বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

আশুরার রোজা কবে রাখা উত্তম? ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে যা জানা জরুরি

আশুরার রোজা কবে রাখা উত্তম? ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে যা জানা জরুরি
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে জিলহজ, দরজায় কড়া নাড়ছে আরবি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। রজব, জিলকদ ও জিলহজ ছাড়াও মহররম মাসকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। এই মাসগুলোয় যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ রয়েছে। এ কারণে আরব সংস্কৃতি অনুযায়ী, স্থানীয়রা এ মাসে যুদ্ধবিগ্রহ, অন্যায়-অপরাধ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি বিশ্রামে সময় অতিবাহিত করত।

মহররমের ১০ তারিখ আশুরার দিন। আরবি শব্দ ‘আশারা’ থেকে আশুরা শব্দটি এসেছে। আশারা অর্থ দশ, আর আশুরা অর্থ দশম। দিনটি ঐতিহাসিক নানা ঘটনাবলিরও সাক্ষ্য বহন করে।

আশুরার দিনে আদি পিতা আদম (আ.) কে সৃষ্টি ছাড়াও তাকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়। এই দিনেই হযরত নূহ (আ.) এর নৌযানের যাত্রা শুরু হয় ও মহাপ্লাবন শেষে ঈমানদারদের নিয়ে তিনি নৌকা থেকে নামেন। আবার আশুরার দিনেই কারবালার বিয়োগান্তরের মর্মান্তিক ঘটনার অবতারণা হয়।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছর পবিত্র মহররম মাসের চাঁদ দেখা ও আশুরার তারিখ নির্ধারণে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বৈঠকে বসবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। এদিন দেশের আকাশে চাঁদ দেখা গেলে শুক্রবার থেকে (২৭ জুন) মহররম মাস গণনা শুরু হবে। আর যদি চাঁদ দেখা না যায় তবে শুক্রবার জিলহজ মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হবে। সে ক্ষেত্রে শনিবার (২৮ জুন) থেকে মহররম মাস গণনা করা হবে। এই হিসেবে চলতি বছর দেশে ৬ বা ৭ জুলাই (রোববার বা সোমবার) আশুরার রোজা পালিত হবে।

রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে মুসলিমগণ আশুরার দিনে রোজা রাখতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমজানের সাওম (রোজা) ফরজ হওয়ার আগে মুসলিমগণ আশুরার রোজা পালন করতেন। সে দিনই কাবাঘর (গিলাফে) আবৃত করা হতো। তারপর আল্লাহ যখন রমজানের সাওম ফরজ করলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আশুরার সাওম যার ইচ্ছা সে পালন করবে, আর যার ইচ্ছা সে ছেড়ে দেবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৪৯৭)

অপর হাদিসে এসেছে, হুমায়দ ইবনু আবদুর রাহমান (রহ.) থেকে বর্ণিত, যে বছর মু’আবিয়া (রা.) হজ করেন সে বছর আশুরার দিনে (মসজিদে নববীর) মিম্বরে তিনি (হাদিস বর্ণনাকারী) তাকে বলতে শুনেছেন যে, হে মদিনাবাসীগণ! তোমাদের আলিমগণ কোথায়? আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, আজকে আশুরার দিন, আল্লাহ তা’আলা এর সাওম তোমাদের ওপর ফরজ করেননি বটে, তবে আমি (আজ) সাওম পালন করছি। যার ইচ্ছা সে সাওম পালন করুক, যার ইচ্ছা সে পালন না করুক। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৭৭)

অন্যদিকে খোদ রাসুল (সা.) ও আশুরার দিনে রোজা রাখায় প্রাধান্য দিতেন। ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশুরার দিনের সাওমের উপরে অন্য দিনের সাওমকে প্রাধান্য প্রদান করতে দেখিনি এবং এ মাস অর্থাৎ রমজান মাস (এর ওপর অন্য মাসের গুরুত্ব প্রদান করতেও দেখি নাই)। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৮০)

এছাড়াও আবূ কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, একবার এক ব্যক্তি রাসুল (সা.) এর কাছে সাওম নিয়ে প্রশ্নের একপর্যায়ে নবীজি বলেন, প্রতি মাসে তিন দিন সাওম পালন করা এবং রমজান মাসের সাওম এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান পর্যন্ত সারা বছর সাওম পালনের সমান। আর আরাফাত দিবসের সাওম সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছর ও পরবর্তী বছরের গুনাহর ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে। আর আশুরার সাওম সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছরের গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যাবে। (সহিহ মুসলিম, ২৬১৭)

তবে মনে রাখতে হবে আশুরার রোজা একটি নয়, দুটি। এরমধ্যে একটি আশুরার দিন অর্থাৎ, ১০ মহররম। আর অন্যটি এর একদিন আগে অথবা পরে রাখা যাবে (৯ বা ১১ মহররম)। এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ আলেমদের মত, ৯ মহররম অপর রোজাটি রাখা উত্তম।


দৈএনকে/জে .আ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন