আওয়ামী ঘরানার ছেলে, না কি বিএনপির ভেতরের শত্রু?


আওয়ামী লীগের ‘পোস্টার বয়’ থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী! আওয়ামী লীগ থেকে উঠে এসে বিএনপির কাঁধে বন্দুক রেখে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মাসুদ রানা। ২০১৩-১৪ সালে বাগেরহাট-১ আসনে আওয়ামী লীগের টিকিট চেয়ে ব্যর্থ হন তিনি। তখন ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতলমারীজুড়ে তার ছবি সম্বলিত পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল পুরো এলাকা।
২০১৬-১৭ সালে হঠাৎ করে রাজনৈতিক কোনো পূর্ব ইতিহাস ছাড়াই বিএনপিতে এসে মনোনয়ন দাবি করে বসেন! স্থানীয় বিএনপি কর্মীদের প্রশ্ন, কোন শক্তির জোরে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ এমন একজন ব্যক্তি বিএনপির টিকিট চাইছেন? এর আগেও এই আসনে শেখ হেলাল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। স্থানীয়দের বক্তব্য, তাহলে কি বিএনপির তৃণমূল থেকে গড়ে ওঠা সাহসী নেতৃত্বের আর প্রয়োজন নেই?
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবরই ছাত্ররাজনীতির অভিজ্ঞ নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। অথচ মাসুদ রানার কোনো ছাত্র বা যুব সংগঠনের অতীত কর্মকাণ্ড নেই। তাহলে তিনি কীভাবে বিএনপির মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রার্থী তালিকায় জায়গা পান?
বিএনপির কিছু সহজ-সরল ও আর্থিকভাবে দুর্বল কর্মীকে সামান্য টাকায় ব্যবহার করে সস্তা প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, মাসুদ রানার পেছনে আওয়ামী লীগের কিছু মহল ইন্ধন দিচ্ছে, যাতে বিএনপির ভেতরে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা জরুরি।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির অন্য কেউ প্রার্থী না হওয়ায় মাসুদ রানা সহজেই টিকিট পেয়ে যান। কিন্তু ভোটের মাঠে তিনি ধরাশায়ী হন। অভিযোগ আছে, তিনি শেখ হেলালের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে নিজ প্রচার স্লথ করে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন করে তোলেন। প্রশ্ন উঠেছে, এবারও কি একই কৌশলে বিএনপিকে পেছনে ঠেলে দেওয়ার ছক আঁকা হচ্ছে?
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাসুদ রানা এখনও আওয়ামী লীগের কিছু নেতার সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছেন। বাগেরহাটের বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে দলের ভেতরের গুপ্তচর হিসেবেই দেখছেন।
বিএনপির অনেক নেতার মতে, মাসুদ রানাকে প্রার্থী করা হলে দলের ইমেজ নষ্ট হবে এবং ভোটারদের আস্থাও হারিয়ে যাবে।
যার রাজনৈতিক পরিচয় শুধু পোস্টার আর সস্তা প্রচারণায় সীমাবদ্ধ, তিনি কীভাবে বিএনপির প্রার্থী হন? এটা কি বিএনপিকে দুর্বল করার আওয়ামী লীগের একটি সুপরিকল্পিত কৌশল?
বাগেরহাটের বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, হাইকমান্ডের উচিত মাসুদ রানার রাজনৈতিক ইতিহাস, বিশেষ করে তার আওয়ামী লীগের সংযোগ, ভালোভাবে তদন্ত করা।
তাদের মতে, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে যদি কোনো আওয়ামী ঘরানার ব্যক্তিকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয়, তবে তা হবে শহীদদের আত্মত্যাগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।
বাগেরহাট-১ আসনের একটি বড় অংশ মনে করে, মাসুদ রানাকে মনোনয়ন দেওয়া মানে বিএনপির ঘাড়ে চড়ে আওয়ামী লীগের কাজ করে দেওয়া। জেল-জুলুম সহ্য করে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে গড়া ত্যাগী নেতা-কর্মীরা এতে চরমভাবে বঞ্চিত হবেন।
