বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

আইনের শাসনে মব জাস্টিসের ঠাঁই নেই

আইনের শাসনে মব জাস্টিসের ঠাঁই নেই
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

ঢাকা মহানগরীতে "মব জাস্টিস" বা গণপিটুনির ঘটনা নতুন কিছু নয়। নানা সময়েই দেখা গেছে, জনরোষের শিকার হয়ে নির্দোষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন কিংবা গুরুতর আহত হয়েছেন। এই সমাজিক অসংযম এবং আইনবিরুদ্ধ প্রবণতা এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়ে গেছে। তবে আশার কথা, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সদিচ্ছা ও অবস্থান এই প্রসঙ্গে নতুন এক আশার আলো দেখিয়েছে।

গতকাল (২৪ জুন) ডিএমপি ও জাইকার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, মব জাস্টিস ঠেকাতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটি নিঃসন্দেহে একটি যুগোপযোগী ও শক্ত বার্তা, যা আমাদের দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হতে পারে।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নূরুল হুদার সঙ্গে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মব ঘটনার প্রেক্ষাপটে পুলিশ প্রধানের এই বক্তব্য আরও তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং মামলাও নেওয়া হয়েছে। এমনকি আগের কিছু ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে পুলিশ সদস্যদেরও শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, “আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারো নেই” এ কথাটি শুধু পুলিশ সদস্যদের জন্য নয়, বরং সমগ্র সমাজের জন্যই প্রযোজ্য। এ ধরনের আইনবহির্ভূত কাজ শুধু নিরপরাধদের ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং দেশের বিচার ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।

ডিএমপি কমিশনারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য ছিল “রাতে বাড়িতে আসামি আছে জানলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাড়িতে হানা দেবে না, দরজা ভাঙবে না।” এই বক্তব্যে সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষার প্রতিশ্রুতি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে, যা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় অপরিহার্য।

চাঁদাবাজি রোধেও ডিএমপি যে তৎপর, সে বার্তাও স্পষ্ট হয়েছে আদাবর থানার সাম্প্রতিক একটি মামলার উল্লেখে। জনসচেতনতা ও দৃঢ় প্রশাসনিক অবস্থান, এই দুটি অস্ত্রের সমন্বয়েই কেবল মব জাস্টিস, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অসামাজিক কর্মকাণ্ড ঠেকানো সম্ভব।

আমরা মনে করি, ডিএমপির এই সাহসী ও স্পষ্ট বার্তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব সংস্থার জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তবে এই বার্তা শুধু ঘোষণায় সীমাবদ্ধ না থেকে নিয়মিত তদারকি ও দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হওয়া জরুরি।

মব জাস্টিসের মতো হিংস্র প্রবণতা দমন করতে হলে শুধু আইন প্রয়োগ করলেই চলবে না, দরকার সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, নাগরিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা এবং শিক্ষা ও প্রচারের মাধ্যমে সহনশীলতা তৈরি করা।

একটি সভ্য, নিরাপদ ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের সবারই দায়িত্ব, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কেবল ন্যায্য পথে প্রতিক্রিয়া জানানো।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ