তেহরানবাসীর জন্য জরুরি বার্তা ট্রাম্পের, পাল্টা হুমকি দিল ইরান


মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংঘাত চতুর্থ দিনে পৌঁছানোর আগেই তেহরানের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় শহর ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তেহরানে যারা বসবাস করছেন, তাদের উচিত যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই সংঘাত আরও বিস্তৃত আকার নিতে পারে এবং সাধারণ মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে।”
যদিও ট্রাম্প বর্তমানে কোনো সরকারি পদে নেই, তার মন্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের মন্তব্য উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে এবং এতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে, ইরান সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে রাজধানী তেহরানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে এখন শান্তির চেয়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলি বেশি। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে—যেখানে বিমান হামলার আওয়াজ, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া ভবন, আর কূটনৈতিক টেবিলে অনিশ্চয়তার ছায়া।
সোমবার রাতে ইতিহাসের এক নাটকীয় দৃশ্য রচিত হয় তেহরানে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন স্টেশনে ইসরায়েলের সরাসরি বিমান হামলা চলে—ঠিক যখন একটি সংবাদ বুলেটিন চলছিল। সরাসরি সম্প্রচারে বিস্ফোরণের শব্দে থরথর করে কেঁপে ওঠে ভবনটি। সাংবাদিক মাসুমে আজিমি প্রাণ হারান, যিনি ছিলেন সম্প্রচার বিভাগের এক কর্মী।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হামলাকে ‘সাফল্য’ দাবি করে বলেন, “ইরানের পরমাণু কর্মসূচি অনেক বছর পিছিয়ে গেছে।” যদিও এটাই শেষ কথা নয়। তিনি সরাসরি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “আমরা ইরান সরকারের পতন চাই না। তবে এটা যদি ঘটে যায়, আমরা অবাক হব না।”
এরপরই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটান। তিনি লেখেন, “ইরান যদি আমার প্রস্তাবিত চুক্তি মেনে নিত, তবে আজ এই প্রাণহানির দৃশ্য দেখতে হতো না। এটা অনর্থক এবং দুঃখজনক। আমি আবার বলছি—ইরান পারমাণবিক অস্ত্র পেতে পারে না!”
ট্রাম্প এরপর হুঁশিয়ার করে বলেন, “তেহরানের মানুষদের এখন শহর ছাড়াই উত্তম। পরিস্থিতি যেকোনো সময় আরও খারাপ হতে পারে।”
গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত?
ইসরায়েলের দাবি, ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবন আসলে সামরিক যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছিল। আর তাই এই আঘাত ছিল একটি ‘নির্ভুল সামরিক পদক্ষেপ’। পাল্টা জবাবে ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে—ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ ও ১৪-এর অফিস খালি না করলে তারাও টার্গেট হবে।
পরমাণু সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের ‘নীরব নজরদারি’
তেহরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা ফোর্দো ধ্বংসে যে বোমার প্রয়োজন, তা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই আছে—এমনটাই দাবি করেছেন ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইয়েখিয়েল লাইটার। তবে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র অ্যালেক্স ফিফার জানিয়েছেন, “মার্কিন বাহিনী প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে রয়েছে এবং সরাসরি কোনো অভিযানে যুক্ত নয়।”
