বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj
ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার

শাহীন আলমের বিলাশবহুল ৮তলা বাড়ী!

শাহীন আলমের বিলাশবহুল ৮তলা বাড়ী!
কালিয়াকৈর হাইওয়ে রোডের পাশেই শাহীন আলমের এই বাড়ীটি।
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

পেশায় ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার। বিধিমালা অনুযায়ী পদটি ১২তম গ্রেডের এবং জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী মাসিক  ১১,৩০০-২৭,৩০০ টাকা সর্ব সাকুল্যে। প্রশ্ন হচ্ছে একটি ৮ তলা ভবন নির্মাণে কত বছর সময় লাগবে এই কর্মকর্তার।

অভিযোগ আছে, ফায়ার সার্ভিসের পোস্তগোলা শাখায় কর্মরত সিনিয়র স্টেশন অফিসার শাহীন আলম চাকরিতে যোগদানের শুরু থেকেই নানা অনিয়ম, দুর্নীতি করে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন ঢাকা ও এর আশপাশে।

ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের শ্রীফলতলীতে (কালিয়াকৈর) অবস্থিত ৮ তলা বাড়ির মালিক এই শাহীন আলম। নিজ এবং স্ত্রী নামে কেনা জমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। সেই সাথে আধুনিক এই ভবনটি তৈরিতে খরচ করেছেন সাড়ে ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা।

জমি বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম এবং সেলিমের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের, তাদের দাবি শিমুলতলী মৌজার ৮৫৯ দাগে সাড়ে ৪ ডিসিম পৈত্রিক সম্পত্তি ৪/৫ বছর পূর্বে যৌথ ভাবে ক্রয় করেন শাহীন আলম। ঐ সময় জমিটি ৮ লক্ষ ১০ হাজার টাকা শতাংশ বিক্রি হলেও বর্তমানে ১২ লক্ষ টাকা শতাংশে একই দাগে অন্য জমি বিক্রি হচ্ছে।

শাহীন আলমের প্রতিবেশী আসাদ জানান, আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পূর্ণ বাড়িটি তৈরিতে ২ বছর সময় লেগেছে।

বিদেশি ফিটিংস এবং উন্নতমানের টাইলস দিয়ে তৈরি ৮ তলা বাড়ির বেজমেন্ট পার্কিং এর জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

ভবনটির প্রথম তলায় ‘মধুমতী এগ্রো ফিড এন্ড হ্যাচারীজ বাংলাদেশ লিমিটেড এর কর্পোরেট শাখা এবং দ্বিতীয় তলায় ‘আরডিআরএস বাংলাদেশ ‘ এর এনজিও অফিস খোলা হয়েছে।

বাড়টির তত্বাবধানে থাকা ফিরোজ জানান, দুই বছর আছি শাহীন সাহেবের কাছে। মাসে বাড়ি দেখাশোনা বাবদ ২০ হাজার টাকা বেতন নিচ্ছেন।  সেই সাথে স্ত্রী নিয়ে বসবাসের জন্য পার্কিং ফ্লোরে একটি দুই রুমের ফ্লাট করে দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ফ্ল্যাট গুলোর প্রতিটি ভাড়া হয়ে গেছে। মাসে ২ লক্ষ টাকা বাড়া বাবদ আদায় করা হয়। দুইটি দোকান আপাতত খালি আছে।

সূত্র বলছে, শাহীন আলমের উত্থান মূলত গাজীপুরের জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনে ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টরের দায়িত্বে থাকাকালীন।যেহেতু গাজীপুর একটি শিল্প বানিজ্যিক এলাকা সেহেতু শাহীন আলম তার দায়িত্বের অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।

গুঠুরি গ্রামের বেশ কয়েকজন প্রতিবেশী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে জানান, ২০১৬ সালের শুরুর দিকে শাহীন আলম স্ত্রী এবং দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। এখন শ্রীফলতলীতে প্রধান সড়কের পাশেই শাহীন আলমের ৮ তলা বাড়ি।

সূত্র বলছে, ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজার অগ্নিকান্ডে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহিন আলম বাদী হয়ে বংশাল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় জ্ঞাতনামা ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে।

দোকান মালিকদের অভিযোগ, ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতি ঢাকতেই আমাদের বিরুদ্ধে ভাংচুর অগ্নিসংযোগের মামলা করে স্টেশন অফিসার শাহীন আলম।

শাহীন আলমের সম্পত্তি এবং মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে মন্তব্য জানতে মুঠফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বঙ্গবাজার অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত জমা হয়নি। এছাড়া মামলা সংক্রান্ত কোন তথ্য বর্তমানে নাই।

ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের শ্রীফলতলীতে অবস্থিত ৮ তলা বাড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে শাহীন আলম দাবি করেন,  ভবন বা জমির মালিকানায় তার কোন অস্তিত্ব নাই। তবে ভবনটি ব্যাংক এশিয়ার কাছে দায়বদ্ধ বলে জানান। সেই সাথে তিনি আরও জানান, ৩২ জনের মালিকানায় রয়েছে ৮ তলা বাড়িটি। এমনকি তিনি বলেন, ভবনটির মালিকানার কোন তথ্যপ্রমাণ দিতে পারলে আপনার নামে বাড়ি লিখে দিবো।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আরও পড়ুন