বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

টেসলার রোবোট্যাক্সি আসছে রাস্তায়: চালকবিহীন যানে যাত্রা শুরু

টেসলার রোবোট্যাক্সি আসছে রাস্তায়: চালকবিহীন যানে যাত্রা শুরু
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

অবশেষে রাস্তায় দেখা যাবে ইলন মাস্কের বহুল-আলোচিত চালকবিহীন, স্ব-চালিত (সেলফ-ড্রাইভিং) পরিবহণ সেবা ‘রোবোট্যাক্সি’-কে। আজ রোববার (২২ জুন) আমেরিকার টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অস্টিন শহরে সীমিত পরিসরে শুরু হতে যাচ্ছে টেসলার পরীক্ষামূলক এই সেবা। 

টেসলাপ্রেমী ও ইলন মাস্কের অনুসারীদের বহুল-আকাঙ্ক্ষিত এই ‘রোবোট্যাক্সি’ পরিষেবায় আজ টেসলার প্রায় এক ডজন মডেল ওয়াই এসইউভি-কে অস্টিনের রাস্তায় চলতে দেখা যাবে। প্রাথমিকভাবে কেবলমাত্র আমন্ত্রিত যাত্রীরাই পরীক্ষামূলক (ট্রায়াল) এই সেবা উপভোগ করতে পারবেন এবং অস্টিনের নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলের মধ্যেই সীমিত থাকবে এই ট্রায়াল।

রোবোট্যাক্সি’র এই ট্রায়ালে যাত্রীদের সাথে টেসলার তরফ থেকে থাকবেন একজন করে সেফটি মনিটর (নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক), যিনি সামনের সারিতে প্যাসেঞ্জারের (যাত্রীর) আসনে বসবেন। তবে চালকের আসন ফাঁকাই থাকবে। আমন্ত্রিত যাত্রীরা বসবেন মডেল ওয়াই (এসইউভি) যানটির পেছনের সারিতে।

অস্টিনে চালু হতে যাওয়া রোবোট্যাক্সি’র এই পরীক্ষামূলক পরিষেবায় আরও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে টেসলার পরিকল্পনা হচ্ছে, খারাপ আবহাওয়া ও একাধিক রাস্তার সংযোগস্থল বা মোড় (ইন্টারসেকশন) এড়িয়ে চলা। পাশাপাশি ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো যাত্রী আপাতত রোবোট্যাক্সি’র এই ট্রায়ালে অংশ নিতে পারবে না।

রোবোট্যাক্সি’র ট্রায়াল শুরু করার ক্ষেত্রে যাত্রীদের সুরক্ষার বিষয়টিকে ইলন মাস্ক সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে ট্রায়াল আরও পিছিয়ে দিতেও প্রস্তুত আছেন বলে মাস্ক নিজেই জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, স্ব-চালিত যান বা সেলফ-ড্রাইভিং কার নিয়ে বেশ উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা রয়েছে ইলন মাস্কের। চালকহীন ‘রোবোট্যাক্সি’-কেই তিনি যাত্রী পরিবহণ সেবার ভবিষ্যৎ বলে মনে করেন। 

শুধু তাই নয়, গত বছর অক্টোবরে টেসলা’র আয়োজিত ‘উই, রোবোট’ ইভেন্টে ইলন মাস্ক উন্মোচন করেন ‘সাইবারক্যাব’ নামের একটি রোবোট্যাক্সি ও ২০ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার ‘রোবোভ্যান’। ভবিষ্যৎমুখী এই দুটো যানই স্ব-চালিত বা স্বয়ং-চালিত। অর্থাৎ উন্নত সেলফ-ড্রাইভিং প্রযুক্তির ব্যবহারে চালক ছাড়াই চলবে ‘সাইবারক্যাব’ ও ‘রোবোভ্যান’। সাইবারক্যাবের উৎপাদন ২০২৬ সালেই শুরু হওয়ার কথা।

প্রতিদ্বন্দ্বী গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় টেসলার বাজারমূল্য অনেকটাই বেশি। এর পেছনে অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে রোবোট্যাক্সি ও মানবসদৃশ (হিউম্যানয়েড) রোবট নির্মাণের সক্ষমতাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া উচ্চাশা। অর্থাৎ, শেয়ার বাজারে টেসলার সাফল্য-ব্যর্থতার অনেকাংশে নির্ভর করছে রোবোট্যাক্সি ও হিউম্যানয়েড রোবট নির্মাণে তাঁরা কতটা সফল হয় তার ওপর। ইলন মাস্ক অবশ্য বেশ কয়েক বছর ধরেই বলে আসছেন, স্ব-চালিত যান বা সেলফ-ড্রাইভিং কারের আগমন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।

তবে স্বনিয়ন্ত্রিত যান (অটোনোমাস ভেহিকল) ও এর প্রযুক্তিগত দিক নিয়ে কথা বলা যতটা সহজ এর বাণিজ্যিকীকরণের বিষয়টি ততটাই কঠিন। কেননা এটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। এই যেমন, জেনারেল মোটরস-এর ক্রুজ যানটি মারাত্মক এক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার পর এর ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার কড়া নজরদারিতে রয়েছে টেসলাসহ অ্যালফাবেটের ওয়েমো ও অ্যামাজনের জুক্স। উল্লেখ্য, আমেরিকার বেশ কয়েকটি শহরে ওয়েমো বর্তমানে পেইড রোবোট্যাক্সি পরিষেবা পরিচালনা করছে।

চালকবিহীন, স্ব-চালিত গাড়ি পরিচালনার জন্য টেসলা শুধুমাত্র ক্যামেরার ওপর নির্ভর করে থাকে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর গাড়িতে সাধারণত একাধিক প্রযুক্তি (যেমন: লিডার ও রাডার সিস্টেম) ব্যবহার করা হয়। মাস্ক মনে করেন, লিডার ও রাডার সিস্টেমের পরিবর্তে শুধু ক্যামেরা ব্যবহার করেই স্বয়ংচালিত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা যায়। আর এতে করে খরচও কমে আসে অনেকাংশে। 

তবে তা স্বত্বেও মাস্ক বলেছেন যে, রোবোট্যাক্সি সার্ভিসের ট্রায়ালকে সামনে রেখে ‘নিরাপত্তা নিয়ে প্রচণ্ড সতর্ক’ আছেন তিনি। টেসলা ভক্তরাও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন।


দৈএনকে/জে .আ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ