নদী, প্রকৃতি ও ইতিহাসে ঘেরা এক অপার সম্ভার
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি দ্বীপ জেলা ভোলা, যার চারপাশ ঘেরা মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর নীল জলরাশিতে। প্রকৃতি, নদী, ইতিহাস ও সংস্কৃতির অপূর্ব সংমিশ্রণে ভোলা হয়ে উঠেছে পর্যটকদের জন্য এক সম্ভাবনাময় গন্তব্য।
১. চর কুকরি-মুকরি:
ভোলার সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটন স্পট ‘চর কুকরি-মুকরি’। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত এই চরের বৈচিত্র্যময় জীববৈচিত্র্য ও মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। শীতকালে অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখর থাকে চরটি। এখানে হরিণ, বানর, নানা প্রজাতির পাখি ও কাঁকড়ার দেখা মেলে। চর কুকরি-মুকরিকে দেশের অন্যতম ‘ইকো ট্যুরিজম’ স্পট বলা হয়ে থাকে।
২. তেঁতুলিয়া নদীর পাড়:
তেঁতুলিয়া নদীর পাড়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য ভোলার অন্যতম আকর্ষণ। অনেক পর্যটক শুধু এই দৃশ্য দেখার জন্যই ভোলার লঞ্চঘাট কিংবা ভেদুরিয়া ঘাটে সময় কাটান। নদীর বুক চিরে ছোট ছোট নৌকা ও ট্রলার ভেসে বেড়ায়, যা এই দৃশ্যকে আরও রোমাঞ্চকর করে তোলে।
৩. ইলিশা ফেরিঘাট ও বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র:
ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট শুধু যোগাযোগ নয়, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নৌযান চলাচল করে। ভ্রমণপ্রেমীরা ফেরিতে চড়ে নদীপথে যাত্রার অনন্য অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।
৪. ভোলা সরকারি বাগানবাড়ি ও জেলা জাদুঘর:
ভোলার পুরনো জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ এখনও ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। পাশাপাশি, জেলা শহরের সরকারি বাগানবাড়ি এবং নবনির্মিত জাদুঘর ভোলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য জানার এক অনন্য স্থান। এখানে পাওয়া যায় মাটির তৈজসপত্র, পুরনো পাণ্ডুলিপি ও আদি কৃষি সরঞ্জামের সংগ্রহ।
৫. মনপুরা দ্বীপ:
ভোলার আরেক বিখ্যাত স্থান ‘মনপুরা’ দ্বীপ। নৌপথে যেতে হয় এই দ্বীপে, যা একদম সিনেমার মতো দৃশ্যপট তৈরি করে। “মনপুরা” চলচ্চিত্রের দৃশ্য ধারণ এই দ্বীপে হওয়ায় এটি এখন আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাইকেল চালিয়ে ঘোরা এবং নদীর ধারে বসে নির্জনতা উপভোগ পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
ভোলা শুধু দ্বীপজেলা নয়, এটি এক অপার সম্ভাবনার নাম। পর্যটনের উপযুক্ত অবকাঠামো গড়ে তোলা গেলে ভোলা হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। তাই প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ভোলা নিঃসন্দেহে একটি আদর্শ গন্তব্য।
