মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, সাগরিকার চার গোলের প্রতিশোধ বিমান বিধ্বস্ত: নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের সন্ধানে জরুরি যোগাযোগ নম্বর চলতি সপ্তাহে শেষ হতে পারে সংসদীয় সীমানা নির্ধারণের কাজ দুর্নীতি-অনিয়মে ডুবেছেন গণপূর্তের প্রকৌশলী ময়নুল যারা নির্বাচন চায় না তাদের রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন নেই: আমীর খসরু ৬ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৬৪ জন: আইএসপিআর মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত, হতাহতের ঘটনায় রাষ্ট্রপতির শোক ও সমবেদনা বিমান বিধ্বস্তে নিহত বেড়ে দাঁড়াল ১৯ জনে উত্তরায় স্কুল ভবনে বিমান বিধ্বস্ত, মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা বিমান বিধ্বস্তের সময় ক্লাস চলছিল জুনিয়র শিক্ষার্থীদের
  • ৩০টি টেন্ডারে কোটি টাকার কমিশনের অভিযোগ;

    দুর্নীতি-অনিয়মে ডুবেছেন গণপূর্তের প্রকৌশলী ময়নুল

    দুর্নীতি-অনিয়মে ডুবেছেন গণপূর্তের প্রকৌশলী ময়নুল
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    পুরনো স্বভাব বদলাতে পারেননি গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম ময়নুল হক। চট্টগ্রাম থেকে রাজধানীতে বদলি হলেও দুর্নীতি ও অনিয়ম থেকে পিছু হটেননি তিনি।

    বর্তমানে তিনি গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা ই/এম বিভাগ-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে রয়েছেন। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে অন্তত ৩০টি সরকারি টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে এলটিএম (সীমিত দরপত্র) পদ্ধতির সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি ওটিএম (উন্মুক্ত দরপত্র) পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন, যার ফলে কমিশনের বিনিময়ে নির্দিষ্ট ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়া সহজ হয়েছে।

    সংশ্লিষ্টরা জানান, এলটিএম পদ্ধতিতে টেন্ডার বরাদ্দ লটারির মাধ্যমে হয়—যা তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ। কিন্তু ওটিএম পদ্ধতিতে প্রতিযোগিতার নামে প্রকৃতপক্ষে কমিশন দিয়ে কাজ ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়। কমিশনের পরিমাণ নিশ্চিত হওয়ার পর ঠিকাদারদের কাছে নির্ধারিত দর ও কোটেশন পাঠানো হয়, যাতে তারা ১০% পর্যন্ত কম দামে দরপত্র পেয়ে যায়।

    টেন্ডার আইডি যেগুলোতে এই ধরনের অনিয়ম হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
    ১১১৫৩৪৮, ১১১৩৬২৭, ১১১৩৬৮১, ১১১৩৬৮৪, ১১১৩৬৮৩, ১১১৩২১৬, ১১১৩২২৬, ১১১৩২৫৩, ১১১৩২৮১, ১১১৩৪৭৮, ১১১৩৮৩৭, ১১১২১৫১, ১১০৫৭৪০, ১১০২৩৯৩, ১১০২৪৩৯, ১১০৩৩৪৯, ১১০২৩৫৮, ১১০২৩৫১, ১০৯৭৩৮৭, ১০৯৫২০১, ১০৯৪৭৫৭, ১০৯৪৭২৪, ১০৯৩৯৬৩, ১০৮২২৮৩, ১০৮৬৭৯৫, ১০৮৬৯২৯, ১০৮১০৪৭, ১০৮০৬৬৩, ১০৭৫৭৯০।

    অভিযোগ রয়েছে, এসব টেন্ডার থেকে তিনি দেড় থেকে দুই কোটি টাকার কমিশন নিয়েছেন।

    এই প্রথমবার নয়, এর আগেও ২০২৫ সালের ১১ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চট্টগ্রাম-১ কার্যালয়ে এসএম ময়নুল হকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। তখন তিনি চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগের ই/এম-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন।

    অভিযোগে বলা হয়, দুই মন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্ধারিত জাপানি ব্র্যান্ডের পরিবর্তে নিম্নমানের চায়না লিফট বসান তিনি। তদ্ব্যতীত, দরপত্রে সাশ্রয় হওয়া অর্থ ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন কোটি কোটি টাকা। নিজের জেলা পাবনায় গড়েছেন বিলাসবহুল অট্টালিকা, বিনিয়োগ করেছেন ঠিকাদারি ব্যবসায়।

    রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে আলোচিত সাজিন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড—যারা বালিশ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত—তাদের ৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকার কার্যাদেশ দেন, যদিও তারা সর্বনিম্ন দরদাতা ছিল না।

    একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেন, ময়নুল হককে খুশি করতে দরপত্রের সম্ভাব্য ব্যয়ের ১০% কমিশন দিতে না পারলে দরপত্র ‘নন-রেসপন্সিভ’ করে দেন তিনি।

    চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবনের কাজেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। নির্ধারিত L M ব্র্যান্ডের পরিবর্তে নামসর্বস্ব চায়না লিফট বসান, যা নিয়ে অধ্যক্ষ বারবার অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাননি।

    গাইনী অপারেশন থিয়েটার, নিউনেটাল কেয়ার ইউনিটসহ বিভিন্ন জায়গায় স্পেসিফিকেশনের তোয়াক্কা না করে বসানো হয়েছে নিম্নমানের এসি। লোহাগাড়া মডেল মসজিদ ও কল্পলোক মসজিদেও নিম্নমানের ক্যাবল ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বসানোর অভিযোগ রয়েছে।

    সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মোহাম্মদ সোলাইমানের মাধ্যমে ‘শাহনেওয়াজ এন্টারপ্রাইজ’ ও ‘গ্রীন মার্কার’ নামের প্রতিষ্ঠানের হয়ে কোটি কোটি টাকার কাজ দেন তিনি। সেইসব কাজে নিম্নমানের ক্যাবল, ব্রেকার, এসি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। অভিযোগ আছে, এসব প্রতিষ্ঠানে ময়নুল হকের নিজেরও আর্থিক অংশীদারিত্ব রয়েছে।

    প্রিয় ঠিকাদারদের সর্বনিম্ন দরদাতা না হলে পুনরায় রি-টেন্ডার করানোর ঘটনাও রয়েছে। যেমন: দরপত্র আইডি ৮২৫৮৬৭, ৮১৭৭৯৬, ৭৭৯৩৯০, ৭৮৩৪৯৫—যেগুলোতে ‘চিটাগাং বিল্ডার্স কর্পোরেশন’ সর্বনিম্ন দরদাতা না হওয়ায় ফের টেন্ডার আহ্বান করেন ময়নুল। ই-জিপি সিস্টেম অনুযায়ী যোগ্য হলেও পূর্ববর্তী দরদাতাদের ‘নন-রেসপন্সিভ’ ঘোষণা করা হয়।

    অনেক স্বনামধন্য ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন, সব শর্ত পূরণ করার পরও ঘুষ না দিলে কাজ পাননি তারা। আর ঘুষের টাকা না দেওয়াকে কেন্দ্র করেই তাদের দরপত্র বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

    সরকার বদলের পর এসব অভিযোগের মুখে তিনি নিজেকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার বলেও প্রচার করছেন বলে জানা গেছে।

    অভিযোগের বিষয়ে ময়নুল হকের বক্তব্য নিতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন