ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে নোঠিশ দিয়েই টাকা হাতিয়েছে ফায়ার সার্ভিস!


ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এই সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানটি আজ দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ”সেবাধর্মী” প্রতিষ্ঠান এই মূল্যবান কথাকে পুঁজি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়েছে অধিদপ্তরের ডিজি পরিবার। সুনাম ও মানুষের একমাত্র এই প্রতিষ্ঠানটি আজ পারিবারিক দুর্নীতির প্রতিষ্ঠানে হিসেবে রূপ নিয়েছে। বারবার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি থেকে বের হতে চাইলেও এ অধিদপ্তরের ডিজি থেকে শুরু করে ফায়ার ফাইটার পর্যন্ত বেশিরভাগ কর্মকর্তা বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি সাথে ওৎপ্রেতভাবে জড়িত। এই অধিদপ্তরের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্নীতি সেফটি প্ল্যান অনুমোদনে অনিয়ম। এর পাশাপাশি বদলী, টেন্ডার, নিয়োগ ও পদোন্নতি বাণিজ্য। অধিদপ্তরের যোগ্য ফায়ার কর্মীদেরকে গত দুই বছরের দুরবর্তী স্থানে বদলী করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অযোগ্য কর্মকর্তাদেরকে অধিদপ্তর সহ ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশে পোস্টিং দেন মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন। তার এমন বদলী আতঙ্কে অধিদপ্তরের অনেকেই ক্ষোভে ফুঁসে উঠলেও মুখ খুলে কিছু বলতে সাহস পাননি। তাই নিরবে ডিজি ও তার ভাই সিন্ডিকেটের বদলী করা স্থানে বাধ্য হয়ে যোগদান করেন।
জানা গেছে, মহাপরিচালক তার ভাই আনিস এর মাধ্যমে ঢাকা নিয়ে ঢাকা যোগ্য অফিসার ও ফায়ার ফাইটার শূণ্য করেন। এছাড়াও নিয়োগের সময় ১৫-২০ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে অযোগ্য লোকজন নিয়োগ দিয়েছেন। এমনকি যেসব হাইরাইস ভবনে অগ্নি নির্বাপক নাই তাদের কাছ থেকে মাসের পর মাস মোটা অংকের টাকা নিতেন। এ জন্য নিজস্ব ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টরকে এসব গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দায়িত্ব দেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন।
সম্প্রতি ঢাকা কয়েকটি ভয়াবহ আগুনকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ডিজি মাইন উদ্দিন যোগদানের পর ভয়াবহ আগুনের প্রথম ঘটনা তার অধিদপ্তরের ঠিক উল্টোপাশে কয়েকশো গরীবের মার্কেট বঙ্গবাজার। আগুনের ঘটনার সূত্রপাত যেখানে ঠিক তার পাশেই ৪৮ ঘন্টা পালা বদল দুইজন করে ফায়ার ফাইটার সেন্টি ডিউটি পালন করে। এই ফায়ার ফাইটার থাকার পরও বঙ্গবাজার দাউদাউ আগুনে জ্বলেপুড়ে শেষ। হাজার দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা পথে। ঘটনার পরেই ফায়ার সার্ভিসের ডিজি সংবাদ মাধ্যমকে ব্রিফ করে বলেছেন এবং কাগজ দেখিয়ে বলেছেন বঙ্গবাজার অগ্নি ঝুঁকি থাকায় ব্যবহার না করতে কয়েকবার ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকদের নোঠিশ দিয়েছেন। এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে নোঠিশ দিয়েই তিনি দায়সারা হয়েছেন। এরপরের প্রয়োজনীয় কোন ব্যবস্থা নিতে অফিসিয়ালি অগ্রসর হননি।
বঙ্গবাজারের রেষ না কাটতেই নিউমার্কেট পুড়ে ছাঁই। সেই এই আগুন নিয়ন্ত্রনে এনেই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন সাংবাদিকদের সামনে একই বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এরপর বিভিন্নস্থানে আগুনের ঘটনা তো আছেই। সর্বশেষ বেইলি রোডের ভয়াবহ আগুনকাণ্ড বিশ্বব্সী নাড়া খেয়েছে। এই ভয়াবহ ঘটনায় বিভিন্ন দেশের মানুষ বলছে, আগুনের দেশ। আবার দেশের অনেকেই বলছেন আগুনের ঢাকা। মানবাধিকার কমিশন বেইলী রোডের আগুনকাণ্ডের পর বলেছেন, কর্তৃপক্ষ এর দায় এড়াতে পারে না। ফায়ার সার্ভিসের মনিটরিং ভুল আছে। তারা সেফটি প্ল্যান ছাড়া ভবনের বিরুদ্ধে কেনো ব্যবস্থা নেয়নি?। এমন প্রশ্ন ঢাকা অনেক সচেতন মানুষের।
বেইলি রোডের একটি বাড়ীর মালিক জানান, ঝুঁকিপূর্ন বাড়ীগুলোকে নোঠিশ দিয়ে মাসে মাসে মোটা অংকের টাকা নিচ্ছে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা। নিয়ম মানতে গেলে অনেক ব্যাপার থাকার কারণে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই বাড়ীতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। আবার সেফটি প্ল্যান নিতে হলে এককালীন অনেক টাকা দিতে হবে বিদায় কেউ মোটা অংকের টাকা দিয়ে সেফটি প্ল্যান নিতে চায় না। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা বলেন, সেফটি প্ল্যান নিলেই তো ফায়ার সার্ভিস অনিয়ম পাবে না তাই এসব প্রতিষ্ঠানকে সেফটি প্ল্যান না দিয়ে এক বা দুই টি নোঠিশ দিয়ে দায়সারা হয়ে টাকা নিয়ে আর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা থাকলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি দিয়ে জানাতো। কিন্তু এটা করা হচ্ছে না। মানুষ মরলে বা ক্ষতি হলে ফায়ার সার্ভিসের কিছু যায়, আসে না এমনটাই বললেন অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা। আরো বিস্তারিত পরবর্তী প্রতিবেদনে।
