নিষেধাজ্ঞা আপাতত নয়, টিকটককে সময় দিচ্ছেন ট্রাম্প


মার্কিন মুলুকে এখনও টিকটকের ওপর ঝুলছে নিষেধাজ্ঞার খরগ। তবে এখনই দেশটিতে নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে না ছোট দৈর্ঘ্যের ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটি। কেননা নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য টিকটককে আবারও সময় বাড়িয়ে দিতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল মঙ্গলবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমনটাই জানিয়েছেন।
এর আগে গত মে মাসেও ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, প্রয়োজন হলে টিকটককে আবারও অতিরিক্ত সময় দেবেন তিনি। বিশেষ করে গেল বছরের নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের মন জয় করতে জনপ্রিয় এই প্ল্যাটফর্মটির সহায়তার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। টিকটকের প্রতি ট্রাম্পের মনে যে ‘সফট কর্নার’ তৈরি হয়েছে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়ে পর পর দু’বার টিকটকের নিষেধাজ্ঞা ৭৫ দিনের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে।
এবারে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সময়সীমা শেষ হবে আগামীকাল (১৯ জুন)। নিয়ম অনুযায়ী আগামীকালের মধ্যে টিকটকের আমেরিকা বিজনেসের অধিকাংশ শেয়ার বা নিয়ন্ত্রণমূলক শেয়ার আমেরিকান কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি বা হস্তান্তর করার কথা মালিক প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের। তা করতে ব্যর্থ হলে ১৭ কোটি ব্যবহারকারীর দেশে নিষিদ্ধ হতে পারে টিকটক অ্যাপ।
টিকটকের নিষেধাজ্ঞা আবারও ৭৫ দিন পেছালেন ট্রাম্পটিকটকের নিষেধাজ্ঞা আবারও ৭৫ দিন পেছালেন ট্রাম্প
তবে টিকটকের জন্য আবারও ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন ট্রাম্প। টিকটকের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সময়সীমা বাড়ানো হবে কি-না এমন এক প্রশ্নের জবাবে গতকাল (১৭ জুন) ট্রাম্প বলেন, ‘খুব সম্ভবত, হ্যাঁ (বাড়িয়ে দেওয়া হবে)। সম্ভবত আমাদেরকে চীনের (চীন সরকারের) অনুমোদন পেতে হবে, কিন্তু আমি মনে করি আমরা সেটা পাব। প্রেসিডেন্ট শি অবশেষে এটি অনুমোদন করবেন বলে আমি মনে করি।’
উল্লেখ্য, গত বছরের এপ্রিলে আমেরিকার তৎকালীন বাইডেন সরকার নতুন এক আইন প্রণয়ন করে, যেখানে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয় চীনের বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন অ্যাপ টিকটিক। অ্যাপটির আমেরিকান ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চীন সরকারের সাথে শেয়ার করার অভিযোগ আনা হয় বাইটড্যান্সের বিরুদ্ধে। চীন এই তথ্য ব্যবহার করে আমেরিকায় গুপ্তচরবৃত্তি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে বাইডেন সরকার।
প্রতিকারস্বরুপ বাইটড্যান্সকে টিকটকের আমেরিকা অংশের ব্যবসায়ের অধিকাংশ শেয়ার, অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণমূলক মালিকানা ছেড়ে দিতে হবে আমেরিকান কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে। অন্যথায় নির্দিষ্ট সময় পর টিকটককে দেশটিতে নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানায় সরকার। বাইটড্যান্স অবশ্য এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়।
অবশ্য তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি বাইটড্যান্সের। বাইডেন সরকারের আইনটিকে আমেরিকার সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে প্রদত্ত বাকস্বাধীনতার অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আদালতকে জানায় তাঁরা। তবে নিম্ন আদালতের পর সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টেও তাঁদের এই দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণে ব্যর্থ হয় বাইটড্যান্স।
পরবর্তীতে মালিকানা বিক্রির জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়ে আবেদন করেও সফল হয়নি বাইটড্যান্স। ফলে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি পূর্বনির্ধারিত দিনেই আমেরিকায় নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয় অ্যাপটি। তবে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার এক দিন আগে বাইটড্যান্স নিজে থেকেই আমেরিকায় টিকটকের কার্যক্রম ও সেবা বন্ধ করে দেয়। যদিও ১২ ঘন্টার কিছু বেশি সময় পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাওয়া ট্রাম্পের আশ্বাসে নিজেদের কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে টিকটকের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সময়সীমা ৭৫ দিনের জন্য পিছিয়ে ৫ এপ্রিল নির্ধারণ করেন। এই ৭৫ দিন সময়কালে ডেপুটি প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও হোয়াটস হাউজের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বাইটড্যান্সের মালিকানা বিক্রির বিষয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা হয় এবং তাঁরা চুক্তি সম্পাদনের বেশ কাছাকাছিও পৌঁছায় বলে জানা যায়।
কিন্তু ২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিতর্কিত পাল্টা শুল্ক (রেসিপ্রোকাল) ঘোষণার পর তৈরি চীন-মার্কিন শুল্ক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নিশ্চিত হয়ে যায় যে, ৫ এপ্রিলের নির্ধারিত সময়ের আগে টিকটকের মালিকানা হস্তান্তর সম্পর্কিত কোনো চুক্তিতে অনুমোদন দেবে না চীনের শি জিনপিং সরকার।
ফলে বাধ্য হয়ে ৫ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো টিকটকের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সময়সীমা ৭৫ দিনের জন্য পিছিয়ে দেন ট্রাম্প এবং বাইটড্যান্সের সামনে নতুন সময়সীমা নির্ধারিত হয় ১৯ জুন। এবার তৃতীয়বারের মতো নির্বাহী আদেশে টিকটককে অতিরিক্ত সময় দিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গতকাল হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিটও টিকটককে অতিরিক্ত সময় দেওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘টিকটক চালু রাখতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ সপ্তাহেই অতিরিক্ত একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন।’
দৈএনকে/জে .আ
