চলে গেলেন মুক্তিযোদ্ধা ও ওহিদুর বাহিনীর অধিনায়ক ওহিদুর রহমান


বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ওহিদুর বাহিনীর অধিনায়ক ও বীর মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক ওহিদুর রহমান প্রয়াত হয়েছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার, ২৬ জুলাই সকাল ১০টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৮২ বছর।
ওহিদুর বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা হাসানুজ্জামান ভুলু গণমাধ্যমকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। বেশ কয়েক বছর ধরে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন ওহিদুর রহমান।
তার জানাজা আজ বাদ এশা নওগাঁ নওজোয়ান মাঠে এবং আগামীকাল রোববার সকাল ১০টায় আত্রাই উপজেলার রসুলপুর গ্রামে তার নিজ বাড়িতে অনুষ্ঠিত হবে।
নওগাঁ, রাজশাহী ও নাটোরের বিস্তৃত অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই হাজারেরও বেশি মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে গঠিত হয়েছিল এক বিশাল বাহিনী, যার নেতৃত্বে ছিলেন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ও কৃষক নেতা ওহিদুর রহমান। তার নেতৃত্বেই গড়ে ওঠা এই বাহিনী পরবর্তীতে ‘ওহিদুর বাহিনী’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
ওহিদুর বাহিনীর কার্যধারা ছিল চারটি জেলার ১৪টি থানাজুড়ে। এই বিস্তৃত অঞ্চলে প্রবাহিত ছিল আত্রাই, ছোট যমুনা, ফক্কিনী, খাজুরা, নাগরসহ ৬টি নদী এবং চলনবিলসহ ১৩টি বিল।
মুক্তিযুদ্ধে ওহিদুর বাহিনী মূলত জলপথে চলাচল করত এবং স্থানীয়রা তাদের নৌকার বহরকে ‘ওহিদুরের বায়ান্ন ডিঙ্গি’ বলত। ১৯৭১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ওহিদুর বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা আত্রাইয়ের সাহাগোলা ব্রিজ ধ্বংস করে। এতে ১০৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হন।
মুক্তিযুদ্ধের আগে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা ছিলেন ওহিদুর রহমান। ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ভারতের নকশাল নেতা চারু মজুমদারের রাজনৈতিক ও সামরিক লাইনকে পার্টিতে গ্রহণ করেছিল। তবে ওহিদুর রহমান দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রাণীনগর- আত্রাই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ওহিদুর রহমান।
ওহিদুর রহমানের জন্ম ১৯৪৩ সালে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায়। কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই ছাত্র ইউনিয়নের যোগদানের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।
