৫০০ রোগী, ২৫০ শয্যা: চাঁদপুর সদর হাসপাতালে চরম চাপ


চাঁদপুর ২৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতালে হঠাৎ করেই রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গত কিছু দিনে ডায়রিয়া, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও বিভিন্ন পানিবাহিত রোগসহ মৌসুমি রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ফলে ওয়ার্ডের শয্যা ফুরিয়ে বারান্দা, করিডোর ও ফ্লোরে বসেই চলছে চিকিৎসা সেবা। এতে হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও পড়েছেন বাড়তি চাপের মুখে।
সোমবার (২০ জুলাই) দুপুরে সরজমিনে দেখা গেছে, রোগীদের চাপে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কোথাও ঠাঁই নেই। পুরুষ ওয়ার্ড, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডের সবকটি বিছানা পরিপূর্ন হয়ে মেঝেতে ও রোগীদের জন্য বিছানা পাতা হয়েছে।
চিকিৎসক ও নার্সরা জানিয়েছেন, এসব রোগীরা জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট,ডায়রিয়া, খিচুনী এবং নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া ও অনেক বৃদ্ধ ও শিশু রোগীকে অভিভাবকরা হাসপাতালে নিয়ে এসে ডাক্তার দেখিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিয়ে চলে যান।
গত ৩ দিনের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালের পুরুষ, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে গড়ে পাঁচ শতাধিকের বেশি রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। এই সংখ্যা হাসপাতালের স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি, ফলে স্বাস্থ্যসেবায় তৈরি হয়েছে অচলাবস্থার মতো পরিস্থিতি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, পুরুষ ওয়ার্ডে গত ১৮ জুলাই সর্বমোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১১১ জন, ওইদিন নতুনভাবে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৫ জন রোগী। ১৯ জুলাই এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২৩ জনে, নতুন ভর্তি হয়েছে ৪৮ জন। ২০ জুলাইও পুরুষ ওয়ার্ডে মোট ভর্তি ছিলেন ১২৩ জন, এদিন দুপুর পর্যন্ত দুপুর পর্যন্ত নতুনভাবে ভর্তি হয়েছেন ২৪ জন রোগী।
মহিলা ওয়ার্ডের চিত্র আরও করুণ। ১৮ জুলাই ভর্তি ছিলেন ১২৫ জন নারী রোগী, এদিন নতুন ভর্তি হয়েছেন ৪৫ জন। ১৯ জুলাই এই সংখ্যা এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় ১৫১ জনে, সেদিন নতুন ভর্তি হয়েছিলেন ৫৫ জন। ২০ জুলাই মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন ১৩০ জন,এদিন দুপুর পর্যন্ত নতুন ভর্তি হয়েছেন ২৬ জন।
শিশু ওয়ার্ডেও বেড়েছে রোগীর ভিড়। ১৮ জুলাই এখানে ভর্তি ছিলেন ৭৪ জন, নতুন ভর্তি হয়েছেন ৩২ জন শিশু। ১৯ জুলাই এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০১ জনে, সেদিন নতুন ভর্তি হন ৫১ জন। ২০ জুলাই শিশু ওয়ার্ডে মোট ভর্তি ছিল ১০২ জন, এদিন দুপুর পর্যন্ত নতুন ভর্তি হয়েছেন আরও ২৯ জন। এছাড়াও গাইনী ওয়ার্ড, কেবিন ও পেইং বেড এবং শিশু ওয়ার্ডের কেএসি ওয়ার্ডসহ প্রায় ৫ শতাধিকের অধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্ষা মৌসুমে পানিবাহিত রোগ, ভাইরাসজনিত জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। রোগীর চাপে ওয়ার্ডের প্রতিটি শয্যা পূর্ণ হয়ে গেছে, ফলে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে বারান্দা ও ফ্লোরে বিছানা পেতে।এদিকে হাসপাতালে জনবল ও চিকিৎসক সংকটে রোগীর চাপ সামাল দিতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের প্রতিদিন হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও তবু ধারণ ক্ষমতার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি রোগী থাকায় চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সবাইকে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোতে রোগীদের সেবা কার্যক্রম আরও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারা সকলকে রোগ প্রতিরোধে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
