তুরস্ক চালু করলো প্রথম হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘টাইফুন ব্লক-৪’


হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হলো এমন ক্ষেপণাস্ত্র যা শব্দের গতি থেকে পাঁচ গুণ বা তার বেশি গতিতে ছুটে চলে। প্রথমবারের মতো তুরস্ক তাদের নিজস্ব হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করলো। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) আইডিইএফ ২০২৫ আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা মেলায় ‘টাইফুন ব্লক-৪’ নামের এই ক্ষেপণাস্ত্রটি পরিচিত করানো হয়। ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে দেশের প্রথম হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে ‘টাইফুন ব্লক-৪’ আত্মপ্রকাশ করেছে।
তুরস্কের তৈরি দীর্ঘ পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘টাইফুন’ এর হাইপারসনিক সংস্করণটি ‘টাইফুন ব্লক-৪’ নামে পরিচিত। প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান রোকেটসানের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘টাইফুন ব্লক-৪’ তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে।
৭ টনেরও বেশি ওজনের টাইফুনের এই নতুন সংস্করণের বহুমুখী ওয়ারহেডসহ দূর থেকে অসংখ্য কৌশলগত লক্ষ্যবস্তু, যেমন- বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, সামরিক হ্যাঙ্গার এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করতে সক্ষম।
আকাতা ক্যাপসুলসহ আতমাকা ক্ষেপণাস্ত্রটি বর্তমানে তুর্কি সশস্ত্র বাহিনীর তালিকায় থাকা জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের সাবমেরিন-লঞ্চ করা সংস্করণ, যার পাল্লা ২৫০ কিলোমিটার (১৫৫ মাইল)। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত, আকাতা ২৫০ কিলোমিটারেরও বেশি পাল্লা এবং একটি উচ্চ-বিস্ফোরক ফ্র্যাগমেন্টেশন ওয়ারহেড দিয়ে ব্লু হোমল্যান্ডের প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করবে।
গোকবোরা ভিজ্যুয়াল রেঞ্জের বাইরে এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ১০০ নটিক্যাল মাইলের (১১৫ মাইল) এবং এটি মানববাহী এবং মনুষ্যবিহীন যুদ্ধ বিমান প্ল্যাটফর্মে শত্রু লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে।
উচ্চ-গতির বহুমুখী লোটারিং যুদ্ধাস্ত্র, এরেন, সশস্ত্র ইউএভি, হেলিকপ্টার, স্থল যান, স্থল-ভিত্তিক সিস্টেম এবং নৌ প্ল্যাটফর্ম থেকে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে কম গতির বায়ুবাহিত ইউনিট, সাঁজোয়া এবং নিরস্ত্র স্থল লক্ষ্যবস্তু এবং কর্মী-বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে এই নতুন সমরাস্ত্রটি। রোকেটসানের মতে, এর উচ্চতর নির্দেশিকা ক্ষমতা, দীর্ঘ সহনশীলতা এবং ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি পরিসরের সক্ষমতা অভিযানের একটি উল্লেখযোগ্য চাহিদা পূরণ করবে।
প্রতিরক্ষা জায়ান্টের সিইও মুরাত ইকিনসি বলেছেন, ‘আজ আমাদের কোম্পানি রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র এবং গোলাবারুদ প্রযুক্তিতে একটি বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ড। গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তির পথিকৃৎ হিসেবে কাজ করে চলেছে এই কোম্পানি। তুর্কি সশস্ত্র বাহিনীর বিকাশকারী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে আমেরিকা থেকে ইউরোপ, এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত বিশ্বের অনেক অঞ্চলে রপ্তানির মাধ্যমে আমাদের দেশকে কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক শক্তি প্রদান করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এসব প্রযুক্তিগত উন্নয়ন।’
মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ছয় দিনব্যাপী প্রতিরক্ষা মেলা ইস্তাম্বুল ফেয়ার সেন্টার, আতাতুর্ক বিমানবন্দর, ডব্লিউওডব্লিউ হোটেল এবং আতাকয় মেরিনায় একযোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানটি ৯০০টিরও বেশি দেশীয় এবং ৪০০টি বিদেশি প্রতিরক্ষা সংস্থা আয়োজন করছে।
এর আগে মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে শুধুমাত্র ইরান ও পাকিস্তানের দ্রুত গতির ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে সক্ষমতা রয়েছে বলে মনে করা হতো। এবার এই তালিকায় যুক্ত হলো তুরস্কের নাম।
