শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

হীরা চোরাচালানেই শত শত কোটি টাকার মালিক দিলীপ আগারওয়ালা

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined variable: repo

Filename: fontend/detail.php

Line Number: 50

Backtrace:

File: /home/dailynatunkagoj/public_html/application/views/fontend/detail.php
Line: 50
Function: _error_handler

File: /home/dailynatunkagoj/public_html/application/controllers/Front_side_news.php
Line: 136
Function: view

File: /home/dailynatunkagoj/public_html/index.php
Line: 316
Function: require_once

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Trying to get property 'name' of non-object

Filename: fontend/detail.php

Line Number: 50

Backtrace:

File: /home/dailynatunkagoj/public_html/application/views/fontend/detail.php
Line: 50
Function: _error_handler

File: /home/dailynatunkagoj/public_html/application/controllers/Front_side_news.php
Line: 136
Function: view

File: /home/dailynatunkagoj/public_html/index.php
Line: 316
Function: require_once

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined variable: repo

Filename: fontend/detail.php

Line Number: 50

Backtrace:

File: /home/dailynatunkagoj/public_html/application/views/fontend/detail.php
Line: 50
Function: _error_handler

File: /home/dailynatunkagoj/public_html/application/controllers/Front_side_news.php
Line: 136
Function: view

File: /home/dailynatunkagoj/public_html/index.php
Line: 316
Function: require_once

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Trying to get property 'designation' of non-object

Filename: fontend/detail.php

Line Number: 50

Backtrace:

File: /home/dailynatunkagoj/public_html/application/views/fontend/detail.php
Line: 50
Function: _error_handler

File: /home/dailynatunkagoj/public_html/application/controllers/Front_side_news.php
Line: 136
Function: view

File: /home/dailynatunkagoj/public_html/index.php
Line: 316
Function: require_once

প্রকাশ : ২ নভেম্বর, ২০২৩ ১১:০৬ অপরাহ্ন
হীরা চোরাচালানেই শত শত কোটি টাকার মালিক দিলীপ আগারওয়ালা
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

জুয়েলারী প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিলীপ কুমার আগারওয়ালা। দুই দশকের ব্যবধানে তিনি এখন হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। নব্বইয়ের দশকে ঢাকার ভাড়া বাসায় থাকা দিলীপ কুমার থাকেন এখন শত কোটি টাকার বাড়িতে। মধ্যবিত্ত পরিবারের দিলীপ এখন সোনা ও হীরা চোরাচালান, রাজস্ব ফাঁকি, বিদেশে অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের শতাধিক শোরুম রয়েছে। বৈধ আয়ের চেয়ে অবৈধ সম্পদের পরিমানই বেশি। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে সোনা এবং ডায়মন্ড চোরাচালান ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক দিলীপ কুমার আগারওয়ালার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অনিয়মের ভয়ংকর এসব তথ্য উপাত্ত উঠে এসেছে।

 

২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর দুদকের উপ পরিচালক মো. মোশারফ হোসেইন মৃধার নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম গঠন করে অনুসন্ধান শুরু করা হয়। অনুসন্ধান টিমের অপর দুই সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সিকদার, ও উপসহকারী পরিচালক মো.সাইদুজ্জামান। অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭ মোতাবেক অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। দুদক থেকে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ পাঠানোসহ জিজ্ঞাসাবাদেও জন্য দুইবার চিঠি দেয়া হয় দিলীপ কুমার আগারওয়ালাকে। ইতিমধ্যে দিলীপ কুমারকে দুই দুইবার জিজ্ঞাসাবাদও করে দুদকের অনুসন্ধান টিম। জিজ্ঞাসাবাদের সময় অবৈধ সম্পদের তথ্য প্রমান হাজির করা হলেও দিলীপ কুমার অনুসন্ধান টিমকে সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। শুধু তাই নয়- দুদক কার্যালয়ে জমা দেয়া দিলীপ কুমার আগারওয়ালের সম্পদের তথ্য বিবরণী আর দুদকের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত সম্পদের তথ্য উপাত্তের মধ্যে বেশ গড়মিল পাওয়া গেছে। দুদক সুত্রে জানা গেছে, দিলীপ কুমারের তথ্য উপাত্ত চেয়ে দুদকের অনুসন্ধান টিম চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা বিভাগ, বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টের তথ্য উপাত্ত, এনবিআর, ভুমি অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে চিঠি দিয়েছেন। ওইসব তথ্য উপাত্ত পাওয়ার পর যাচাই বাছাই শেষে মামলা করা হবে হলে জানা গেছে।

 

অনুসন্ধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন দুদক কর্মকর্তা বলেন,‘ ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক দিলীপ কুমারের বিরুদ্ধে সোনা ও ডায়মন্ড চোরাচালানসহ বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগটি অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেশ চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রমানাদি পাওয়া গেছে। সরকারের রাজস্ব ফাঁিক দিয়ে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন এমন তথ্য উপাত্ত দুদকের হাতে চলে এসেছে। এইসব তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। তবে নানারকম প্রভাব বলয় সৃষ্টির মাধ্যমে দুদকের যাচাই বাছাইয়ের কর্মকান্ড দীর্ঘসূত্রিতার ফাঁদে ফেলারও অভিযোগ উঠেছে। ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক মালিক দিলীপ কুমার আগারওয়ালের বিরুদ্ধে রয়েছে এমন অভিযোগ। অভিযোগ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে ২০১৭ সালের গত ২৮ অক্টোবর নথিপত্রসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল দুদক। কিন্তু নথিপত্রসহ দুদকে হাজির হতে দুই মাসের সময় প্রার্থনা করে ওই দিনই চিঠির জবাব দেন দিলীপ কুমার আগারওয়াল। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিকসহ তিনজনকে দুদকে তলব করা হলেও তারা হাজির না হয়ে দুই মাসের সময় চেয়ে আবেদন করেছিল। পরবর্তী সময়ে পুনরায় চিঠি দিয়ে দুইবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি তিনি। দিলীপ কুমার আগারওয়ালের বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দেশে ডায়মন্ড এবং সোনা এনে বিক্রিসহ অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে।

 

দুদক সূত্রে জানা যায়, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক দিলীপ কুমার আগারওয়াল বিদেশ থেকে অবৈধভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ ও হীরা আমদানী করে হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। ঢাকা বিমানবন্দরের কাস্টম হাউজের কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং শুল্ক বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করে তার অবৈধ কর্মকান্ড নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগে আরও বলা হয়, মেসেনটেট নামক এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ বিক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তথাকথিত হীরা বানিয়ে তা অলঙ্কার হিসেবে বিক্রির প্রতারণা চালানোর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। কিছু দিন ব্যবহারের পর এগুলো কালো হয়ে যায়। নিরীহ মানুষকে প্রতারিত করে দিলীপ কুমার আগারওয়াল গুলশান, ধানমন্ডি, উত্তরা, মিরপুরসহ প্রায় ১০০ টির কাছাকাছি শোরুম অল্প কয়েক দিনের মধ্যে স্থাপন করেন। তিনি কুষ্টিয়ার মধ্যবিত্ত পরিবারের জš§ গ্রহণ করেন। বর্তমানে তার অবৈধ সম্পদের পরিমান প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।

 

চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, জাত ব্যবসায়ি হিসেবে পরিচিত আগরওয়ালা সম্প্রদায়ের প্রায় সকলেরই কলকাতায় ‘গদিঘর’ নামে ব্যবসায়িক ঠিকানা রয়েছে। বংশানুক্রমেই তারা সীমান্ত ডিঙ্গিয়ে এপার ওপার যাতায়াত আর নানা পণ্য সরবরাহ ও বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত। সীমান্ত এলাকার বিজিবি সোর্সদের ভাষায়, মাড়োয়ারীদের অনেকেই ছিচকে স্মাগলিং কর্মকান্ডে জড়িত থাকেন। প্রায়ই মালামালসহ বর্ডার এলাকায় ধরাও পড়ে তারা, তবে বিশেষ সহানুভূতিতে ছাড়া পেয়ে যান তারা।

 

কোটি টাকায় ‘দায়মুক্তি’

ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের স্বত্বাধিকারী দিলীপ কুমার আগারওয়ালকে শত শত কোটি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দীর্ঘ প্রায় তিন বছর তদন্ত শেষে গত ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর আগারওয়ালকে ‘দায়মুক্তি’ দেয়া হয়। দায়মুক্তির ওই প্রজ্ঞাপনে সই করেছেন দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খান। অভিযোগ উঠেছে, নানান তদ্বীর ও কোটি টাকার বিনিময়ে এ ‘দায়মুক্তি’ নেন দিলীপ কুমার আগারওয়াল।

 

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর দিলীপ কুমার আগারওয়ালের বিরুদ্ধে সংস্থাটির প্রধান কাযালয়ে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। এতে অভিযোগ ছিল, স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে দিলিপ আগারওয়াল রাজস্ব ফাঁকিসহ শত শত কোটি অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। অভিযোগ পেয়ে অফিস আদেশে তিন কর্মকর্তাকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় দুদক। অনুসন্ধানের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন দুদক উপপরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন মৃধা, সহকারী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান শিকদার ও উপসহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান। অনুসন্ধানকাজ তদারক করেন দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। জানতে চাইলে দিলীপ কুমার আগারওয়ালের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন মৃধা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

দুদকে করা ওই অভিযোগে বলা হয়, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের স্বত্বাধিকারী দিলীপ আগারওয়াল বিদেশ থেকে অবৈধভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ ও হীরা আমদানি করে হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। দুদকের এক সহকারী পরিচালক জানান, দুদক টিম অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণাদি হাতে নিয়ে দিলীপ আগারওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে একাধিকবার তলবও করে। অনুসন্ধানকালে তার দুর্নীতির সব দিক খতিয়ে দেখেন তদন্ত কর্মকর্তারা। পরে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

 

এ ব্যাপারে সিনিয়র আইনজীবী এবং মানবাধিকার সংগঠক শাহদীন মালিক বলেন, ‘দুদক দুর্নীতি দমনের চেয়ে দায়মুক্তি দেয়ার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাদের সব ধরনের সক্ষমতা থাকলেও তারা তা ইউটিলাইজ করছে না।’ নাম প্রকাশ না করে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি কয়েকজন ব্যবসায়ীর ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ পাচারের তথ্য প্রকাশ করেছে দুদক। তবে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তথ্য দিলেও বিভিন্ন কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার ‘ধীরে চল নীতি’ অনুসরণ করছে।

 

এ যেনো আরেক শাহেদ..!

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি ও বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে ছবি তুলে তা বাঁধাই করে তার প্রতিটি শো-রুমে টানিয়ে অবৈধ ও ভূয়া ডায়মন্ড ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। নিজেকে খুব ক্ষমতাবান জাহির করে আসছে দিলীপ কুমার। প্রতিবেশী দেশে জন্মগ্রহন করা দিলীপ যেনো এদেশের বিষপোড়ায় পরিনত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার অনেকেই বলেন, এদেশে অবৈধ পথে ব্যবসা করে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে টাকা পাঁচার করেন দিলীপ কুমার। তাঁর ছবি সাটানো দেখে অনেকেই আলোচিত শাহেদ ওরফে শাহেদ করিমের সাথে তুলনা করে বলেন, দিলীপ আসলেই দিলীপ নয় এ যেনো আরেক শাহেদ!হাস্যরহস্য করে বললেও বাস্তবে ব্যাপারটা এমনই। দিলীপ নয় এ যেনো আরেক শাহেদ।

 

দুই দশকেই আকাশ-পাতাল ব্যবধান
চুয়াডাঙ্গায় স্থানীয়ভাবে মাড়োয়ারী সম্প্রদায়ের সন্তান হিসেবেই পরিচিত দিলীপ কুমার আগরওয়ালা মাত্র দুই দশকেই আমূল বদলে নিয়েছেন নিজেকে। একদা জীবনযুদ্ধে নিজ বাড়িঘর ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হওয়া দিলীপ কুমার ধূর্ততা, প্রতারণা, অপরাধমূলক কলা কৌশলকে পুঁজি করে আজ সম্পদ প্রাচুর্যের পাহাড় জমিয়েছেন। তার পৈতৃক নিবাস চুয়াডাঙ্গায় সরেজমিন অনুসন্ধানকালেও নানা অবিশ্বাস্য কাহিনী বেরিয়ে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও দিলীপ কুমার আগারওয়ালার রাতারাতি বিত্তশালী বনে যাওয়ার ঘটনাকে রীতিমত আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়া বলেই মনে করছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলায় দিলীপ কুমার আগারওয়ালার পরিচিত মহলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্র জীবন শেষে বন্ধুদের সাথে যৌথ ঠিকাদারী ব্যবসা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। সেসময় তার পিতা অমিয় আগারওয়ালার ছিল সিনেমা হলের (রূপছায়া বর্তমানে পান্না সিনেমা হল) ব্যবসা। তাতে আগারওয়ালা পরিবারে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা খুব একটা ছিল না। সিনেমা হলের ব্যবসা দেখাশুনার পাশাপাশি সিনেমা হল সংলগ্ন জায়গা জমিতে দোকান-ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েই চলতো সংসারের খরচ। চুয়াডাঙ্গায় পার্টটাইম ঠিকাদারি আর সিনেমা হলের ব্যবসায় সফলতা আনতে না পেরে দিলীপ পাড়ি জমান ঢাকায়।

 

শুরুতে ঢাকার বিজয়নগরে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে নিজের অফিস করতেন এবং পাশের মহল্লায় দুই রুমের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি। তবে ওই সময় ঢাকায় দিলীপ কুমার কিসের ব্যবসা করতেন তা তার ঘনিষ্ঠজনরাও কেউ কিছু বলতে পারেননি। কিন্তু দুই দশকের ব্যবধানে দিলীপ আগারওয়াল এখন কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক, চুয়াডাঙ্গায় আসেন হেলিকপ্টারে চড়ে। এখন নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন তিনি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেই সাংবাদিকদের কাছে প্রার্থী হবেন বলেও ঘোষণা দেন। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হবেন তিনি। কেনদ্রীয় আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পোস্টার এবং বিগত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পোস্টারের সাথে নিজের ছবি ছেপে চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে প্রচার করেন। এভাবে আওয়ামীলীগের নেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরারও চেষ্টা করেন। কিন্তু এতকিছুর পরও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাননি দিলীপ কুমার আগারওয়ালা। চুয়াডাঙ্গার বড় বাজার এলাকার একজন প্রবীণ ব্যবসায়ী বলেন, ‘সিনেমা হলের ব্যবসার টাকাতেই যে দিলীপ কুমারদের জীবন জীবিকা নির্বাহ হতো- সেই দিলীপ কুমার ঢাকায় গিয়েই অফুরন্ত ধন সম্পদের মালিক হলেন কিভাবে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা শহরের সিরাজউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘গত নির্বাচনের আগে ঘনঘন হেলিকপ্টারে এলাকায় আসতো, নৌকার টিকেট নিয়ে নির্বাচন করতে খুব প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু নৌকার টিকেট বাগাতে ব্যর্থ হওয়ার পর খুব একটা চুয়াডাঙ্গামুখী হন না তিনি।

 

কিছুদিন বিরতি দিয়ে এলাকায় নিজের পজেটিভ ইমেজ গড়ে তোলার নানা উদ্যোগ হাতে নেন দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। গড়ে তোলেন ‘তারাদেবী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন। এ সংগঠন সামাজিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি অস্বচ্ছল গর্ভবতী নারীদের অ্যাম্বুলেন্স সহযোগিতা দিয়ে থাকে। এ সংগঠন দিয়ে এলাকায় ‘পজেটিভ ইমেজ’ গড়তে চেষ্টা করেন দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। তাছাড়া ঢাকাতেও বাগিয়ে নিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের পদ-পদবী। তিনি এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতিরও সাধারণ সম্পাদক। টাকার জোরে তিনি বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় শিল্প বাণিজ্য উপ কমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়াল আসন্ন উপ কমিটিরও দায়িত্বশীল পদ পেতে উঠেপড়ে লেগেছেন। 

 

গোল্ড স্মাগলার হিসেবেই পরিচিত দিলীপ

দিলীপ কুমার আগরওয়ালার পৈতৃক নিবাস চুয়াডাঙ্গা সদরের বড়বাজার এলাকায়। সেখানকার সাধারণ মানুষজনের কাছে দিলীপ কুমার বড় ধরনের মাফিয়া ডন হিসেবেই পরিচিত। অনেকেই মনে করেন, জীবিকার সন্ধানে দুই দশক আগে চুয়াডাঙ্গা ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমানো দিলীপ কুমার বিভিন্ন চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে নিজের ভাগ্যকে আমূল বদলে নিয়েছেন। তার আস্তানায় এখন দেশি বিদেশি হরেক রকম ধনকুবের, স্মাগলার, রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভিড় লেগেই থাকে। অঢেল সহায় সম্পদ তার। ভারতের কোলকাতা, বোম্বে এবং জয়পুরে তার আলীশান বাড়ি নির্মিত হয়েছে। অষ্ট্রেলিয়াতেও আছে প্রাসাদসম স্থাপনা। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও অষ্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব রয়েছে তার। আছে একাধিক পাসপোর্ট। তার দাপটের কোনো কমতি নেই।

 

চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক আব্দুল কাদের বলেন, কর্মজীবনের শুরুতে তারই বন্ধু টিটোর সঙ্গে পার্টনারশিপে ঠিকাদারীর কাজ করতো দিলীপ। কোনরকম জীবন যাপন করা দিলীপ ঢাকায় গিয়েই রাতারাতি ধনাঢ্য হয়ে উঠে। তার মূল ব্যবসা হচ্ছে সোনা চোরাচালান।  সাবেক পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন বলেন, দিলীপ খুবই পল্টিবাজ মানুষ। আজ যার সঙ্গে গলাগলি ধরে পথ চলবে কালই তাকে ঘার ধাক্কা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলবে। একসময় তার ঠিকাদারীর পার্টনার পার্টনার ওয়াসকুরুনি টিটোর সাথেও তার বিরোধ। ডায়মন্ড বলে নকল ডায়মন্ড বিক্রি করে বলে শুনেছি। চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার নতিপোতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুল হক বলেন, দিলীপ আমার সাথে পড়তো। তখন সে জাসদ ছাত্রলীগ করতো। জাসদের স্থানীয় নেতাদের সাথে ওঠাবসা ছিল। নারীঘটিত কারণে লতিফ টিএসআই তাকে গ্রেপ্তার করে। সে সাতদিন জেলও খেটেছে। সদর হাসপাতালের মাইক্রোবাসের ড্রাইভার স্বপন বলেন, আমি দিলীপের কাছে কাজ করতাম। সে আমাকে দিয়ে গোল্ড পাচার করিয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় থাকতেই সে সোনা পাচারের সাথে জড়িত ছিল। পরে ঢাকায় চলে যায়। আমি ঢাকাতেও তার কাছে চাকরি করেছি। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বলেন, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা কখনই আওয়ামী লীগ করেনি। তবে সে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন নেওয়ার চেষ্টা করেছে। তার অঢেল টাকা উপার্জনের পেছনে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না।

 

এসব বিষয়ে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের স্বত্ত্বাধিকারী দিলীপ আগারওয়ালের কাছে জানতে চেয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনার পর কল কেটে দেন। পরবর্তীতে কল দেয়ার কথা থাকলেও মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন