সমাজসেবক ও বিদগ্ধ রাজনীতিবিদ ইমাম শেরে বাংলা (র.)


প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আবৃত বার আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত পুণ্যভূমি বীর চট্টগ্রাম। ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য সুদূর আরব ও অন্যান্য দেশ থেকে অসংখ্য সুফি-সাধক, পীর-আউলিয়া, ফকির-দরবেশ এই চট্টগ্রামে আসেন।
চট্টগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় আষ্ঠেপৃষ্ঠে ইসলামি সুফিদের অবদান অনস্বীকার্য। বলছি প্রখ্যাত ইসলামি সুফি সাধক ইমাম শেরে বাংলা (রহ:) এর কথা।হাটহাজারী উপজেলার মেখল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত সৈয়দ পরিবারে ১৯০৬ সালে কোন এক মহিমান্বিত মুহূর্তে জন্ম গ্রহণ করেন সৈয়দ মুহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা (রহ.)।
জীবনের প্রতিটি স্তরে ইসলামের যোগসূত্র প্রমাণের লক্ষ্যে সমাজ পরিচালনায় অবতীর্ণ হন ইমাম শেরে বাংলা (র.)। সমাজসেবক ও বিদগ্ধ রাজনীতিবিদ ইমাম শেরে বাংলা সুদীর্ঘ ১৭ বছর হাটহাজারী মেখল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং ফুড কমিটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সুবিচারক ও সাম্যের মূর্ত প্রতীক, দেশপ্রেমিক সফল চেয়ারম্যান ইমাম শেরে বাংলার ব্যাপারে তাঁর চিরশত্রু মুফতি ফয়জুল্লাহর মূল্যায়ন প্রণিধানযোগ্য, তিনি বলেন তোমরা শেরে বাংলাকে ভোট দিবে, এই মূহুর্তে তাঁর মত সুবিচারক ও ন্যায় বণ্টনকারী বিশ্বস্ত কোন লোক পাওয়া বিরল”।
শেরে বাংলা (রহ.) বাল্যকাল থেকেই অতি মেধাবী ও সৎ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। শৈশবকালে তিনি পিতা হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ আব্দুল হামিদ আলকাদেরী (রহ.) এর নিকট প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে হাটহাজারী মাদ্রাসা-এ-মঈনু ল ইসলামে ভর্তি হন, পরে উচ্চশিক্ষা লাভে দিল্লীর বিখ্যাত ফতেহ্পুর আলীয়া মাদ্রাসায় হতে আরবী, উর্দু, ফার্সি ভাষায় বিভিন্ন শাস্ত্রে অসাধারণ জ্ঞানদীপ্ত পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।
প্রতিষ্ঠা করেন হাটহাজারী এমদাদুল উলুম আজিজিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় সৃষ্টি করেন অগণিত মাদ্রাসা।
ইমাম শেরে বাংলা আউলিয়া কেরামের মাজার নির্মাণ ও ওরশ-ফাতেহার পক্ষে যেমন ক্ষুরধার ছিলেন। তেমনি ভন্ড নবী, ভন্ড অলী, অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে ছিলেন অগ্নিশর্মা। তিনি সদা বলতেন, আমি নবী অলী বিরোধীদের জন্য শানিত তলোয়ার।
দিওয়ান-ই আযীয ও মজমুআহ-ই ফাতাওয়া-ই আযীযিয়া তাঁর গ্রহণযোগ্য ও বিশ্ব সমাদৃত দুটো কিতাব।
মোনাজেরায় ইমামের অসীম জ্ঞানের স্বীকৃতি স্বরূপ যুগশ্রেষ্ঠ আলেম মাওলানা আবদুল হামিদ (রহ) বাংলাদেশের সকল ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে জনসম্মুখে ইমামকে শেরে বাংলা” উপাধিতে ভূষিত করেন।এছাড়াও ইমামের তীক্ষ্ণ মেধা ও পা-িত্যপূর্ণ জ্ঞান এবং অসীম সাহসীকতার স্বীকৃতিস্বরূপ সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি সরকারের পক্ষে ইমামকে শেরে ইসলাম উপাধিতে ভূষিত করে লিখিত সনদ প্রধান করেন।
একবার ভিন্ন-আক্বীদা পোষণকারীরা তাঁর উপর হামলা করে রক্তাত্ব করে দেয়। ডাক্তার মৃত ঘোষনার আট ঘন্টা পর তিনি জীবিত হয়ে বলে উঠলেন, “ মাইতো বিমারে নবীহো ”
এখনো তাঁর রওজা শরীফে এই কালাম সোনালী অক্ষরে লিখা রয়েছে।
পরে বিশ্বনবীর আয়ুষ্কাল অনুযায়ী মাত্র ৬৩ বছর বয়সে ১৯৬৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার দিবাগত রাতে নশ্বর পৃথিবী ত্যাগ করেন।
দৈএনকে/জে .আ
