বঙ্গবন্ধুর ছবি অবমাননার অভিযোগ, ২ কোটিতে দায়মুক্তি দিলেন অতি: সচিব সাইফুল


নিয়োগ, বদলি-বাণিজ্য, নিজ ভাইকে দিয়ে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি অবমাননাসহ বেশ কিছু গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। দুদক তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। যার দুর্নীতি দমন কমিশন স্মারক নং-২৪২১৩, তারিখ- ০৪/৭/২৩। দুদক থেকে এমন লিখিত চিঠি পাওয়ার পর অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
এ নিয়ে ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদক অনুবিভাগ) মো. সাইফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) ফয়সাল আহমেদ এবং সিনিয়র সহকারী সচিব (নিরাপত্তা-৩) আফরোজা আক্তার রিবা। যার কাগজ আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।
এ অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে ভাগ্য খুলে যায় তদন্তকারী কমিটির প্রধান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদক অনুবিভাগ) মো. সাইফুল ইসলামের। অভিযোগ তদন্ত যখন শুরু হয় তখন ফায়ার সার্ভিসে চলছে নতুন ফায়ার ফাইটার সহ কয়েকটি পদে নিয়োগ কার্যক্রম। এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা অভিযোগ মাত্র ৩ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি অর্থাৎ ডিজিকে দায়মুক্তি দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদক অনুবিভাগ) মো. সাইফুল ইসলাম সহ তার নেতৃত্বধীন তদন্ত কমিটি।
অভিযোগ উঠেছে, তদন্ত কমিটির প্রধান সাইফুল ইসলাম গত নিয়োগে প্রায় ২০ জন চাকরিপ্রার্থীকে ফায়ার ফাইটার পদে চাকরি দিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ডিজি ও তার ভাইদেরকে অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেন। এমনকি অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা এখানো নিচ্ছেন অতিরিক্ত সচিব সাইফুল ইসলাম। এসব নিয়ে তিনি মন্ত্রী ও সচিবকে ম্যানেজ করে নিয়েছেন। উৎকোচের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি অবমাননার মতো গুরুত্বর অভিযোগ দামাচাপা দিয়েছেন। গত মাসে এ অতিরিক্ত সচিব অবসরে গেছেন। তবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে এখনো তদ্বীর করছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
মন্ত্রনালয়ের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন বঙ্গবন্ধুর ছবি অবমাননার অভিযোগ সঠিক নয়। অথচ সারা দেশে প্রতিটি ষ্টেশনে ডিজির ছবি বঙ্গবন্ধুর ছবির সাথে লাগিয়ে রাখা হয়। যা পরবর্তীতে তোপের মুখে সরিয়ে নেন ডিজি। এছাড়াও বিভিন্ন ষ্টেশনের সামনে মাঠের মধ্যে ডিজির একাধিক সরকারী টাকায় প্রিন্ট ও বাঁধিয়ে নায়ক বা ভিলেনের মতো করে বেঁধে রাখা হয়। যার সাইজ ছিল প্রায় লম্বায় ২০ ফিট্ বাই পাশে ৫ ফিট্। সে সময় এই ছবিগুলো যে কারো নজর কেঁড়েছে। অধিদপ্তরের অনেকের জীবনে প্রথম এমন ছবি টাঙ্গানো দেখে চোঁখ কপালে উঠেছে। আবার অনেক কর্মচারী হাস্যকরভাবে তামিল নায়ক বলতেন। তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন আরো উল্লেখ করেছেন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে নাকি টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলে নাই। যদি এমন অভিযোগের সত্যতা না পায় তাহলে বুঝতে হবে সে কত টাকা ঘুষ খেয়েছে। এমন ভাওতাবাজি তদন্ত না করলেও হতো। সত্যি বলতে মহা দুর্নীতিবাজ হল এই তদন্ত কমিটি এমন আক্ষেপ নিয়ে কথা বলেছেন অধিদপ্তরের ডিজি ও তার ভাই নুর উদ্দিন আনিছের রোষানলে পড়া এক কর্মচারী। তিনি বলেন, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষনের কাজ করবে গণপূর্ত। যেহেতু ফায়ার সার্ভিসের নিজস্ব ইঞ্জিনিয়ার নাই। সেখানে এই কাজগুলো গণপূর্তকে জিঙ্গেস করার প্রয়োজন মনে করে না।
এছাড়াও অধিদপ্তরের যে কোন কাজ বছরে কোটেশন এর মাধ্যমে ৩০ লক্ষ টাকার করা যাবে এটা নিয়ম আছে। যদি এর বেশি হয় তা হলে সেটা টেন্ডার আহ্বান করে করতে হবে। এসব নিয়ম থাকলেও ডিজি তার ভাইদের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দিয়ে কাজ করতে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে বহুবার। অধিদপ্তরের গেইট করতে কোন নিয়ম মানা হয়নি। এরপাশেই ক্যান্টিন করেছেন। সেই ক্যান্টিন যাকে দেয়া হয়েছে তা টেন্ডার ছাড়াই। এই ক্যান্টিন মালিক থেকে ডিজি ৫০ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। বিনিময়ে ক্যান্টিন তাকে দিয়েছে। মেইনগেইট করতে ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করেছে যা নিয়মের বাহিরে গিয়ে। এ কাজের জন্য কোন টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। এগুলো ছাড়াও ডিজির রুমের সামনে করিডোর করতে খরচ করেছে ২০ লক্ষ টাকা। কনফার্ন্সে রুম মেরামত করতে খরচ করেছে ৩০ লক্ষ টাকা। এই কাজগুলো ২০২৩ সালে করা হয়। এসব একটা কাজেও কোন ধরনের টেন্ডার আহ্বান করেন নাই ডিজি বা অধিদপ্তর। পুরো কাজ সম্পন্ন করেছেন ডিজির ভাইদের পছন্দের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এমন সব গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ দায়সারা তদন্ত করে দামাচাপা দিয়েছেন তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযোগটি বেনামী তাই প্রমাণ করতে সঙ্গম হয়নি। অভিযোগ বেনামী জেনেই তারা কেনো তদন্ত করলো এমন প্রশ্ন রয়েছে। আবার বেনামী অভিযোগ হলে যে অভিযোগ প্রমাণ হয় না তা কিন্তু নয়। মূলত টাকার কাছে মিমাংসীত হয়ে বেনামী অভিযোগ প্রমানিত করতে ব্যর্থ তদন্ত কমিটি।
এদিকে ন্যায়বিচার না পেয়ে অধিদপ্তরের সৎ ও যোগ্য কর্মচারী-কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী সহ বিভিন্ন দপ্তরের একের পর এক অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছে। গত ০৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী কাছেও একটি অভিযোগ দেন অত্র অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল্লাহ। যদিও জানা গেছে, এ অভিযোগটির সঠিক ব্যক্তি তিনি নন। তবে তার অভিযোগের ১০০% সত্যতা রয়েছে। অভিযোগটি সঠিক ও ন্যায়নীতিবান অফিসার বা গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তদন্ত করলে ডিজির অপকর্মের আরো ভয়াবহ তথ্য বের হয়ে আসবে।
এই অভিযোগে বলা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন ও তার ছোট ভাইদের মাধ্যমে হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠা করে নিয়োগ বাণিজ্য, বদলী বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, মানি লন্ডারিং ও অন্যান্য খাতে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। যা সরকারী ও সাধারণ মানুষের টাকা।
আরো বিস্তারিত পর্ববর্তী প্রতিবেদনে আসছে।
