত হয়েছিলেন ৩৩৬ জন এবং আহত ৭৬২ জন। এই তুলনামূলক বৃদ্ধি আমাদের ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় কি?

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনার ৩৭.২০ শতাংশ ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে, ২৮.২৩ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং ২৮.৪৯ শতাংশ ফিডার রোডে। এর মানে, দুর্ঘটনার ঝুঁকি শুধু প্রধান সড়কে নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ সড়ক ব্যবস্থাতেও বিস্তৃত। প্রশ্ন জাগে, এত উন্নয়নের গল্প, ফ্লাইওভার, সড়ক সম্প্রসারণ—সবই কি শুধুই কাগজে-কলমে?

দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, যাত্রীদের অসচেতনতা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রীবোঝাই যানবাহন, ঈদকেন্দ্রিক যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত প্রবাহ।

প্রতিবছর ঈদে দুর্ঘটনা বাড়বে এমনটা এখন যেন মেনে নেওয়া রীতিতে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সময়মতো প্রস্তুতি না নেওয়া, চেকপোস্টে দুর্নীতি ও শিথিল তদারকি, নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তির অভাব ইত্যাদি কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।

নিরাপদ সড়ক শুধু একটি দাবি নয়, এটি মানুষের মৌলিক অধিকার। এই অধিকারে প্রতিনিয়ত রক্ত ঝরছে। এর থেকে উত্তরণের জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ জরুরি। যেমন, সড়কে ডিজিটাল নজরদারি বৃদ্ধি, অদক্ষ চালকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক, যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট যাচাইয়ে কড়া তদারকি, ঈদের মত বিশেষ সময়গুলোতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা ও আলাদা ফোর্স নিয়োগ, সচেতনতামূলক প্রচার ও যাত্রীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

ঈদ যেমন আনন্দের, তেমনি তা যেন দুঃস্বপ্নে পরিণত না হয়, সেটা নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। শুধু সংবাদ সম্মেলন নয়, চাই কার্যকর পদক্ষেপ, জবাবদিহিতা ও বাস্তব পরিবর্তন। সড়কে যদি নিরাপত্তা না থাকে, তবে উন্নয়নের সব গল্পই নিঃসন্দেহে অপূর্ণ থেকে যাবে।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ