মাত্র একটি খাবারেই রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব: বিশেষজ্ঞদের মত


রক্তে শর্করা বা সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে কম চেষ্টা করা হয় না। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা আরও জরুরি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন মাত্র একটি খাবার খেলেই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। আর সেটা হচ্ছে চিজ। অনেকেই মনে করেন ডায়াবেটিস থাকলে চিজ খাওয়া যাবে না। কিন্তু পুষ্টিবিদরা বলছেন, চিজ শুধু নিরাপদই নয়, বরং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হতে পারে। কারণ চিজ স্বাভাবিকভাবেই কম কার্বযুক্ত, প্রোটিনসমৃদ্ধ এবং এতে থাকে কিছু পরিমাণ ফ্যাট—যা রক্তে শর্করার হঠাৎ বাড়া ঠেকাতে সাহায্য করে।
ইটিংওয়েলের প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন সব ধরনের চিজ খেলেই যে সুগারের আত্রা ঠিক থাকবে এমন নয়। বরং বিশেষ কিছু চিজ বেছে নিলে আপনি পাবেন স্বাস্থ্য উপকারিতা। পুষ্টিবিদের মতে, নিচের ছয়টি চিজ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবচেয়ে উপকারী—
১. মোজারেলা চিজ
হালকা স্বাদের, সহজে গলানো যায় এমন এই চিজ পিজ্জা, সালাদ বা পনির স্টিকে দারুণভাবে ব্যবহার করা যায়। পার্ট-স্কিম মোজারেলা চিজে কম কার্ব, উচ্চ প্রোটিন ও তুলনামূলক কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এক আউন্স পার্ট-স্কিম মোজারেলায় থাকে প্রায় ২ গ্রাম কার্ব, ৭ গ্রাম প্রোটিন ও ৩ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট। এটি হজম ধীর করে, ফলে রক্তে শর্করার হঠাৎ বৃদ্ধির ঝুঁকি কমে।
২. পারমেজান চিজ
ছোট্ট এক চিমটি পারমেজান পুরো খাবারের স্বাদই বদলে দিতে পারে। এতে কার্ব কম, প্রোটিন বেশি এবং দারুণ উমামি স্বাদ থাকে। ১ আউন্স পারমেজানে থাকে ১০ গ্রাম প্রোটিন ও মাত্র ১.৫ গ্রাম কার্ব। এটি সুপ, সালাদ বা ভাজি সবকিছুতেই ব্যবহার করা যায়।
৩. কটেজ চিজ
এই চিজ কম কার্ব ও বেশি প্রোটিনের একটি দারুণ উৎস। অর্ধেক কাপ কটেজ চিজে থাকে ১২ গ্রাম প্রোটিন ও মাত্র ৫ গ্রাম কার্ব। কম ফ্যাট ও কম সোডিয়ামযুক্ত কটেজ চিজ বেছে নেওয়াই ভালো। এটি সালাদ, স্মুদি, এমনকি ডেজার্টেও ব্যবহার করা যায়।
৪. এইজড চেডার চিজ
চেডার চিজে থাকে ভিটামিন বি১২—যা মেটফর্মিন ব্যবহারকারীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১.৫ আউন্স চেডার চিজে থাকে দৈনিক চাহিদার ১৯% ভিটামিন বি১২। এই পুষ্টি উপাদান ঘাটতি হলে দুর্বলতা ও রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে। সুস্বাদু এই চিজ স্যুপ, পাস্তা বা স্যান্ডউইচে ব্যবহার করুন।
৫. সুইস চিজ
মোলায়েম স্বাদের এই চিজে কার্ব কম, প্রোটিন ভালো পরিমাণে এবং সোডিয়ামও অনেক কম। এক আউন্স সুইস চিজে থাকে মাত্র ৫৩ মি.গ্রা. সোডিয়াম, ৮ গ্রাম প্রোটিন ও ১ গ্রামেরও কম কার্ব। হার্ট সুস্থ রাখতে ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটি আদর্শ।
৬. রিকোটা চিজ
মৃদু স্বাদের এই ইতালিয়ান চিজ মিষ্টি ও ঝাল—উভয় রেসিপিতেই মানিয়ে যায়। পার্ট-স্কিম রিকোটায় থাকে ১৪ গ্রাম প্রোটিন ও ৬ গ্রাম কার্ব (অর্ধেক কাপ পরিমাণে)। এটি টোস্ট, সালাদ, পার্ফে, এমনকি স্মুদি তৈরিতেও ব্যবহার করা যায়।
চিজ খাওয়া ছাড়াও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু জীবনযাপন কৌশল অনুসরণ করা জরুরি:
- খাওয়ার পর হাঁটা: খাবারের পর মাত্র ১০–১৫ মিনিট হেঁটে নিলেও রক্তে শর্করা দ্রুত কমে।
- ফাইবারযুক্ত খাবার খান: ফল, সবজি, ডাল, বাদাম ও শস্যজাতীয় খাবার খেতে হবে নিয়মিত।
- ব্যালান্সড প্লেট গঠন করুন: এক চতুর্থাংশ কার্ব, এক চতুর্থাংশ প্রোটিন ও বাকি অর্ধেক অ-স্টার্চি সবজি রাখুন।
- ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়ুন: দৈনিক ৭–৯ ঘণ্টা ঘুম শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- খাবারের পরিকল্পনা করুন: দীর্ঘ বিরতি বা খাবার মিস না করে নিয়মিত ও পরিকল্পিত খাওয়া রক্তে শর্করার ওঠানামা কমায়।
ডায়াবেটিস মানেই সব খাবারে ‘না’ বলা নয়। বরং সঠিক খাবার বেছে নিয়ে, পরিমাণ ও পুষ্টির দিকে খেয়াল রেখে আপনি উপভোগ করতে পারেন অনেক কিছুই চিজও তার অন্যতম। তাই প্লেটে জায়গা দিন এই ছয়টি স্বাস্থ্যকর চিজের যেকোনো একটি, আর নিয়ন্ত্রণে রাখুন রক্তে শর্করা।
দৈএনকে/জে .আ
