শহীদদের আবাসন প্রকল্পে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪৫ গুণ বেশি


সম্প্রতি ‘৩৬ জুলাই’ নামের একটি আবাসন প্রকল্পে ব্যয়ের অস্বাভাবিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শহীদ ও আহতদের পরিবারের জন্য প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিভিন্ন খাতে প্রকৃত মূল্যের তুলনায় ৩ থেকে ৪৫ গুণ পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে। বিষয়টি সামনে আসার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আরসিসি পিলারের প্রকৃত মূল্য যেখানে ৯০০ টাকা, সেখানে সেটি ধরা হয়েছে ৪০ হাজার টাকায়। এ ছাড়া, ২৫ লাখ টাকার লিফটের জন্য ধরা হয়েছে ৯২ লাখ টাকা, ১২ লাখ টাকার সাবস্টেশনের জন্য ৬৩ লাখ টাকা এবং ৯৫ হাজার টাকার পানির পাম্পের জন্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ প্রকল্পে ৪৫ গুণ বেশি ব্যয়ে সীমানা প্রাচীর, চারগুণ বেশি ব্যয়ে কেনা হচ্ছে বেড লিফট, সাবস্টেশন কেনা হচ্ছে পাঁচ গুণ, এমনকি পানির পাম্পও কেনা হয়েছে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি দামে।
এ ধরনের বাড়তি ব্যয় ধরেই ‘৩৬ জুলাই’ নামের এক ফ্ল্যাট প্রকল্পের প্রস্তাব আজ একনেক সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে প্রতিটি পদ ও স্তরেই রয়েছে অনিয়ম ও অস্বাভাবিক বাড়তি ব্যয়ের ছড়াছড়ি।
এ প্রকল্পটি অন্তর্বর্তী সরকারের সময় শুরু হলেও, এর ব্যয়ের অস্বাভাবিকতার জন্য বিভিন্ন কর্মকর্তারা একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। কেউ কেউ দাবি করছেন, প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়নের চাপে এই ধরনের ভুল হয়েছে। তবে, কেন নিয়মিত যাচাই-বাছাই ছাড়াই এসব ব্যয় অনুমোদন করা হয়েছে, তার স্পষ্ট উত্তর কেউ দিতে পারেননি।
প্রকল্পের আওতায় ৮ শতাধিক ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৭৬১ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, মাস্টারপ্ল্যান বা নকশা প্রণয়ন করা হয়নি বলে জানা গেছে। গত ১৬ জুন পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্পটির নানা জটিলতা তুলে ধরা হয়। সভায় প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়, যেমন ফ্ল্যাটের মালিকানা নির্ধারণ ও শহীদের উত্তরাধিকারী নির্ধারণের বিষয়।
সভায় উপস্থিত পরিকল্পনা কমিশনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন ও নির্দেশিকা থাকা আবশ্যক। এ ছাড়া, প্রকল্পের অর্জন ও সুবিধাভোগীদের তথ্যও থাকা জরুরি। কিন্তু এ প্রকল্পে এসব তথ্যের অভাব লক্ষ্য করা গেছে।
সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প অনুমোদনের আগে পরিবেশ ও ইকোসিস্টেমের ওপর প্রভাব, মাস্টারপ্ল্যান এবং বরাদ্দের লিখিত বিবরণ থাকা প্রয়োজন; কিন্তু এ প্রকল্পে সেগুলোর অভাব দেখা গেছে। তার মতে, প্রকল্পটি তাড়াহুড়ো করে নেওয়া হয়েছে এবং ডিপিপি সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রকল্প প্রণয়নে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকলেও এ প্রকল্পটি দ্রুতই অনুমোদিত হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সূত্রটি আরও জানায়, শহীদ পরিবারের জন্য প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি প্রায় চূড়ান্ত অবস্থায় রয়েছে এবং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) পর্যায়ে এটি অনুমোদিত হবে।
সূত্র : দৈনিক জনকণ্ঠ
