সম্মান রক্ষার নামে নৃশংসতা, পাকিস্তানে অনার কিলিংয়ে ১১ জন গ্রেফতার


পাকিস্তানে পরিবারে অসম্মতি উপেক্ষা করে বিয়ে করায় এক নারী ও পুরুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ভয়াবহ এই ঘটনার ভিডিও ইতোমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা সাড়া ফেলেছে দেশজুড়ে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে ‘অনার কিলিং’ বা সম্মান হত্যাকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পরিবার ও আত্মীয়দের বিরুদ্ধেই উঠেছে হত্যার অভিযোগ।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, ভিডিওতে হত্যার পুরো দৃশ্য ধারণ করা হয় এবং পরিকল্পিতভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যাতে অন্যদের ‘বার্তা’ দেওয়া যায়।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘিরে দেশজুড়ে নিন্দা ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ‘অনার কিলিং’-এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
গত মাসে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম বেলুচিস্তান প্রদেশে স্থানীয় একটি উপজাতীয় পরিষদের আদেশে ওই দম্পতিকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রাদেশিক কর্মকর্তারা। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর প্রাদেশিক সরকার তদন্ত শুরু করে।
প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি সোমবার (২১ জুলাই) এক বিবৃতিতে বলেন, ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি জানিয়েছিলেন যে ভিডিওতে যেসব ব্যক্তি ও স্থান দেখা গেছে, সেগুলো শনাক্ত করা হয়েছে।
বুগতি বলেন, জড়িত সকলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, মরুভূমির একটি জায়গায় কয়েকটি পিকআপ ট্রাক ও এসইউভি গাড়ি রয়েছে, যেগুলোতে করে লোকজনকে সেখানে নিয়ে আসা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
নারীটিকে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরীফ হাতে দেওয়া হয়। এরপর তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, “আমার সঙ্গে সাত কদম হাঁটো, তারপর আমাকে গুলি করতে পারো।” পুরুষটি তার পেছন পেছন কয়েক কদম হাঁটে।
একজন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নারীটি কান্নাকাটি করেননি বা দয়া চায়নি। নারীটি বেলুচিস্তানের ব্রাহাভি ভাষায় বলেছেন, “তুমি কেবল আমাকে গুলি করতে পারো। এর বেশি কিছু না।” ভাষাটির অনুবাদ দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
তবে তিনি "এর বেশি কিছু না" বলে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন বলে, তা পরিষ্কার নয়।
পুরুষটি তার পেছনে হেঁটে এসে বন্দুক তাক করে, যখন নারীটি পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
চাদরে মোড়ানো নারীটি গুলি চালানো পর্যন্ত স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কাছ থেকে গুলির দুটি ফায়ারের পরও তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন, তৃতীয় গুলির পর তিনি মাটিতে পড়ে যান।
এরপর পরপর আরও গুলির শব্দ শোনা যায়। ভিডিওতে পরে দেখা যায়, রক্তাক্ত এক পুরুষের মরদেহ নারীটির দেহের কাছাকাছি পড়ে আছে। এরপর একদল পুরুষ উভয় মরদেহের ওপর গুলি চালায়।
রয়টার্স স্বাধীনভাবে ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
পাকিস্তান মানবাধিকার কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে অন্তত ৪০৫টি ‘অনার কিলিং’-এর ঘটনা ঘটেছে। এসব অপরাধ বন্ধে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে বলে সমালোচনা করেছে সংস্থাটি।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, অনার কিলিংয়ের অধিকাংশ ভুক্তভোগী নারী। হত্যাকারীরা সাধারণত পরিবারের সদস্য, যারা পারিবারিক সম্মান রক্ষার দাবি করে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
পাকিস্তান ও ভারতের বহু রক্ষণশীল পরিবার এখনও তাদের পছন্দের বিরুদ্ধে বিয়েকে মেনে নেয় না।
