ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙবে কে?


ঢাকা শহর আজ যেন এক চলমান বিপর্যয়ের নাম। আধুনিকতার মোড়কে ঢাকা এই মহানগরীর নিচে জমে আছে অসংখ্য অবহেলা, অব্যবস্থাপনা আর অজানা মৃত্যুফাঁদ। রাজধানীর বহু ভবন আজ শুধু ইট-পাথরের কাঠামো নয়, তা হয়ে উঠেছে বিপদের সংকেত। বিশেষ করে মতিঝিল ও পুরান ঢাকার গলি-ঘুপচির পুরোনো ভবনগুলো যেন ধস নামানোর প্রতীক্ষায় থাকা একেকটি ‘টাইম বোমা’। প্রশ্ন উঠছে, এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙবে কে?
রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, গণপূর্ত। এই চারটি নাম বারবার শুনি কিন্তু কাজের কাজ কিছু দেখি না। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে নোটিশ টাঙানো হয়, সংবাদ সম্মেলনে কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি আসে কিন্তু বাস্তব চিত্র বদলায় না। আশেপাশের মানুষ আতঙ্কে থাকে, ভবনের বাসিন্দারা ভাগ্যর উপর ছেড়ে দেন জীবন, আর প্রশাসন কেবল ‘প্রক্রিয়া চলছে’ বলে দায় এড়িয়ে যায়।
পুরান ঢাকা মূলত বসতি অঞ্চল হলেও এখন তা বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। বাড়ির ভেতরে কেমিক্যাল গোডাউন। সরু গলিতে গড়ে ওঠা বহুতল ভবন, নেই পর্যাপ্ত ফায়ার এক্সিট। সব মিলিয়ে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি। মতিঝিল, দেশের বাণিজ্যিক হৃদয়। সেখানেও অনেক ভবনের ভিত্তি দুর্বল, কাঠামো নড়বড়ে। অথচ প্রতিদিন সেখানে লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করছে।
আমরা কি ভূমিকম্পের জন্য অপেক্ষা করছি? নাকি কোনো ভবন ধসে পড়লেই আবার মিডিয়া, মন্ত্রী, মাইকফোন- তারপর কিছুকাল চুপচাপ?
এই নগরের সমস্যা শুধু পুরোনো ভবন নয়, পুরোনো চিন্তা। উন্নয়ন মানেই যদি শুধু উঁচু ভবন হয়, তবে সেই উন্নয়ন নিঃস্বার্থ হোক—প্রাণনাশী নয়।
আমাদের দরকার মানুষকেন্দ্রিক নগরায়ণ। যেখানে পরিকল্পনার আগে ভাবনা, বাস্তবায়নের আগে নিরাপত্তা।
সরকারের কাছে প্রশ্ন—আপনারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কী রেখে যাচ্ছেন? একটা ভূমিকম্পে যদি এক হাজার ভবন ধসে পড়ে, সেই দায় কার?
এবার সময় এসেছে ‘দর্শন’ নয়, ‘কার্যকর উদ্যোগ’ দেখানোর। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত করেই দায়িত্ব শেষ নয়। আইন প্রয়োগ, ভবন মালিকদের জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং প্রয়োজনে সরকারি হস্তক্ষেপে ভেঙে ফেলার মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থাও করতে হবে।
সবশেষে বলতে হয়, ঢাকা আমাদের শহর, আমাদের প্রাণ। এটি রক্ষা করা কেবল সরকারের নয়, নাগরিক হিসেবেও আমাদের দায়িত্ব। তবে নেতৃত্বটা আসতে হবে উপর থেকেই। কারণ ভবন ভাঙা শুধু ইট ফেলার কাজ নয়, এটা জীবন বাঁচানোর কাজ।
