শৃঙ্খলায় ফিরতে ধীরগতি পুলিশে


৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর ভেঙে পড়ে বাংলাদেশ পুলিশের চেইন অব কমান্ড। গণঅভ্যুত্থানের পর সবচেয়ে বেশি তোপের মুখে পড়ে এই বাহিনীটি। থানায় থানায় হামলা, অগ্নি সংযোগ, মারধর ও হত্যার ঘটনা ঘটে। অভ্যুত্থানে ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন। সুবিধাভোগী অনেক পুলিশ সদস্য আত্মগোপনে চলে যান, অনেকে গ্রেপ্তার হন।
জনগণের সবচেয়ে কাছাকাছি থাকা বাহিনীটি এভাবে মুখ থুবড়ে পড়ার পর সারা দেশে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশকে পেশাদার ও জনমুখী সংস্থায় পরিণত করতে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নেয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইতোমধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিশন নানামুখী সুপারিশসহ প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, সংস্কার কমিশনের এ প্রতিবেদন নিয়ে সব দলের সাথে আলাপ-আলোচনা করে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যেই ধীরে ধীরে স্বরূপে ফিরছে পুলিশ। জনগণের আস্থা ফেরানোর জন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। নানা কারণে বিতর্কিত এবং আওয়ামী লীগের হয়ে পুলিশকে রাজনৈতিক ব্যবহারে নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তাদের কাউকে কাউকে সরানো হয়েছে আর কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন ইউনিটে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের কাছে এই রদবদলে তেমন ভালো ফলাফল হবে বলে মনে হয় না।
এর পিছনে কেউ কেউ যুক্তিও দিচ্ছেন। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিভিন্ন জেলায় থাকা পুলিশ সদস্যদেরকে ডিএমপি, সিএমপি বা মেট্টোপলিটন পুলিশে রদবদল। আবার মেট্টোপলিটন কর্মরত থাকা পুলিশ সদস্যদেরকে বিভিন্ন জেলায় বদলি। ঘুরেফিরে তারাই স্বৈরাচারের পুলিশ সদস্য। তাদের সামনে নানা ঘটনা ঘটলেও থাকে নির্বিকার। কোনো কোনো মামলায় আসামি ধরতে চলে নানান বাহানা।
এদিকে রদবদলের স্রোতে ঢাকার পুলিশ একরকম ‘ধুয়ে-মুছে সাফ’ হয়েছে। ঢাকা থেকে বদলি হয়েছেন পুলিশের সিংহভাগ সদস্য। এতে নাগরিকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী চাপ সামলাতে পারছে না বাহিনীটি। হুট করে বেড়ে যাওয়া চুরি-ডাকাতি ও নারী-শিশু নির্যাতন ঠেকাতে বেগ পেতে হচ্ছে। মামলা তদন্তেও ধীরগতি চলছে।
‘বলা যায় ধুয়ে-মুছে সাফ করা হয়েছে ঢাকার পুলিশ। এখন বেশিরভাগই নতুন কর্মকর্তা। জেলা শহরের অপরাধের ধরন এবং ঢাকার অপরাধের ধরন আলাদা। অপরাধের ধরন বুঝতেই সময় চলে যাচ্ছে। খাপ খাইয়ে নিতে সময় লাগছে।’ ‘সোর্স-নির্ভর মাঠ পুলিশের জন্য অপরাধী শনাক্ত করা এবং আগাম তথ্য পেতে বেগ পেতে হচ্ছে।’
পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকাসহ সারা দেশে হুট করে বেড়েছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নারী-শিশু নির্যাতনসহ নানা অপরাধ। আধিপত্য বিস্তারের জেরে হামলা-ভাঙচুর, সংঘর্ষ এমনকি খুনের ঘটনাও বেড়েছে সমানতালে। তবে ৫ আগস্টের পর পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মনোবলের যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৬ মাসেও তা পূরণে সক্ষম না হওয়ার ফলে অপরাধপ্রবণতা বেড়েই চলেছে।
এডিটরস চয়েস
